বাঁ দিক থেকে—তানভীর তাবাসসুম, আরিফ হোসেন, আবু আনাস ইবনে সামাদ এবং সিয়াম হোসেন
২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলা করে জঙ্গিরা। হতাহতের পাশাপাশি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছিল। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু আনাস ইবনে সামাদকে। সেই থেকে তাঁর মাথায় আসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কিভাবে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আরো সুরক্ষিত করা যায়।
বিজ্ঞাপন
অ্যাডমস ওয়াচক্যাম এভাবেই কাজ করে থাকে
ওয়াচক্যাম
‘অ্যাডমস’ তৈরির পর গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে সিগমাইন্ড। প্রচলিত ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করলে ফল ভালো আসে না। শুধু তা-ই নয়, ভালো মানের কম্পিউটারেরও প্রয়োজন। সব মিলিয়ে সরকারি অনুদানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। গোয়েন্দা নজরদারির আইডিয়াটির একটি নমুনা দাঁড় করিয়ে অনুদানের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে আবেদন করে ‘সিগমাইন্ড’। এটার মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেন নিজেদের নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারে। আইডিয়াটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে অনুদান মঞ্জুর করে আইসিটি বিভাগ। ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাঁরা আইডিয়াকে বাস্তবিক রূপ দিতে সক্ষম হন। এটির নাম রাখা হয় ‘ওয়াচক্যাম সার্ভেলেন্স সুইট’। এটি দিয়ে মুখমণ্ডল শনাক্ত করা যায়। ক্যামেরার নির্দিষ্ট আওতার মধ্যে কোন কোন সময় কোন ব্যক্তি এসেছিল, তা-ও জানা যায়। মুখোশ পরা কোনো ব্যক্তিকে যদি ক্যামেরার আওতায় দেখা যায়, তাহলে সতর্কও করে। পুরো ভিডিওতে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজতে চাইলে সহজে বের করা যায়।
ভারতেও সিগমাইন্ড
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার কারণে দেশ-বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত পরিচয় হতে থাকে। ২০১৮ সালে ভারতের হাইটেক সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে টোল প্লাজা অটোমেশনের কাজও করে তাঁরা। ব্যবস্থাটি চালু করা হয় মহারাষ্ট্রের একটি মহাসড়কে।
টোল প্লাজা অটোমেশন
ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইলেন বাংলাদেশে। দেশের বিশৃঙ্খল সড়ককে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং প্রস্তাব দিতে থাকে সিগমাইন্ড। টোল প্লাজা অটোমেশনে প্রথম সম্মত হয় ঝিনাইদহের গড়াই ব্রিজের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। তাঁরা ব্যবহার করছে সিগমাইন্ডের ‘টোল প্লাজা অটোমেশন সলিউশন’। এ সফটওয়্যার টোল তৈরির কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সহায়তা করে। নাম্বারপ্লেট শনাক্তকরণ, গাড়ির ধরন, সারা দিনে কোন গাড়ি কতবার চলাচল করেছে, নির্ণয় করছে এ সফটওয়্যার। কাজ চলছে গাড়ির নাম্বারপ্লেট অনুসারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানি রিসিট প্রিন্টেরও। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কোনো নির্দিষ্ট গাড়ি টোল প্লাজায় আসার খবর জানতে চায়, তা-ও যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠানো যায়, সে লক্ষ্যেও কাজ করছে সিগমাইন্ড।
হাজিরা পর্যবেক্ষণ সুবিধা
প্রচলিত হাজিরা নির্ণয় ব্যবস্থায় ডিভাইসে আঙুলের ছাপ রেখে বা মুখের সাহায্যে উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এতে সময় বেশি লাগে। অন্যদিকে সিগমাইন্ডের ‘আন-অ্যাটেনডেড অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম’ ব্যবহার করলে কোনো ডিভাইসের সামনে গিয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয় না। ক্যামেরার আওতার মধ্যে এলে ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে যায়। এতে অফিসে কোন কর্মচারী কখন প্রবেশ করল এবং কখন বের হলো, এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানা যায়।
ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সুইট
বিশৃঙ্খল সড়কে শৃঙ্খলা আনার কাজ করবে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সুইট। ক্যামেরার আওতায় ১০ মিটারের মধ্যে এলে গাড়ির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, গাড়ির ধরন, লেনবিধি মেনে চলছে কি না তা জানা যাবে এ ব্যবস্থা থেকে।
কাজ করে যেভাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যারে কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট ছবি অথবা ভিডিও ফুটেজ। সাধারণত কোথাও চুরি হলে বা নিরাপত্তাজনিত বিপত্তি ঘটলে পুরো ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কাজটির পেছনে কারা জড়িত। এ ক্ষেত্রে সিগমাইন্ডের ওয়াচক্যামের সুবিধা হলো, ভিডিও চলার সময়ই কোনো মুখমণ্ডল বা গাড়ির নাম্বারপ্লেট দেখলে শনাক্ত করে নির্দিষ্ট একটি সার্ভারে প্রেরণ করে। এতে পুরো সময়টিতে ভিডিওতে কার কার মুখ দেখা গিয়েছিল, তা একসঙ্গেই শনাক্ত করা যায়। আবার কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ঠিক কতটার সময় ক্যামেরায় দেখা গিয়েছিল, তা-ও জানা যাবে।
বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিগমাইন্ড তাঁদের সফটওয়্যারসেবা দিয়ে যাচ্ছে। https://www.sigmindai.net/ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।