বোধন থেকে বিসর্জন

&lt;p&gt;&lt;em&gt;আন্তরিক নিষ্ঠার সঙ্গে পূজার সব আচার-অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়ে এলে সব শেষে দশমী দিনে হয় বিজয়ার মিলনোৎসব। বোধনের মূল উদ্দেশ্য যেমন দেবীকে আবাহন করে আনা, তেমনি দশমীর মূল উদ্দেশ্য মাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বিসর্জন দেওয়া&lt;/em&gt;&lt;/p&gt; &lt;p&gt; &lt;/p&gt; &lt;p&gt;শ্রীশ্রী চণ্ডীতে বর্ণিত মহিষাসুর বধের উপাখ্যানটি আশ্রয় করেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীর আরাধনা সংঘটিত হয়ে আসছে। সৎ-চিৎ-আনন্দময়ীর আগমনে দেবী দুর্গার বাৎসরিক আরাধনাকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে সর্বস্তরের নর-নারী, শিশু থেকে বৃদ্ধ স্ফুর্তির এক অদ্ভুত আনন্দে মেতে ওঠে। পর্বতকন্যা দেবী এখানে দেবতাদের সম্মিলিত শক্তির সংহত সমুজ্জ্বল প্রতীক। দেবতাদের সমুদয় অস্ত্রে সজ্জিতা দশদিক ব্যাপ্ত ও আলোকিত করে দেবী বিরাজমানা। তাই দেবী হলেন দশভুজা।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;বঙ্গদেশে প্রতিমায় দুর্গাপূজা বহুকাল থেকে প্রচলিত। দুর্গাপূজা চৈত্র ও আশ্বিন মাসের শুক্লা সপ্তমী থেকে শুক্লা নবমী পর্যন্ত বছরে দুইবার অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্রেরটি &lsquo;বাসন্তী দুর্গাপূজা&rsquo; এবং আশ্বিনেরটি &lsquo;শারদীয় দুর্গাপূজা&rsquo; নামে খ্যাত। বহু শতাব্দীর কালপরিক্রমায় অকালবোধন থেকে বিজয়া অবধি আয়োজিত এই শারদীয়া অনুষ্ঠান বর্তমানে পরিণত হয়েছে এক জাতীয় এবং সর্বজনীন উৎসবে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;&lsquo;বোধন&rsquo; শব্দের অর্থ &lsquo;জাগরণ&rsquo;। ষষ্ঠীর সন্ধ্যাকালে বিল্ববৃক্ষমূলে দেবী বন্দনার উদ্দেশ্যে যে বিশেষ ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, সেটিই হলো বোধন। এই পর্ব থেকেই দেবী আরাধনার মূল কাজটি শুরু হয়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;রাবণবধের জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে বসন্তকালের বদলে শরৎকালে শ্রীরামচন্দ্র দেবীকে আরাধনা করে পরিতুষ্ট করেন। তিনি ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে দেবীর আরাধনার সংকল্প করেছিলেন। তাই সন্ধিপূজায় ১০৮টি পদ্ম দিয়ে দেবী আরাধনা আজও প্রচলিত আছে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;দেবীপূজার পদ্ধতিগুলো হলো যথাক্রমে&mdash;কল্পারম্ভ, বোধন, অধিবাস, পূজা ও বিসর্জন।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;কল্পারম্ভ মানে সংকল্প করা। দুর্গাপূজার সংকল্প একটু ভিন্ন ধরনের। এতে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী সব তিথিতেই সংকল্প হয়ে থাকে। সব পূজা অনুষ্ঠানের মধ্যে এটি সর্বপ্রথম ধাপ বলে এই সংকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। সংকল্প ছাড়া পূজার সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যায় না। স্বাভাবিকভাবেই এই কল্পারম্ভ তাই ধৈর্য, স্থৈর্য ও একাগ্রতার সুন্দর একটি পর্যায়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;দেবীপূজার দ্বিতীয় ধাপ হলো বোধন। ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় দেবীর বোধন হয়ে যাওয়ার পর হয় অধিবাস। ষষ্ঠীর পরের দিন হয় সপ্তমীপূজা। সপ্তমী তিথিতে সকালবেলায় নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। ৯টি বিভিন্ন গাছের পাতা সমেত ডাল একসঙ্গে বেঁধে দেবী প্রতিমার পাশেই সেটিকে পূজা করা হয়। এই ৯টি গাছ হলো কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মান ও ধান। এই ৯ রকম গাছের ডাল শ্বেত অপরাজিতা গাছের লতা দিয়ে জড়িয়ে লাল পাড় কাপড় পরিয়ে গণেশের ডান দিকে রাখা হয়। এই নবপত্রিকা উদ্ভিদ শক্তির প্রতীকরূপে আদ্যাশক্তি পরমা প্রকৃতি দেবীরই রূপ।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;এরপর দেবীর স্নান সম্পন্ন হয়। মৃন্ময়ী প্রতিমাকে জলে স্নান করানো সম্ভব নয় বলে দর্পণের মাধ্যমে প্রতিফলিত দেবীর প্রতিবিম্বকে স্নান করানো হয়। প্রথমে স্নান করানো হয় বিভিন্ন তীর্থ ও নদ-নদী থেকে আনা জল দিয়ে। তারপর বৃষ্টি, শিশির ও ঝরনার জল দিয়ে, শেষে সমুদ্রের জলে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের মাটি দিয়ে ঘটকে পবিত্র করে আট কলসি জলে মহাস্নান শেষ হয়। এরপর পূজারি দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর মাথায় গন্ধদ্রব্য ও কপালে সিঁদুর দিয়ে ঘৃতজল প্রস্তুত করে গায়ত্রী পাঠ করে প্রতিমার সব দেবতার চক্ষুদান করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরে দেবীর ঘট স্থাপন করে, মন্ত্র পাঠ করে সাধ্যমতো দ্রব্যাদি দেবীকে নিবেদন করে অত্যন্ত শুদ্ধমনে পূজা সম্পন্ন করেন।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;এভাবে মহাসপ্তমী রাত পেরিয়ে গেলে আসে মহা-অষ্টমীর দিন। পুরাণ অনুসারে অষ্টমী তিথিটি দেবী দুর্গার বিশেষ প্রিয়। এই তিথিতে মহাবিপদ থেকে মানবকুলের উদ্ধার সম্ভব হয়েছিল। তাই এই তিথি মহা-অষ্টমী নামে প্রসিদ্ধ। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে রাক্ষসরাজ রাবণের মুণ্ডুচ্ছেদ হয়েছিল বলে এই কালকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর শুরুর ২৪ মিনিট এই মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা সম্পন্ন করা হয়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;বৃহদ্ধর্ম পূরাণের মতে, দেবী চণ্ডিকা যেহেতু একসময় অসুরবধের নিমিত্ত এক কুমারী কন্যারূপেই দেবতাদের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাই ছয় থেকে ১১ বছরের একটি সুলক্ষণা কন্যাকে মহামায়ার জীবন্ত প্রতিমূর্তি হিসেবে পূজা করা হয়। এর নাম কুমারীপূজা। কুমারীপূজার মধ্য দিয়ে বস্তুত দেবী দুর্গারই পূজা করা হয়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;নবমীর প্রথম দণ্ডে বলিদান ও জপাদি করে দীপমালা উৎসর্গ করে দেওয়া হয়। বলির বাহ্য অর্থ যা-ই হোক না কেন, প্রকৃত অর্থটি হলো যে মানুষের ভেতরের কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য&mdash;এই ছয়টি রিপুর বলি প্রদান করে জগন্মাতার কৃপা লাভ করা।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;আন্তরিক নিষ্ঠার সঙ্গে পূজার সব আচার-অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়ে এলে সব শেষে দশমী দিনে হয় বিজয়ার মিলনোৎসব। বোধনের মূল উদ্দেশ্য যেমন দেবীকে আবাহন করে আনা, তেমনি দশমীর মূল উদ্দেশ্য মাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বিসর্জন দেওয়া। পূজা সমাপ্ত করতে পূজারি তাই বলেন, &lsquo;ওঁ গচ্ছ গচ্ছ পরং স্থানং যত্র দেবো মহেশ্বরঃ সংবৎসর ব্যতীতে তু পুনরাগমনায় চ।&rsquo; এই মন্ত্রে দেবীর ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। আসলে এই যে বির্সজন, তা অবশ্য বির্সজন দেওয়া নয়, বরং বলা যেতে পারে পরের বছরের জন্য আবার মাকে আবাহনের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;দুর্গাপূজার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান, ভক্তি, যোগ ও কর্ম&mdash;এই চারটি প্রধান ভাবের সমন্বয় ঘটিয়ে মানুষকে জাগতিক অভ্যুদয় থেকে পারত্রিক মোক্ষের দিকে পরিচালনা করা। তাই দুর্গাপূজা নিছক কোনো মূর্তিপূজা নয়, বরং মাটির তৈরি মূর্তির মধ্যে মাতৃশক্তির উদ্বোধন, প্রকৃতপক্ষে মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সেই চৈতন্য শক্তিরই রূপান্তর। সারা বিশ্বে যে অসুর শক্তি তথা জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে পৃথিবী অশান্ত করে তুলছে, তার থেকে পরিত্রাণের জন্যও দেবী দুর্গার আরাধনা করা দরকার। কারণ দেবী অসুর বিনাশিনী। অশুভকে নাশ করে শুভ প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তাঁর আবির্ভাব হয়েছে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;লেখক : অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়&lt;/p&gt; &lt;p&gt; &lt;/p&gt;

বোধন থেকে বিসর্জন

ড. মাধবী রানী চন্দ

অন্যান্য

অন্যান্য

প্রাসঙ্গিক

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ

নির্দেশেও সরেনি ঢাকার কেমিক্যাল কারখানাগুলো, সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ

মাইদুলের ১১ বিয়ে ১১ তালাক, টার্গেট অসহায় সুন্দরী নারী!

পার্বত্য জেলার এনজিওর বাজেট জানাতে হবে জেলা পরিষদকে

একদিনে হাসপাতালে আরো ১৯ ডেঙ্গু রোগী

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি অব্যাহত

রাশিয়া ও চীনের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে শঙ্কা, কী ভাবছে ইইউ সংসদ

রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রজ্ঞাপন জারি

‘হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে হবে আমাদের দেশের সিনেমাকে’

ইউক্রেনীয় ও রুশ বাহিনীর পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত অন্তত ৭

প্রধানমন্ত্রী এবার ডামি উপজেলা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন: রিজভী

অবৈধ অ্যাপে স্ট্রিমিং, তামান্না ভাটিয়াকে তলব করল মুম্বাই পুলিশ

এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি ভর্তি নয়: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

যে কারণে নিউজিল্যান্ডে ঘুমাতে পারছিলেন না মুস্তাফিজ

জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

লুপ্ত পেশা ডুবুরি ও ঘটি তোলা

যেকারণে মত বদল জাভির

ডিপ্লোমাধারী ২৩৮ সার্ভেয়ার নিচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়

মহাকর্ষ তরঙ্গের বাঁচামরার ইতিহাস

এক দিনের ব্যবধানে ফের কমল সোনার দাম

চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

আবার এক হচ্ছে ব্ল্যাক, তবে...

জিআই স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর মিষ্টি পান

‘মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের জন্য আরো সমস্যা তৈরি করবে’

শিরোপা থেকে আর এক ম্যাচ দূরে আবাহনী

পার্বত্য উপজেলা ভোটে অধিক সতর্কতা গ্রহণ করা হবে: ইসি সচিব

গোল্ডেন শু কেইনের?

মন্ত্রী দেশে ফিরলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত

সীতারামের চানাচুর

সরকার এসির রুমে বসে ঠাণ্ডা বাতাস খাচ্ছে: আমিনুল হক

সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, ‘অমীমাংসিত’ প্রদর্শনযোগ্য নয়!

সর্বাধিক পঠিত

বিএনপি-জামায়াতের দখলে চলে গেল কি শিল্পী সমিতি?

বেনজীর ও তার পরিবারের নগদ অর্থের তথ্য চেয়ে বিএফআইইউতে দুদকের চিঠি

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা পাঁচ ঘণ্টা, ৫০ শতাংশ লিখিত

স্বামীর মৃত্যু, মানসিক অবসাদ! এখন কেমন আছেন ‘চাক দে ইন্ডিয়া’র অভিনেত্রী

কোরআন থেকে শিক্ষা

গাজীপুরে রিসোর্ট-খামারের দখলে থাকা পৌনে ৯ একর বনভূমি উদ্ধার

যেভাবে শুরু সাংবাদিকদের ওপর হামলা

‘ব্রাজিল থে‌কে জীবন্ত গরু আনা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়’

তীব্র তাপপ্রবাহের পরিধি আরো বেড়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৫ মৃত্যু

কমলা রঙে ঢেকে গেছে গ্রিসের আকাশ

মন্ত্রী দেশে ফিরলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত

তিন অডিটরকে খুশি করতে চাঁদা দিতে হলো ৫৭ নার্সকে

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

মহানবী (সা.) যেসব উপায়ে উপার্জন করতেন

শিল্পী সমিতিতে মারামারি : সবশেষ যা হলো

উপজেলা নির্বাচন : বরুড়ার ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ

প্রধান আসামি কাশেম জিহাদী কোথায়? জামিনে মুক্তদের মহড়া

সদস্য পদ হারানো জায়েদ কি শিল্পী সমিতিতে ফিরছেন?

কোথায় বসবে অনন্ত-রাধিকার ‘রাজকীয়’ বিয়ের আসর?

২০২৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ১৯তম হবে বাংলাদেশ

সনদ পেল ১৪ পণ্য, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই-এর জন্য মামলা হবে ভারতে

ডিএমপির এক এডিসি ও তিন এসির বদলি

‘সুযোগ’ রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির

কাল চট্টগ্রাম যাবে বাংলাদেশ দল

বাবার সঙ্গে রোমান্সের প্রস্তাব, যে সিনেমা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সারা

উল্টো চাঁদ

‘আমি সব সময়ই আনন্দে থাকি’, বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে শিমুল

ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি : ওবায়দুল কাদের

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ, শপথ আজ

প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: অপরাধ আড়ালের চেষ্টা করা হচ্ছে

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন