<p>নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের জোগান বাড়লে দাম কমে আবার জোগান কমলে পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ে। আবার এমনও দেখা যায়, পণ্যের জোগান যখন স্থির, তখনো ক্রেতার চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম বাড়ে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। আবার কিছু কিছু ভোগ্যপণ্য ক্রয়সীমা অতিক্রম করায় বিপাকে পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষ।</p> <p>বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা ছয় মাস আগে ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। দেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে কিনে খাওয়ার সামর্থ্য থাকলেও নিম্নআয়ের মানুষের কাছে তা অনেকটা আকাশছোঁয়া স্বপ্নের মতো। তাদের কাছে গরুর মাংস দুর্লভ ও আভিজাত্যের খাবারে পরিণত হয়েছে। গরুর মাংসের স্বাদ নিতে গরিবরা ছুটছে গরুর ছাঁটকাট-উচ্ছিষ্টের দোকানে।</p> <p>আরো পড়ুন- <a href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/06/02/1393656"><span style="color:#e74c3c;">যেভাবে খুব সহজে অনলাইনে কাটা যাবে ট্রেনের টিকিট</span></a></p> <p>গরুর ছাঁটকাট-উচ্ছিষ্ট বিক্রির এমন চিত্র দেখা গেছে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে। সামর্থ্য না থাকায় আর দামে কম হওয়ায় গরুর মাংসের স্বাদ নিতে নিম্নআয়ের কিছু ক্রেতা ঝুঁকছে ছাঁটকাট গরুর মাংস কিনতে।</p> <figure class="image" style="float:left"><img alt="মাংস" height="284" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Nahid/Untitled-4a.jpg" width="387" /> <figcaption>গরুর ছাঁটকাট ও উচ্ছিষ্ট মাংসের দোকান</figcaption> </figure> <p>ছাঁটকাট মাংস কী? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীরগঞ্জ পৌর বাজারের মাংস ব্যবসায়ী রবি মিয়া (৩৩) বলেন, ‘গরুর মাংস বিক্রি হওয়ার পর চর্বি, পর্দা, রগ, মাথার সাইডের হাড়-মাংস, নাকের হাড়, ভুঁড়ির কুস্তাসহ মাংসের উচ্ছিষ্ট একত্র করা হয়। এগুলোই ছাঁট মাংস।’</p> <p>উপজেলার ১১ নম্বর মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ হাট, বীরগঞ্জ পৌর হাটসহ আশপাশের হাট-বাজার ঘুরে লক্ষ করা যায়, এই ছাঁট মাংসের পসরা নিয়ে বসেছে কিছু দোকানি। ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে এসব উচ্ছিষ্ট মাংস বিক্রি করছেন তারা।</p> <p>গোলাপগঞ্জ হাটে ছাঁট মাংস বিক্রেতা শেখ আব্দুল জব্বার (৫৫) জানান, বীরগঞ্জ পৌর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন কসাইয়ের কাছ থেকে ছাঁট মাংস প্রতিকেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দরে সংগ্রহ করেন। এবং ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে সোমবার ও বৃহস্পতিবার হাটে বিক্রি করেন। প্রতিহাটে ২০ থেকে ২৫ কেজি ছাঁট মাংস বিক্রি হয়। তার এই মাংসগুলো কিনতে আসা অধিকাংশ নিম্নআয়ের গরিব শ্রেণির মানুষ।</p> <p>ছাঁটকাট মাংস ক্রেতা ভ্যানচালক মো. সাফিয়ার (৪৫) নিজের ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার জায়গা-জমি নাই, আমি দিন আনি দিন খাই, কোনো দিন ৩০০, কোনো দিন ৪০০ টাকা আয় হয়। পরিবারের সদস্য ৫ জন, মেয়ে জামাই-নাতিকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে। নাতি গরুর মাংস খেতে চেয়েছে, কিন্তু আমার গরুর মাংস কিনার সামর্থ্য নেই। তাই দামে কম হওয়ায় নাতিকে নিয়ে হাটে এসেছি ছাঁটকাট মাংস কিনতে।’</p> <p>বীরগঞ্জ পৌর হাটে ছাঁট মাংস ক্রেতা দিনমজুর নাগরু বলেন, ‘কোনো দিন ৪০০ আবার কোনো দিন ৫০০ টাকা আয় হয় আবার কোনো দিন কাজ থাকে না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, কবে গরুর মাংস খেয়েছি মনে নাই। বাচ্চাটা অসুস্থ, গরুর মাংস খেতে চেয়েছে। ৭০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস সেনার সামর্থ্য নাই, তাই কম দামে ছাঁট মাংস কিনতে এসেছি।’</p> <p>সাধারণ ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। মধ্যবিত্তের জন্য কোনো জায়গা থাকছে না। নিম্নবিত্তরা আরো নিচে ধাবিত হচ্ছে। সব কিছু ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।</p> <p>বীরগঞ্জ উপজেলা সেনেটারি ইন্সপেক্টর মো. ফরিদ বিন ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, এই উচ্ছিষ্ট মাংস খাওয়া যাবে না তা না, তবে না খাওয়াই উত্তম। এই উচ্ছিষ্ট মাংস বিক্রি বন্ধে, বিভিন্ন হাট-বাজারে বেশ কয়েকবার অভিযানও পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ছাঁট মাংস জব্দ করে পুঁতে ফেলেছি এবং ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে কয়েকবার জরিমানা করেছি।</p>