<p>রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে আন্ত জেলা সড়ক-মহাসড়কগুলো যানজটে স্থবির হয়ে থাকছে। অশেষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রীরা। নষ্ট হচ্ছে বিপুল কর্মঘণ্টা। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। নানামুখী উদ্যোগ-আয়োজনেও এ থেকে মুক্তি মিলছে না। আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এই আলোচনায় যানজটমুক্তির সম্ভাব্য পথ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে আধুনিক বাস সার্ভিস।</p> <p>অর্থনীতি বিশ্লেষক ও পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় বাজেটে বাস আমদানিতে নীতি সহায়তা দেওয়া হলে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব। পর্যাপ্ত নীতি সহায়তার অভাবে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা বেশি আসনের আধুনিক বাস আমদানিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই সড়ক-মহাসড়কে চলছে লক্কড়-ঝক্কড় পুরনো বাস। তাতে যানজট পরিস্থিতি ক্রমে আরো খারাপ হচ্ছে।</p> <p>তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে একজন ব্যক্তির বা পরিবারের খরচের অন্যতম খাত যাতায়াত। উন্নত ও আধুনিক বাস সার্ভিস চালু হলে সাধারণ মানুষের খরচ কমবে। একই সঙ্গে তারা স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারবে।’</p> <p>পরিবহন খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাস আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষভাবে ভ্যাট কমানো প্রয়োজন। এতে আমদানি বাড়বে। ভালো বাস আমদানি হলে পরিবহন খাতে দ্রুত শৃঙ্খলা আসবে।’</p> <p>বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টারস অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আগামী বাজেটে রিকন্ডিশন্ড বাস আমদানিতে নীতি সহায়তা দেওয়া হলে রাজধানীর গণপরিবহনে সুব্যবস্থা আসবে। সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থায়ও আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। এসংক্রান্ত আমাদের আবেদন ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পৌঁছে দিয়েছি। আমরা মনে করি, দেশের মানুষকে ভালো রাখার স্বার্থে এই দাবি বিবেচনা করা উচিত।’</p> <p>বারভিডার আবেদনে বলা হয়েছে, ‘যানজট কমাতে হলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে হবে। তবে সে জন্য বিকল্প যানবাহন প্রয়োজন। সে জন্য সব শ্রেণির মানুষের চলাচলের উপযোগী বেশি আসনের আধুনিক বাস সার্ভিস চালু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাপান থেকে ৪৫ থেকে ৬০ আসনের নতুন বাস আমদানিতে গড়ে এক কোটি ৫০ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা ব্যয় হবে। রিকন্ডিশন্ড একই গাড়ি জাপান থেকে আনতে ব্যয় হবে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ব্যবহার হয়েছে—এমন অত্যাধুনিক রিকন্ডিশন্ড বাস জাপান থেকে আমদানির সুযোগ রয়েছে। গণপবিরহনব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বাণিজ্যিকভাবে এই গাড়িগুলো আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে দেশে অনেক নতুন বাস আমদানি হবে।’</p> <p>উন্নত বিশ্বে অনেকের ব্যক্তিগত গাড়ি থাকার পরও উন্নত মানের বাস সার্ভিস থাকায় সেগুলোতে আগ্রহ নিয়ে চলাচল করে। বাংলাদেশেও আধুনিক সুবিধার বাস সার্ভিস চালু হলে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি গ্যারেজে রেখে সেগুলোতে যাতায়াত করতে আগ্রহী হবে। ফলে বিশেষত রাজধানী ঢাকার সড়কে যানবাহনের চাপ কমবে।</p> <p>রাজধানীর মিরপুর, মতিঝিল, বসুন্ধরা, বারিধারা, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট এলাকা—সর্বত্র গণপরিবহনে এক চিত্র। পর্যাপ্ত বাসের অভাবে সাধারণ মানুষ গাদাগাদি করে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে চলাচল করছে। অধিকাংশ যাত্রীরই বক্তব্য, ভালো বাস সার্ভিস চালু হলে তাতে ভ্রমণে সব শ্রেণি-পেশার মানুষই আগ্রহী হবে। লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িও তুলনামূলক কম বের হবে। তাতে করে যানজটমুক্ত সড়কে স্বস্তিতে চলাচল করা সম্ভব হবে।</p> <p>মিরপুর ১০ নম্বরের বাসিন্দা আমেনা রহমান রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা দিয়ে চলাচল করা ট্রাস্ট বাস সার্ভিসের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘এই বাসগুলোর মান মোটামুটি। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকা সত্ত্বেও বারডেম হাসপাতালে অসুস্থ মাকে দেখতে গত পাঁচ দিনই এই বাসে আসা-যাওয়া করেছি। আমি মনে করি, সব রুটে ভালো বাস সার্ভিস থাকলে সব শ্রেণির মানুষই বাসে যাতায়াত করতে উৎসাহিত হবে।’</p> <p>এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যানজট কমাতে বেশি সিট আছে এমন আধুনিক বাস সার্ভিস বাংলাদেশে প্রয়োজন। এসব পরিবহন চলাচলে জায়গা কম লাগবে। আবার বেশি যাত্রী উঠতে পারবে। সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তা দেওয়া হলে কম খরচে এসব বাস আমদানি করা যাবে। কম বিনিয়োগে ভালো ব্যবসা করার সুযোগ থাকলে অনেকেই এসব বাস আমদানিতে আগ্রহী হবে।’</p> <p>সম্প্রতি বারভিডা নেতাদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, বেশি সিটের আধুনিক বাস আমদানি করে রাজধানীতে নামানো হলে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার ছেড়ে এসবে চলাচল করবে। এতে যানজট অনেকটা কমবে। পরিবহন খাতেও সুব্যবস্থা আসবে। সাধারণ মানুষের চলাচলের উপযোগী পরিবহন আমদানিতে আগামী বাজেটে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হবে।</p>