<p>সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর জাবালে ওমর হিলটন কনভেনশনাল হোটেলে চলছে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর (মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ) ‘কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধ’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মন্ত্রী, ইসলামিক স্কলার, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ বিশ্বের ১৩৯টি দেশের হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন।</p> <p>স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বাদশাহর পক্ষ থেকে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বাদশাহর উপদেষ্টা ও মক্কার গভর্নর খালেদ আল ফায়সাল। কনফারেন্সের উদ্বোধনী পর্বে আরো বক্তব্য দেন চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ রমজান আহমদ কাদরুফ।</p> <p>এ ছাড়া সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি ও সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রধান শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ, রাবেতা আল-আলমের মহাসচিব শায়খ ড. মুহাম্মাদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা, আরব আমিরাতের ফতোয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শায়খ আল্লামা আবদুল্লাহ বিন বাইহ, মিসরের মুফতি শায়খ ড. শাওকি আল্লাম। সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষে উদ্বোধনী পর্বে বত্তৃদ্ধতা করেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।</p> <p>বিকেল ৪টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বক্তব্য পেশ করেন বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে আগত প্রতিনিধিরা। আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ। তা ছাড়া রাবেতার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন বিশিষ্ট আলেম, মুফতি, শিক্ষাবিদ ও গবেষক আমন্ত্রিত হয়েছেন।</p> <p>বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আছেন শোলাকিয়া ঈদগাহর ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা কামাল উদ্দীন জাফরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম আবদুল কাদের, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হক নদভী, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া চট্টগ্রামের মুহাদ্দিস মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, মাহাদ আন-নিবরাসের পরিচালক মাওলানা জিয়াউল হক, জমিয়তে আহলে হাদিসের সভাপতি শায়খ শামসুল হক খান, বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব ইসলামিক থটের নির্বাহী পরিচালক ড. আবদুল আজিজ, বিশিষ্ট লেখক আলেম মাওলানা রুহুল আমিন সাদী প্রমুখ। </p> <p>সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের (২৮ মে) প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ সেন্টার ফর ন্যাশনাল ডায়ালগের চেয়ারম্যান ড. আবদুল আজিজ বিন মুহাম্মাদ আস সুবাইল। ‘মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধ : অর্থ ও নির্দেশনা’ বিষয়ে মতবিনিময় করেন আলোচকরা। ‘সুন্নাহর বর্ণনায় মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধ’ বিষয়ে দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্টের ইসলামবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আবু বকর আবদুল্লাহ দাকুরি।</p> <p>সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের মহাসচিব শায়খ ড. ফাহাদ বিন সাদের সভাপতিত্বে তৃতীয় অধিবেশনে ‘ইসলামের ইতিহাস, ফিকহের নির্দেশনা ও আধুনিক যুগে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধ’ বিষয়ে আলোচনা হয়। চতুর্থ অধিবেশন ব্রুনেই দারুস সালামের সুলতান শরিফ আলী ইসলামিক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য শায়খ ড. আলহাজ নুর ইরফানের সভাপতিত্বে ‘মুসলিম সমাজে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধের প্রচার-প্রসার’ বিষয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>তৃতীয় দিনের (২৯ মে) প্রথম অধিবেশন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উলামা পরিষদের মহাসচিব ড. আব্বাস শাওমানের সভাপতিত্বে ‘মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধ : আধুনিক সভ্যতার চাহিদা’ প্রতিপাদ্য বিষয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ‘ধর্মীয় বহুত্ববাদ ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ’ এবং ‘আধুনিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে দ্বিপক্ষীয় মূল্যবোধ’ নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন।</p> <p>শেষ অধিবেশনে বক্তব্য দেন চেচনিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ সালাহ মুজিফ, আলজেরিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ড. ইউসুফ মুহাম্মাদ বালামাহদি, রাবেতার মহাসচিব ড. মুহাম্মাদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা। আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পর ‘শুয়ুখ ইকরা’র আন্তর্জাতিক কাউন্সিল এবং কোরআন ইনস্টিটিউটের আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।</p> <p>চতুর্থ দিনের (আজ ৩০ মে) প্রথম অধিবেশনে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইউনিভার্সিটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ড. আবদুল আজিজ বিন ইবরাহিমের সভাপতিত্বে ‘সিরাতে নববির খেদমের মানোন্নয়ন : প্রক্রিয়া ও উপায়’ শীর্ষক বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্নাহর সেবায় ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অবদান ও নতুন পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। দ্বিতীয় অধিবেশন ইন্দোনেশিয়ার ড. যায়েদ আলী গাইলির সভাপতিত্বে ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব কোরআন অ্যান্ড সুন্নাহর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ পেশ করা হবে। এতে সংস্থার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি ও সহায়তা গ্রহণ এবং কোরআনের সার্বিক অলৌকিকত্ব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হবে।</p> <p>তৃতীয় অধিবেশন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব কোরআন অ্যান্ড সুন্নাহর সৌদি আরবের চেয়ারম্যান ড. আইমান রুশদির সভাপতিত্বে ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পবিত্র কোরআন পাঠদান’ এবং ‘কোরআনবিষয়ক পুরস্কার প্রদানের নীতিমালা’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ অধিবেশন বাহরাইন ইউনেসকোর উপদেষ্টা ড. সামির কাসেম ফাখরুর সভাপতিত্বে ‘পবিত্র কোরআনের সেবাকর্মের সার্বিক উন্নয়ন’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে। পঞ্চম অধিবেশনে মালয়েশিয়ার ইতকান সংস্থার পরিচালক ড. নাশওয়ান আবদুহ খালেদের সভাপতিত্বে ‘কোরআন ইনস্টিটিউটের গুণগত মান বৃদ্ধি’ বিষয়ে আলোচনা হবে।</p> <p>২৭ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চলবে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন। সম্মেলনের শেষ দিনে আসবে চার্টার অব মক্কা বা মক্কা ঘোষণা, যাতে শান্তি ও পরিমিতিবোধ প্রতিষ্ঠায় আয়োজিত এ সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরা হবে।</p>