<p>চলছে মধু মাস। আম, কাঁঠালে ভরপুর চারদিক। নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় এই ফল দুটি থেকে।</p> <p><strong>আম : </strong>আমকে আমরা বলি ফলের রাজা। এটা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু। চলুন জেনে নেই আমের গুণাগুণ -</p> <p>■ পুষ্টিগুণে ভরপুর প্রতি ১০০ গ্রাম আম থেকে পাওয়া যায় ৩,৫১০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন, যা শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে ভিটামিন এ থাকে ২৯২ মাইক্রোগ্রাম, যা আমাদের দৈনিক ভিটামিন এ-এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। ভিটামিন এ প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত লিভারে জমা থাকে। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আম রেখে শরীরে ভিটামিন এ-এর সঞ্চয় বাড়াতে পারি।</p> <p>■ এই ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, এমনকি বার্ধক্যেও চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াকে অনেকাংশেই প্রতিরোধ করতে পারে।</p> <p>■ শুধু কাঁচা আমেই নয়, পাকা আমেও পর্যাপ্ত (১০০ গ্রামে প্রায় ৩৪.৭ মিলিগ্রাম) ভিটামিন সি আছে। ভিটামিন এ ও সি দুটিই শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।</p> <p>■ আমে থাকা পেকটিন ও খাদ্য আঁশ (ফাইবার)আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ফাইবার, পেকটিন রক্তের এলডিএল লেভেল কমায় এবং এতে বিদ্যমান ভিটামিন বি৬ রক্তের হোমোসিস্টিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, যা করোনারি আর্টারি ডিজিজ ও স্ট্রোক থেকে দেহকে রক্ষা করে।</p> <p>■ আমে বিদ্যমান পলিফেনোলিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ব্রেস্ট ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।</p> <p>■ আমের ফাইটোকেমিক্যাল হলো প্রাকৃতিক ফ্যাট বুস্টার। আমে খাদ্য আঁশ থাকায় এটি দীর্ঘ সময় পেটে থাকে, যা আমাদের পেট ভরার অনুভূতি দেয়। ১০০ গ্রাম পাকা আম থেকে প্রায় ৮২ ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই যারা ওজন কমাতে চান তাঁরা ভাত, আলু কমিয়ে আম খেতে পারেন। ভিটামিন এ পাবেন পর্যাপ্ত আবার কমবে ওজনও।</p> <p>■ আমের জি আই ভ্যালু ৫৫ (মিডিয়াম), এতে প্রায় ১৪ শতাংশ সুগার আছে এবং ডায়াবেটিক রোগীরা যেহেতু শর্করাজাতীয় খাবার খুব একটা হিসাব করে খান না তাই এই রোগীদের জন্য আম হিসাব করে খেলে ভালো হয়। নতুবা আম ডায়াবেটিক রোগীদের ব্লাড সুগার বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীরা মিড টাইম স্ন্যাকসের সময় একটি আমের অর্ধেক খেতে পারবেন। আম, দুধ, ভাত খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এভাবে খাওয়া থেকে বিরত থাকলে ডায়াবেটিসও বাড়বে না আবার আমটাও খাওয়া হলো।</p> <p><strong>কাঁঠাল :</strong> গ্রীষ্মকালীন ফল কাঁঠাল, যা আমাদের জাতীয় ফল। কাঁঠাল খেতে যেমন সুমিষ্ট তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের দেশে কাঁচা ও পাকা দুইভাবে কাঁঠাল খাওয়া হয়। নিরামিষভোজীরা মাংসের পরিবর্তে কাঁচা কাঁঠাল খেয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই কাঁঠালের গুণাগুণ -</p> <p>■ প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠাল থেকে প্রায় ৭৪ ক্যালরি পাওয়া যায়। কাঁঠালে বেশ আঁশসমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রামে ৭.২ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার থাকে। দি একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াবেটিসের রিকমেন্ডশন অনুযায়ী, একজন মহিলার প্রতিদিন ২৫ গ্রাম ফাইবার এবং একজন পুরুষের ৩৮ গ্রাম ফাইবার প্রয়োজন হয়। যাদের ওজন স্বাভাবিক এবং ডায়াবেটিস নেই, তারা অনায়াসে শরীরের দৈনন্দিন খাদ্য আঁশের চাহিদা কাঁঠালের মাধ্যমে পূরণ করতে পারে। এতে আঁশ বেশি থাকায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তবে যাদের হজমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য কাঁঠাল কম পরিমাণে গ্রহণ করাই উত্তম।</p> <p>■ কাঁঠাল ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামের খুব ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠাল থেকে ২৪৮ মাইক্রোগ্রাম পটাসিয়াম ও ৪২ মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং সেই সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামও পাওয়া যায় ১৩ মাইক্রোগ্রামের মতো। হাড় মজবুত করতে এই ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে আমরা কাঁঠাল থেকে শরীরের ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদাও কিছুটা পূরণ করতে পারি।</p> <p>■ কাঁঠালে উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম রয়েছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, উচ্চমাত্রার পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেলে পটাসিয়াম সোডিয়ামের প্রভাবকে প্রতিরোধ করে রক্তনালিগুলোর দেয়ালে উত্তেজনা কমিয়ে রক্তচাপ কমায়। ফলে স্ট্রোকের প্রবণতা কমে।</p> <p>■ কাঁঠাল ফাইটোকেমিক্যালসমৃদ্ধ। ফাইটোকেমিক্যাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ, যা শরীরের ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে, ক্যান্সারসহ নানা রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।</p> <p>■ প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ২৪ মাইক্রোগ্রাম ফলেট ও ৩.৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন বি থাকে, যা নার্ভ ফাংশন ও এনার্জি মেটাবলিজমে সাহায্য করে।</p> <p>■ কাঁঠালের জিআই ভ্যালু মাঝারি। তার মানে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা কাঁঠাল খেতে পারে (ছোট চার কোষ), কিন্তু পরিমাণে বেশি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।</p> <p>■ আমের চেয়ে বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ কাঁঠালে তুলনামূলক (২৮ মাইক্রোগ্রাম) কম থাকে।</p> <p>■ কাঁঠালের বিচি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ, খুবই মুখরোচক ও উপাদেয় খাবার। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ, যা প্রিবায়োটিকস হিসেবে কাজ করে। কাঁঠালের বিচিতে ভিটামিন বি বিশেষ করে রিবোফ্লাবিন ও থায়ামিন বেশি থাকে, যা আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম খুব ভালো মাত্রায় থাকে। এতে আয়রনের পরিমাণও বেশি। যাদের ওজন কম এবং ওজন বাড়াতে চায়, তারা অবশ্যই এই সময়টাকে বেছে নিতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আম ও কাঁঠাল রেখে দিনে বেশ কয়েকবার খেলে তা ওজন বাড়াবে।</p> <p><strong>সতর্কতা : </strong>কিডনি রোগীরা উচ্চ পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (কাঁঠাল, পাকা আম) গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন।</p> <p><span style="font-size:14px;">লেখক : পুষ্টিবিদ<br /> জামালপুর ডায়াবেটিস জেনারেল হাসপাতাল</span></p>