<p>প্রয়োজনভিত্তিক হালাল ও টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে বিনিয়োগ করে দেশের শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংকের কাতারে উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম শরিয়াহভিত্তিক এই ব্যাংকটি দেশের সর্বোচ্চ আমানত ও বিনিয়োগ নিয়ে ৪০ বছরে পা রেখেছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণকারী এই ব্যাংক বিগত ৩৯ বছরে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এবং এসএমই বিনিয়োগে সর্বোচ্চ অর্থায়ন করেছে। ২০১২ সাল থেকে বিশ্বের শীর্ষ এক হাজার ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে। এই অবস্থান ক্রমাগত উন্নীত হচ্ছে। এখন বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই স্বপ্নের কথা জানান এই ব্যাংকার।</p> <p>ইসলামী ব্যাংকের প্রধান অর্জন কী জানতে চাইলে এমডি বলেন, ‘১৯৮৩ সালের ৩০ মার্চ মতিঝিলের একটি ছোট্ট জায়গায় আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। ৩৯ বছরে সব সূচকে আমরা বাংলাদেশের বৃহৎ ব্যাংকে পরিণত হতে পেরেছি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তার পরও আমরা দেশের সবচেয়ে কমপ্লায়েন্ট ব্যাংক। সব সময় চেষ্টা করি কমপ্লায়েন্ট থাকার জন্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব টেকসই ব্যাংকের তালিকা করেছে, এর মধ্যে আমরা শীর্ষস্থানে আছি। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের কোটি কোটি মানুষের আস্থা অর্জন। তা না হলে মানুষ তার কষ্টে অর্জন করা টাকা আমাদের ব্যাংকে রাখত না। আমাদের ডিপোজিটের পোর্টফোলিও দেখলেই তা বোঝা যায়।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘বিশ্বে শরিয়াহভিত্তিক যে সেরা ৫০০ ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে এর মধ্যে আমরা সেরা ইসলামী ব্যাংকের স্বীকৃতি পেয়েছি। ২০১২ সাল থেকে আমরা বিশ্বের সেরা এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে আছি। প্রতিবছর আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি। ৪০ বছরে আমরা ‘ম্যাচিউর ব্যাংকে’ পরিণত হয়েছি। এখন আমাদের আরো টেকসই হতে হবে। আরো রিজনেবল ব্যাংকিং করতে হবে। আরো রেসপনসিবল ব্যাংকিং আমাদের করতে হবে।’</p> <p>ইসলামী ব্যাংক কতটা দায়িত্বশীল ব্যাংকিং করছে জানতে চাইলে ব্যাংকের এই শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ‘আমাদের আমানতকারীরা চোখ বুঝে এই ব্যাংকে তাদের সঞ্চয়ের টাকা রাখছে। তাদের আমানতকে আমরা কতটা দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করতে পারছি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মানুষের প্রতি এবং আমানতকারীদের প্রতি আমাদের যে প্রতিশ্রুতি সেটা আমরা রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’</p> <p>করোনাকালে গ্রামে ফেরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে আরো অর্থায়নের কথা জানালেন মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও আমরা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা এরই মধ্যে ২৬ হাজার গ্রামে গিয়েছি। আমরা এটাকে আরো সম্প্রসারণ করব। করোনায় যারা চাকরি হারা হয়ে গ্রামে গেছে তাদেরকে আমরা ঋণ দিতে চাই। শহরে যে মানুষগুলো দক্ষতা অর্জন করে গ্রামে গেছে তারা অর্থ সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তাদেরকে মাইক্রেফিন্যানসের আওতায় গ্রামে কিছু করতে সহায়তা করছি। যারা কৃষিপণ্যের ব্যবসা করছে, যারা কৃষিভিত্তিক কারখানা গড়ে তুলেছে, আমরা তাদের সহায়তা দেব।’</p> <p>ইসলামী ব্যাংকিং জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে এই ব্যাংকার বললেন, ‘সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিং জনপ্রিয় হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতির কারণেই মানুষের আগ্রহ বেশি। এখানে পদ্ধতিটাই এমন যে, আমি কাউকে ক্যাশ টাকা দিতে পারি না। কিন্তু মেশিনারি কিনে দিচ্ছি, ট্রান্সপোর্ট কিনে দিচ্ছি।’</p> <p>প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনতে ইসলামী ব্যাংক বহু বছর ধরে প্রধান ভূমিকা পালন করছে বলে জানালেন মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আহরণ বাড়িয়ে জাতীয় রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে এই ব্যাংক। ২০২১ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫১ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স আহূত হয়েছে, যা দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী রেমিট্যান্সের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ইসলামী ব্যাংক প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহকের কাছে গড়ে ১৩৮ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পৌঁছে দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপের মাধ্যমে রেমিট্যান্স গ্রহণকারী নিজেই সরাসরি রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া গ্রাহকরা দেশের বাইরে থেকেই ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারেন।</p> <p>তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বিনিয়োগ কার্যক্রমে মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনকল্যাণসহ সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ইসলামী ব্যাংক অগ্রাধিকার দেয়। জাতীয় অর্থনীতির প্রধান দুই স্তম্ভ প্রবাসী রেমিট্যান্স ও তৈরি পোশাক শিল্প উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক পথিকৃৎ। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট ব্যাংকিং ঋণ বা বিনিয়োগের ৯ শতাংশ এবং ব্যাংকিং সেক্টরের সর্বোচ্চ।</p>