<p>পাবনার আকাশ কলি দাসকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করল অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারোট অ্যান্ড প্যারাকিট স্টকব্রিডার্স (আ্যাপস) বাংলাদেশ। গত ১৩ মে পাবনার বেড়া উপজেলার অন্তর্গত কৈটোলা গ্রামে বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই পদক ও পুরস্কারের নগদ অর্থ তার হাতে তুলে দেন।</p> <p>দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজোটিক বার্ড ব্রিডারদের কোনো সংগঠন বনের পাখি, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্যে এ পাখি-বন্ধু পদক ঘোষণা করল। পুরস্কারের অর্থমূল্য নগদ ১০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে। এর আগে গত ১ মে সংগঠনটির প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ পদক ঘোষণা করা হয় কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় ৯০ ছুঁই ছুঁই আকাশ কলি দাসকে ঢাকায় না নিয়ে গিয়ে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ নিজেরাই ছুটে যান তার কাছে।</p> <p>চিরকুমার আকাশ কলি দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাখিকে ভালোবেসে অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েও তিনি জীবনযাপন করেন অতি সাধারণ মানুষের মতো। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দুই একর জমিতে ৬০ বছর ধরে কয়েক হাজার বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যা করে প্রতিষ্ঠিত করেন পাখির এক অভয়াশ্রম, যেখানে আনাগোনা ও বসবাস করে দেশি-বিদেশি হাজারো প্রজাতির পাখি।</p> <p>পুরস্কার পেয়ে আ্যাপস বাংলাদেশকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে ৮৮ বছর বয়সী পাখি-বন্ধু প্রকৃতিপ্রেমী আকাশ কলি দাস বলেন, ‘আপনাদের মতো মানুষকে আমি নিমন্ত্রণ করেও আনতে পারতাম না এখানে। কিন্তু আপনারা নিজে থেকে আমাকে খোঁজ করে এই অজপাড়া গাঁয়ে চলে এসেছেন। আর আমার মত একজন সাধারণ মানুষের কাছে আপনারা এসেছেন বলে আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সংগঠন ও তার সকল শুভ উদ্যোগের সফলতা কামনা করি।’</p> <p>এ সময়ে ঢাকা থেকে আগত সিনিয়র বার্ড ব্রিডার ও বিশিষ্ট ফটোসাংবাদিক বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে সকল পাখিপ্রেমীদের নিয়েই আমরা কাজ করতে আগ্রহী। পর্যায়ক্রমে আকাশ দাদার মত অন্যান্য পাখি ও প্রকৃতি প্রেমীদের খুঁজে বের করে আমাদের সংগঠন তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহিত করবে।’</p> <p>আ্যপসের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্রকার ও আইনজীবী খান জেহাদ বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মত শ্রী আকাশ কলি দাসকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করা হলো। সকলে মিলে তার প্রতিষ্ঠিত পাখির অভয়ারণ্য ঘুরে দেখলাম। নিজেরাও পাখি ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আরো বেশি উৎসাহিত বোধ করলাম।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আকাশ কলি দাসকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মেডেল, একটি ক্রেস্ট ও নগদ ১০ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হলো, যা তার চিকিৎসায় সামান্য হলেও কাজে আসবে বলে আমাদের আশা। আ্যাপস দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নীরবে নিভৃতে থাকা আকাশ কলি দাসের মতো অপরাপর পাখিপ্রেমীদেরকেও খুঁজে বের করে প্রতিবছরই সম্মানিত করতে চায়। মূলত তাদেরকে সম্মানিত করে আমরা আ্যাপসের সকল সদস্যরাই সম্মানিত হতে চাই।’</p> <p>অ্যাপসের সভাপতি ডা. এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা এ সংগঠনের মাধ্যমে খাঁচার পাখি এবং প্রকৃতিতে থাকা পাখি—উভয়নিয়েই কাজ করি। বাংলাদেশে যারা পাখি ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন আমরা এখন থেকে প্রতিবছরই তাদের কাউকে না কাউকে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ পদক দিয়ে যাব। প্রকৃতি ও পাখির প্রতি ভালোবাসাই আকাশ কলি দাসদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্কের সেতু বন্ধন। সে কারণেই আমরা ঢাকা থেকে এখানে চলে এসেছি তাকে ও তার কীর্তিকে প্রত্যক্ষ করতে।’</p> <p>উল্লেখ্য, তোতা ও টিয়া জাতীয় পাখির আদি ও দেশীয় জাতগুলোকে প্রকৃতিতে যথাযথভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি খাঁচায় পোষার উপযোগী মিউটেশনগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে বা শখের বশে লালন পালন করার সঠিক পদ্ধতির প্রসার ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং পালনকারীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১ মে তারিখে গঠিত হয় অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারোট অ্যান্ড প্যারাকিট স্টকব্রিডার্স, বাংলাদেশ। মাত্র এক বছরের মধ্যেই সংগঠনটি তার ব্যতিক্রমী কর্মযজ্ঞ দিয়ে পাখি পালনের সঙ্গে জড়িত মানুষের মধ্যে নতুন আশা ও আস্থার সঞ্চার করতে সমর্থ হয়েছে।</p>