<p>দেশের বরেণ্য আলেম ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) গত (২৯ অক্টোবর) ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর মজলিসে শুরার সদস্য এবং আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুমের মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস।</p> <p>মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন ধুরুং গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে নাজিরহাট বড় মাদরাসায় তিনি কোরআন হিফজ করেন এবং একই মাদরাসায় হিদায়াতুন্নাহু জামাত (মাধ্যমিক) পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অতঃপর উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি জামিয়া আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ভর্তি হন। ১৯৭৪ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। তিনি বরেণ্য মনীষীদের কাছে শিক্ষা ও সান্নিধ্য লাভ করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন—মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, মাওলানা শাহ আবদুল ওয়াহহাব, মাওলানা আবদুল আজিজ, মাওলানা আহমাদুল হক, মাওলানা আবুল হাসান, মাওলানা মুহাম্মদ হামেদ, আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)।</p> <p>শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবস্থিত কৈয়গ্রাম মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। ওই মাদরাসায় এক বছর শিক্ষকতার পর বাবুনগর মাদরাসায় যোগদান করেন। এরপর ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ জুলাই তিনি ঢাকার খিলগাঁওয়ে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন। আমৃত্যু তিনি অত্র মাদরাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।</p> <p>১৯৭৮ সালে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে তিনি ‘ইসলামী আন্দোলন পরিষদ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। কাদিয়ানিবিরোধী আন্দোলন ও খতমে নবুয়ত আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুয়ত বাংলাদেশ’-এর তিনি মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন।</p> <p>মাখজানুল উলুম ছাড়াও তিনি একাধিক মাদরাসার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর কয়েকটি হলো জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যিন, যুক্তরাজ্য; আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া নূরুল উলুম; তাজবিদুল কুরআন মাদরাসা, শাহনগর, চট্টগ্রাম; আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম, নূর নগর, ময়মনসিংহ ইত্যাদি। এ ছাড়া তিনি বহু মাদরাসার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ইসলামী শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা রাখেন।</p> <p>মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী একাধিক গ্রন্থও রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, আখলাকে রাসুল (সা.), উজ্জ্বল নক্ষত্র, কাদিয়ানী ফিতনা ও মুসলিম মিল্লাতের অবস্থান, কুরবানীর আহকাম, গুলশানে নুর, আসমানে ইলম কি চাঁন্দ দরখসান্দে সিতারে, তাজকেরায়ে খতীবে আজম ইত্যাদি। গত সোমবার (২৯ নভেম্বর) বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। আল্লাহ যেন মরহুমের জীবনের যাবতীয় ভুলত্রুটি ক্ষমা করেন এবং তাঁকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করেন। আমিন।</p> <p> </p>