<p>ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৬ উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে বঙ্গভবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ মোট ১৪ জন উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেন। তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। </p> <p>তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালিদ হোসেন বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল পেরিয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। এ সময় আমাদের মূল কাজ শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও বজায় রাখা। মানুষের মধ্যে যে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে তা নিরসন করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা। </p> <p>তিনি আরো বলেন, আমাদের একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন আমরা সুস্থ প্রতিনিধিত্বশীল নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারি। মানুষের মধ্যে যেন স্বস্তি ফিরে আসে প্রথমে এ নিয়ে আমরা কাজ করব। বাকি কাজগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে করব। </p> <p>ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ। তার মূল নাম আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ একজন ইসলামী পণ্ডিত ছিলেন।</p> <p>ড. আফ ম খালিদ হোসেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা, মাসিক আত-তাওহিদের সম্পাদক, আরবি ও ইংরেজি মাসিক বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কোরআনিক সায়েন্সেস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অতিথি শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন।</p> <p>এরআগে ড. খালিদ হোসেন ওমরগণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তা ছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খণ্ডকালীন অধ্যাপক এবং নেজামে ইসলাম পার্টির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। </p> <p><strong>পড়াশোনা</strong></p> <p>বাবুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে আ ফ ম খালিদ হোসের শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। এখানে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামের আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় লেখাপড়া করেন। ১৯৭১ সালে সাতকানিয়া আলিয়া মাহমুদুল উলুম মাদরাসা থেকে প্রথম বিভাগে আলিম ও ১৯৭৩ সালে ফাজিল পাশ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত চট্টগ্রাম চন্দনপুরা দারুল উলুমে হাদিস অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। </p> <p>ছাত্রজীবনে (১৯৭৩-১৯৮৪) দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলার বাণী ও এর পটিয়া মহকুমা সংবাদদাতা এবং দ্যা নিউ ন্যাশন-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।</p> <p>তিনি হাকীমুল উম্মত খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর শিষ্য মুহাম্মদ আমিনের কাছে সহিহ বুখারি, চট্টগ্রামের মীরসরাই থানার নিজামপুর এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান নিযামীর কাছে সহিহ মুসলিম, ইসমাইল আরাকানি কাসেমির কাছে সুনান আত-তিরমিজি, নাওয়াব হাসান কাসেমির কাছে সুনানে আবু দাউদ পড়েছেন। চট্টগ্রামের আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার সাবেক মহাপরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম বুখারি তার শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম। </p> <p>১৯৮২ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে এমএ পাশ করেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নিয়ে ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর খুতবা : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক গবেষণা ’ বিষয়ের ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। </p> <p><strong>কর্মজীবন</strong></p> <p>১৯৮৭ সালে সাতকানিয়া আলিয়া মাহমুদুল উলুম ফাযিল মাদরাসায় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের শুরু হয়। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওমরগণি এমইএস কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।</p> <p>২০০৭ সাল থেকে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ধর্মীয় ও সাহিত্য বিষয়ক মুখপত্র মাসিক আত-তাওহীদের সম্পাদক ও হালিশহর এ-ব্লক হজরত উসমান (রা.) জামে মসজিদের খতিব, আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরির মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।</p> <p>এছাড়াও তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে দেড় বছর খণ্ডকালীন অধ্যাপক, মাওলানা হারুন ইসলামাবাদীর সময়ে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষণা বিভাগে ৪ বছর, মাওলানা সুলতান যওক নদভির আহ্বানে জামেয়া দারুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়ায় ‘ওসিলাতুল ইলাম’ বিষয়ে এক বছর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। </p> <p>২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির এবং ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের ৮ জুলাই থেকে তিনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। </p>