<p>আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান প্রবাসীদের। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং তাদের জীবনযাপন দেশের মানুষদেরকেও প্রভাবিত করছে। বিশেষভাবে গ্রামাঞ্চলে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এটি কেবল ডিজিটাল ডিভাইড বা বিভাজনকেই দূর করে না, বরং বৃহত্তর পর্যায়ে ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক পরিষেবাগুলোর ব্যবহার সহজতর করে তোলে।</p> <p><strong>বাংলাদেশি প্রবাসী: একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক</strong><br /> বিশ্বজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে আছে। তবে এই কমিউনিটিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিন্নতা। বিশেষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে এই মানুষদের জীবনযাপনে দেখা যায় বিচিত্রতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে বসবাস করেন। এই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী জনসংখ্যা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অর্থের একটি উৎস হয়ে ওঠার পাশাপাশি, নতুন দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে।</p> <p><strong>প্রযুক্তিগত পরিবর্তন: দ্বিমুখী উপায়</strong><br /> প্রযুক্তিগত জ্ঞান স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি অনেক সময় দ্বিমুখী হয়ে থাকে। জীবিকা নির্বাহ এবং শিক্ষা লাভের জন্য অভিবাসীরা বসবাসরত দেশগুলোতে শিখছে নতুন দক্ষতা এবং প্রযুক্তির প্রয়োগ। পরবর্তীতে যা তারা তাদের নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই স্থানান্তর বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেও দৃশ্যমান। বিদেশ থেকে ফিরে আসা অভিবাসী বা প্রবাসীরা প্রযুক্তির নতুনদিকগুলো তুলে ধরে তাদের পরিবার এবং সমাজের কাছে।<br /> বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটি দেখা যায় সেটি হলো ডিজিটাল সাক্ষরতার বৃদ্ধি। বিদেশে থাকাকালীন অবস্থায় প্রবাসীদের শিখে নিতে হয় প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল সিস্টেমের প্রয়োগ-পদ্ধতি। প্রয়োজনের তাগিদে এই শিক্ষা বা জ্ঞানের সংস্পর্শে চলে আসে দেশে থাকা প্রবাসীদের পরিবার-পরিজন। এর ফলে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল ডিভাইড বা বৈষম্য দূর করতে সহায়ক হয়ে উঠছে প্রবাসীদের এই শিক্ষা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গত পাঁচ বছরে গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ শতাংশ। যেখানে রয়েছে ফিরে আসা অভিবাসীদের প্রভাব। ডিজিটাল শিক্ষা এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রশিক্ষণ প্রদানে কাজ করছে অনেক বিদেশফেরত ব্যক্তিরা। নিজ উদ্যোগে বা বেসরকারী সংস্থার সাথে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করছেন তারা এবং এতে সুবিধা পাচ্ছে গ্রামাঞ্চলের জনগণ।</p> <p><strong>কেস স্টাডি: মোবাইল ব্যাংকিং বিপ্লব</strong><br /> প্রযুক্তিগত উন্নয়নের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো বাংলাদেশের প্রবাসীদের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার। বিকাশ এবং রকেটের মতো পরিষেবাগুলোর কারণে লাখ লাখ মানুষ আর্থিক পরিষেবায় অ্যাক্সেস পাচ্ছে। যেটি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে পুরো আর্থিক প্রেক্ষাপট।  <br /> আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর ২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করছে এমন গ্রামীণ পরিবারগুলোর ৬০ শতাংশ পরিবারের একজন সদস্য বিদেশে কর্মরত। অর্থাৎ, অভিবাসীদের সাথে অর্থ আদান-প্রদানের জন্য এই পরিবারগুলো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নেয়া শুরু করেছে। যেটি তাদেরকে আর্থিকভাবেও ক্ষমতায়ন করে।<br /> এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে 'ট্যাপট্যাপ সেন্ড’ -এর মতো রেমিট্যান্স প্ল্যাটফর্মগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের একটি নিরবচ্ছিন্ন এবং সাশ্রয়ী সেবা প্রদান করে যাচ্ছে এই প্ল্যাটফর্মগুলো। এতে পরিবারগুলো আর্থিকভাবে সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক পরিষেবার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারেও উৎসাহিত হচ্ছে।</p> <p><strong>কৃষিজ উদ্ভাবন</strong><br /> বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ জড়িত কৃষিকাজে। যারা প্রবাসীদের কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছে ভিন্ন ভাবে। বিদেশ থেকে শেখা উন্নত কৃষি পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি অভিবাসীরা প্রয়োগ করছে দেশের মাটিতে। অভিনব উপায়ে কৃষিকাজে বৃদ্ধি করছে উৎপাদনশীলতা এবং স্থায়িত্ব।<br /> খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষায় উঠে আসে, ফিরে আসা অভিবাসীদের প্রভাবগুলো। বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে ড্রিপ ইরিগেশন, মাটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং মোবাইল ভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস ইত্যাদি প্রযুক্তির ব্যবহার ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলো কেবল কৃষি উৎপাদনই বাড়ায় না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতেও সাহায্য করে।</p> <p><strong>স্বাস্থ্যসেবা: একটি ডিজিটাল রূপান্তর</strong><br /> দেশে টেলিমেডিসিন এবং স্বাস্থ্যসেবার  ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর গুরুত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ জনগণের জন্য এমন রিমোট সার্ভিস বা পরামর্শ যেখানে কিনা অত্যন্ত জরুরী। প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বাস্থ্যসেবার এই খাতেও অবদান রাখছে। যেখানে প্রবাসীদের কারণে স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাল সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারছে তাদের পরিবার।<br /> যেমন, গ্রামের মানুষদের টেলিমেডিসিন পরিষেবা দিচ্ছে ডিজিটাল হেলথ কেয়ার সলিউশন (ডিএইচ) প্ল্যাটফর্মগুলো। গত দুই বছরে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০ শতাংশ। এদের এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই এমন পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন বিদেশে কর্মরত পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। </p> <p><strong>চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ</strong><br /> প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রভাব অপরিসীম। তবে এখানেও রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ, যেমন পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশ এখনও সীমিত।  সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং প্রবাসী সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই বাঁধা দূর করা সম্ভব। প্রবাসীদের দক্ষতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ তার প্রযুক্তিগত বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে পারে। একইসাথে নিশ্চিত করতে পারে, সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর অগ্রগতি। </p> <p>প্রবাসী বাংলাদেশিরা কেবল রেমিট্যান্সের উৎস নয়; প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর এবং উদ্ভাবনের অনুঘটক হিসেবেও তারা কাজ করে। প্রবাসীরা এবং ফিরে আসা অভিবাসীরা গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে শুরু থেকেই। আজকের এই ডিজিটাল যুগেও তারা নতুনভাবে অবদান রাখছে দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে।</p> <p><em>লেখক: প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোর অ্যাপ ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’ এ কাজ করছেন।</em></p>