<p>যৌতুকের ৭০ হাজার টাকা না দিতে পারায় স্বামী, শাশুড়ি মিলে গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। গৃহবধূ শিরিনা আক্তার (২২) ওই পর্যায়েও বেঁচে থাকেন। এরপর তাঁকে বাড়িতে আটকে রেখে বিনা চিকিত্সায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন পর মা-বাবা এসে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ হাসপাতালে পাঠায়। গত শুক্রবার গভীর রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিত্সা চললেও শিরিনা এখন আর কথা বলতে পারছেন না। তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নেওয়ার জন্য পুলিশ আদালতের কাছে আবেদন করেছে।</p> <p>এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতেই স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবরসহ পাঁজজনের নামে মামলা হলেও মূল আসামি স্বামী শরিফ মিয়া এখনো অধরা। গতকাল শনিবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন। নৃশংস এই ঘটনায় গতকালই কালের কণ্ঠে ‘৭০ হাজার টাকা যৌতুক না পেয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।</p> <p>গতকাল শনিবার মোবাইল ফোনে শিরিনার মা দেলোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তাঁর মেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রয়েছেন। অবস্থা জানতে চাইলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কিরহম (কেমন) আছে কি কইয়াম। এইনো আওনের পর থাইক্যা আর কথা কয় না। অহন আল্লায় যদি নিজের হাতে বাঁচাইয়া দেন। এর চেয়ে বেশি কিছু আর কইতাম পারতাম না।’</p> <p>ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আহম্মেদ কবির জানান, অগ্নিদ্বগ্ধ শিরিনার ডাইয়িং ডিক্লারেশন (মৃত্যুকালীন জবানবন্দি) নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যায় আজ (রবিবার) তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করা যাবে। অন্যদিকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।</p> <p>শিরিনার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমারুলি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আব্দুল হাই। সাত মাস আগে ৭৫ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেওয়া হয় পাশের সরিষা ইউনিয়নের মাইছমপুর গ্রামের শাহাব উদ্দিনের ছেলে মো. শরিফ মিয়ার (২৮) সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে শিরিনাকে আরো ৭০ হাজার টাকা যৌতুক এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। দিনমজুর বাবার পক্ষ থেকে এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হলে চলে নির্যাতন। শিরিনার বাবা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে টাকা দিতে রাজি হন।</p>