<p>দাম্পত্য জীবন সুখময় করতে চাইলে স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তার অধিকার বুঝিয়ে দিতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করে। (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)</p> <p>নারীদের অধিকার সংরক্ষণ এবং তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশি গুরুত্ব দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারীদের ব্যাপারে আমি তোমাদের সদাচরণের উপদেশ দিচ্ছি। তোমরা আমার এই উপদেশ গ্রহণ করো। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৩১; মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৮)</p> <p><strong>স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা</strong></p> <p>স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা খুব নিচু স্বভাবের পরিচায়ক। আবদুল্লাহ ইবনে জামআ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন নিজের স্ত্রীকে গোলামের মতো মারধর না করে। অথচ সেই স্ত্রীর সঙ্গেই দিনের শেষভাগে শয্যা গ্রহণ করবে। (বুখারি, হাদিস : ৫২০৪ )</p> <p><strong>স্ত্রীকে শাসনের তিন ধাপ</strong></p> <p>স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তবে নিরসনকল্পে প্রথম পর্যায়ে ইসলামের নির্দেশনা হলো—স্ত্রীর কোনো বিষয় স্বামীর কাছে খারাপ লাগলে দেখতে হবে ভালো লাগার মতো অন্য কোনো গুণ তার মধ্যে আছে কি না? এর পরও যদি স্বামী মনে করে যে স্ত্রীর মধ্যে বাস্তবেই এমন কিছু দোষ আছে, যেগুলো সহ্য করার মতো নয়, বরং সংশোধন করা অপরিহার্য, তখন স্বামীর অধিকার আছে স্ত্রীকে সংশোধন করার। পবিত্র কোরআনে সংশোধনের পদ্ধতির কথা তুলে ধরা হয়েছে এভাবে—‘স্ত্রীদের মধ্যে যারা অবাধ্য হবে বলে আশঙ্কা করো, তাদের সদোপদেশ দাও। (সংশোধন না হলে) তারপর তাদের শয্যা বর্জন করো। (এর পরও সংশোধন না হলে) তাদের মৃদু প্রহার করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩২)</p> <p>অর্থাৎ কোনো স্ত্রীকে অবাধ্য হতে দেখলে প্রথমে তাকে নরমভাবে মার্জিত ভাষায় ভালোবাসা ও দরদপূর্ণ কথা দিয়ে বোঝাবে। এটা সংশোধনের প্রথম পর্যায়।</p> <p>এতেই যদি বোধোদয় হয়, তবে বিষয়টি এখানেই মিটে গেল। পক্ষান্তরে যদি ওয়াজ-নসিহত ও বুঝিয়ে-শুনিয়ে কাজ না হয়, তখন সংশোধনের দ্বিতীয় পর্যায়ে স্ত্রীকে সতর্ক করার জন্য নিজে পৃথক বিছানায় শোবে। স্ত্রীর যদি বিবেক থাকে, তাহলে এতে তার টনক নড়বে এবং বিবাদটাও এখানেই শেষ হয়ে যাবে। তবে একেবারে কথার্বাতা ও সালাম-কালাম বন্ধ করা যাবে না। এমন আলাদা হওয়া জায়েজ নয়। (ইসলাহি খুতুবাত : ২/ ২১৬-২১৭)</p> <p><strong>স্ত্রীকে প্রহার করার সীমারেখা</strong></p> <p>স্ত্রীকে শোধরাবার ভদ্রোচিত দ্বিতীয় পন্থা যদি কাজে না আসে, তাহলে সর্বশেষ তৃতীয় পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আর তা হলো, তাকে মারধর করা। কিন্তু এই মারধর কী ধরনের হবে? কতটুকু মারধর করা যাবে? এ সম্পর্কে বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, (প্রয়োজন হলে) নারীদের এমনভাবে মারবে, যেন শরীরে মারধরের চিহ্ন কিংবা জখম সৃষ্টি না হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৫১)</p> <p>অন্য কোনো উপায়ে যদি তাকে শোধরানো সম্ভব না হয়, তখন একেবারে শেষ আশ্রয় হিসেবে মারধরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেও আবার বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মারের উদ্দেশ্য হবে তাকে সংশোধন করা, তাকে কষ্ট দেওয়া উদ্দেশ্য হতে পারবে না। তাই এমন বেশি মারধর করা উচিত হবে না—যাতে শরীরে দাগ বসে পড়ে।</p> <p><strong>স্ত্রীদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আচরণ</strong></p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা জীবনে একবারের জন্যও কোনো স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেননি, বরং ঘরে প্রবেশকালে তাঁর পবিত্র চেহারায় মুচকি হাসির স্নিগ্ধতা লেগেই থাকত। বোঝা গেল হাসিমুখে ঘরে প্রবেশ করা সুন্নত। রুদ্রমূর্তি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সুন্নত নয়, বরং তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শপরিপন্থী। (ইসলাহি খুতুবাত : ২/ ২১৬-২১৭)                  </p> <p> </p> <p><em>লেখক : ইমাম ও খতিব</em></p> <p><em>মসজিদুল আমান, গাঙ্গিনারপাড়, মোমেনশাহী</em></p>