<p>ইসলামে মাসের সময় নির্ধারক হলো চাঁদ, দিনের সময় নির্ধারক সূর্য। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন দিনের শুরু, তেমনি অমাবস্যার পর চন্দ্রোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাস গণনা শুরু হয়। প্রাকৃতিক চক্র  (Natural cycle) হলো ২৪ ঘণ্টায় এক দিন, সাত দিনে এক সপ্তাহ, ৩০ দিনে মাস, ১২ মাসে বছর। এটা অস্বীকার করা বোকামি ও অবৈজ্ঞানিক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা থেকেই। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই ‘দ্বিনুল কায়্যিমা’ বা সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় বিধান...।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)</p> <p>চাঁদকে কেন্দ্র করে হিজরিবর্ষ, সূর্যকে কেন্দ্র করে সৌরবর্ষ আবর্তিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘জিজ্ঞাসে তোমারে যদি চাঁদের বৃদ্ধি ক্ষয় বলে দিও তাহা তুমি যে কারণে হয়। তাদেরে বলে দাও গণনার কারণে সময় নিরূপণ হয় হজের ক্ষণ’ (কাব্যানুবাদ, সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৯)</p> <p>আয়াতে ‘হিলাল’ শব্দের বহুবচন ‘আহিল্লা’ আছে। ‘আহিল্লা’ অর্থ নব চাঁদসমূহ। চাঁদ একই সময়ে সব জায়গায় দেখা যায় না বলেই একাধিক নব চাঁদ মাস গণনার পার্থক্য নির্দেশ করে। পৃথিবীর সর্বত্র জোয়ার-ভাটাও একই সময়ে হয় না। জোয়ার-ভাটা স্থানীয় সময়ানুসারে হয়, যার সম্পর্কও চাঁদের সঙ্গে।<br /> সময়ের নিয়ন্ত্রণ, দিবারাত্রির পরিবর্তন মহান আল্লাহর হাতেই। তিনি বলেন, ‘আমি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতঃপর নিষ্প্রভ করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে দেখার উপযোগী করেছি, যাতে তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করো এবং যাতে তোমরা স্থির করতে পারো বছরের গণনা ও হিসাব...।’ (সুরা : বানি ইসরাঈল, আয়াত : ১২)</p> <p>পবিত্র কোরআনের ঘোষণা—‘আল্লাহই দিন ও রাতের পরিবর্তন ঘটান। এতে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য আছে চিন্তার উপকরণ।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৪৪)</p> <p>আরো আছে—‘আল্লাহ রাত-দিন ও সূর্য-চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, সব কিছু নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩৩)</p> <p>সারা বিশ্বে ঋতুচক্র একই নিয়মে আবর্তিত হয় না। আল-কোরআনের বাণী :</p> <p><em>‘তিনি সূর্যকে প্রচণ্ড দিপ্তি দিয়ে</em></p> <p><em>চাঁদ বানিয়ে দিলেন স্নিগ্ধতা ভরে,</em></p> <p><em>বছর গণনা ও হিসাবের তরে।’</em></p> <p><em>(কাব্যানুবাদ, সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫)</em></p> <p>শীতকাল গণনায় সময়গত পার্থক্য রয়েছে দেশে দেশে। ব্রিটেনসহ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের আমেরিকা, কানাডায় ডিসেম্বরের ২১/২২ তারিখ থেকে শীত শুরু হয়ে তা অব্যাহত থাকে মার্চের ১৯/২০/২১ পর্যন্ত। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়াবিদরা ওই দেশের ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি তিন মাসকে বলেন শীতকাল। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় শীত শুরু হয় ১৪ অক্টোবর এবং শেষ হয় ফেব্রুয়ারির শেষে। দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় শীত শুরু হয় জুনে এবং শেষ হয় আগস্ট মাসের শেষে। আয়ারল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় শীত শুরু হয় নভেম্বরে। চীন ও পূর্ব এশিয়ার দেশে শীতকাল গণনা শুরু হয় নভেম্বর থেকে।</p> <p>পৃথিবীতে এমন  দেশও আছে, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই দিনের আলো থাকে। যেমন—</p> <p>নরওয়ে : নরওয়েকে বলে মধ্যরাতের সূর্যের দেশ। এখানে মে মাসের শেষ থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭৬ দিন সূর্যাস্ত হয় না। নরওয়ের স্যালবার্ডে ১০ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট দিন-রাত সূর্যের আলো থাকে।</p> <p>নুনাভুত, কানাডা : কানাডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত নুনাভুতে প্রায় দুই মাস ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো থাকে এবং শীতকালে টানা ৩০ দিন সম্পূর্ণ অন্ধকার।</p> <p>আইসল্যান্ড : আইসল্যান্ডে জুন মাসে সূর্য কখনোই অস্ত যায় না।</p> <p>ব্যারো, আলাস্কা : এখানে মে মাসের শেষ থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত সূর্যাস্ত হয় না। নভেম্বরের ৩০ দিন ব্যারো, আলাস্কায় সূর্য ওঠে না।</p> <p>সুইডেন : মে থেকে আগস্টের শেষাবধি সুইডেনে মাঝরাতে সূর্যাস্ত যায় এবং একটানা ছয় মাস এখানে দিনরাত দিনের আলো থাকে।</p> <p>এ ছাড়া অ্যান্টার্কটিকা, ফিনল্যান্ড, রাশিয়ায় বছরের কিছু সময় ২৪ ঘণ্টাই দিনের আলো থাকে।</p> <p>বস্তুত মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বদলায় দিবারাত্রি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিবর্তন করেন, তিনি সূর্য ও চাঁদ নিয়ন্ত্রণ করছেন; প্রত্যেকেই এক নির্দিষ্টকাল আবর্তন করে..।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ১৩)</p> <p> </p> <p><em>লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, </em></p> <p><em>ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর</em></p>