<p>টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত সেই পুকুরটি দখলের পাঁয়তারা অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে একদিকে প্রশাসন সাইনবোর্ড দিচ্ছে অপরদিকে রাতের আধারে তা উধাও হচ্ছে। এই চক্রকে প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকের পক্ষে উপজেলা ভূমি অফিস ওই স্থানের পুকুর পাড়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে পর পর সাতবার সাইনবোর্ড দিলেও তা উধাও হয়ে গেছে। পুকুরের জমি দখলে নিতে একটি ভূমিধস্যু চক্র রাতের আধারে সাইনবোর্ড উধাও করছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।</p> <p>ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পুকুরে সাটানো সাইনবোর্ডটিতে উপজেলার বাওয়ার কুমারজানী মৌজার এসএ দাগ নম্বর ৩৮২-এ ৩ দশমিক ৭০ একর এবং ৩৮৩ দাগে ১ দশমিক ৫০ একরসহ মোট ৫ দশমিক ২০ একর জমি সরকারি খাস সম্পত্তি উল্লেখ ছিলো। প্রতি শতাংশ জমির আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা হিসেবে ৭৮ কোটি টাকা হবে বলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় জমি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এই জমি ভরাটের পর কমপক্ষে প্রতি শতাংশ ৩০/৩৫ লাখ টাকা হবে। সে হিসেবে প্রায় দুইশ কোটি টাকার সরকারি জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা চলছে।<br />    <br /> জানা গেছে, সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত নদী শ্রেণির ওই জমি স্থানীয় একটি ভূমিধস্যু চক্র অবৈধ দখলের জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। গত বছরের ১৩ এপ্রিল রাতে ওই পুকুরটি ভরাটের জন্য তারা অন্য স্থান থেকে ট্রাকে মাটি এনে সেখানে ফেলছিল। খবর পেয়ে তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুল ঘটনাস্থলে গিয়ে এক মাটি ব্যবসায়ীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন। একইসাথে তাকে সেখান থেকে মাটি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন।<br />  <br /> সূত্র আরো জানান, ওই চক্রটি ২০১৮ সালে পুকুরটি ভরাটের চেষ্টা করে। তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজগর হোসেন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে তা বন্ধ করে দেন। এর এক মস পর পুকুরটি পূনরায় ভরাটের চেষ্টা করা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। অপরদিকে গত বছর বছর মার্চ মাসে ওই সরকারি পুকুরটি ভরাটের গুঞ্জন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি জমিতে কেউ যাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের পক্ষে পুকুর পাড়ে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। কিছুদিন পর রাতের আধারে সেটি উধাও হয়ে যায়। কয়েকদিন পর আবার একই সাইনবোর্ড দেওয়া হয়। কিছুদিন পর রাতের আধারে সেটিও উধাও হয়ে যায়। সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর ওই স্থানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় নম্বর সাইনবোর্ড দেওয়া হয় এবং ভূমিধস্যু চক্রটি ৭ অক্টোবর তা উধাও করে ফেলে বলে এলাকাবাসী জানান। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাত নম্বর টিনের সাইনবোর্ড সাটানো হয়। চলতি সপ্তাহের কোন এক রাতে সেই সাইনবোর্ডটিও উধাও হয়ে গেছে।</p> <p>ওই স্থানে সাইনবোর্ড না থাকলেও খুটি দুটি রয়ে গেছে। তবে ওই পুকুরটি দখলের পাইতারা কারা করছে তা জানাতে পারেননি ভূমি অফিসের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা।</p> <p>সরেজমিনে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি খুটির মধ্যে একটি সিমেন্টের খুটি দাঁড়িয়ে আছে, অপরটি নিয়ে গেছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উপজেলা ভূমি অফিসের দেওয়া সাইনবোর্ডটি উধাও হয়ে গেছে। কে বা কাহারা রাতের আধারে সাঁটানো সাইনবোর্ডটি উধাও করেছে তা স্থানীয় ভূমি অফিসের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলতে পারেননি।</p> <p>মির্জাপুর পৌর ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান স্বপন বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে একের পর এক সাইনবোর্ড দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু একটি চক্র তা রাতের আধারে উধাও করছে। আট নম্বর সাইনবোর্ড সাটানোর প্রস্তুতি চলছে। চক্রটি যতই চেষ্টা করুক না কেন সরকারি সম্পত্তি কোনভাবেই বেদখল করতে পারবে না।</p> <p>উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান বলেন, পুকুরটিতে কয়েক বছর সাইনবোর্ড সাটানো ছিল। দুই তিন বছর ধরে ওই পুকুর পাড় থেকে বার বার সাইনবোর্ড সরানো হচ্ছে বলে শুনছি। জমিটি এখানো সরকারি খাস খতিয়ানভূক্তই আছে। কে বা কারা এই সাইনবোর্ড সরাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এই সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় প্রাশসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।</p>