<p>শ্রদ্ধেয় আব্বা,<br /> জানি আপনার শরীর ভালো নেই। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। উচিত ছিল আপনার পাশে থেকে সেবাযত্ন করা, কাজকর্মে সাহায্য করা। কিন্তু বিধি বাম! কর্মজীবনের ব্যস্ততা লতাপাতার মতো আঁকড়ে ধরেছে।</p> <p>এইতো মাত্র কয়েক মাস আগে আপনাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে রেখে এলাম। এরপর নতুন কর্মস্থলে যুক্ত হলাম। সকাল-সন্ধ্যা অফিস। প্রতিদিনই অফিস শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবি, আজ আপনি কল দেওয়ার আগেই আমি আপনাকে কল দেব। কিন্তু হায়, ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে বেমালুম ভুলে যাই!</p> <p>তবে আপনার কল দেওয়া কখনো মিস হয় না। অসুস্থতা কিংবা ব্যস্ততা কোনো কিছুই আমাকে কল দেওয়া থেকে ভুলিয়ে রাখতে পারে না। প্রায়ই এমন হয়, আপনি কল দিলে ইচ্ছা করেই রিসিভ করি না। কেন জানেন? তখন দুপুরের খাবারের সময় পার হয়ে গেলেও খাওয়া হয়নি।</p> <p>কল ধরলেই জিজ্ঞেস করতেন কী খেলাম। খাইনি শুনলে হয়তো মন খারাপ হতো আপনার। কিংবা কেন খাইনি, খাওয়াদাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে কি না- নানা রকম টেনশন, তাই ফোন ধরিনি। এভাবে কত কিছু লুকিয়ে রাখি, আপনি জানেন না। আপনার মতো বাবারা, যাঁরা ছেলে-মেয়ের ব্যাপারে অল্পতেই টেনশনে পড়েন, তাঁদের সব কিছু জানাতে নেই!</p> <p>কয়েক বছর আগের ঘটনা। তখন হিফজখানায় পড়ি। সপ্তাহের শেষে নানা রকম খাবারদাবার নিয়ে আমাকে দেখতে যেতেন। জ্যাম থেকে বাঁচতে গুলিস্তান থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত হেঁটে যেতেন। অসুস্থ শরীর, হাতে খাবারদাবারের ব্যাগ। তবু কষ্ট করে আমাকে দেখতে যেতেন। অথচ আপনার খেদমতে আমি অল্পতেই হাঁপিয়ে যাই।</p> <p>অনেক সময় রাগারাগি করেন, ধমক দেন। সাময়িক মন খারাপ হলেও এর পেছনে তুমুল ভালোবাসা অনুভব করি। এইতো মাসখানেক আগে অসুস্থ হলেন, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করলাম। আপনার ঘুম হয় না, খেতে পারেন না। যা হোক, দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠলে  হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কখনো বলা হয়নি আপনার জন্য কতটা ভালোবাসা পুষে রাখি।</p> <p>ইতি<br /> রায়হান আহমেদ তামীম, ঢাকা</p>