<p>আব্বাসউদ্দীন আহমদ একজন প্রখ্যাত বাংলা লোকসংগীত গায়ক। তিনি ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জাফর আলী আহমদ ছিলেন তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালতের উকিল। বলরামপুর স্কুলে আব্বাসউদ্দীনের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯১৯ সালে তুফানগঞ্জ স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা এবং ১৯২১ সালে কোচবিহার কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তখন থেকেই তিনি লেখাপড়া ছেড়ে গানের জগতে নিমগ্ন হন।<br /> আধুনিক গান, স্বদেশি গান, ইসলামী গান, পল্লীগীতি, উর্দু গান--সবই গেয়েছেন তিনি, কিন্তু পল্লিগীতিতেই তাঁর মৌলিকতা ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। তিনি কোনো ওস্তাদের কাছে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালিম নিয়ে গান শেখেননি। যাত্রা, নাটক ও স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শুনে তিনি গানের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং নিজ চেষ্টায় গান গাওয়া রপ্ত করেন। পরে কলকাতায় অল্প সময়ের জন্য তিনি ওস্তাদ জমিরুদ্দীন খাঁর কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নেন।<br /> রংপুর ও কোচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া-ক্ষীরোল-চটকা গেয়ে আব্বাসউদ্দীন প্রথমে সুনাম অর্জন করেন। পরে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালাগান ইত্যাদি পল্লীগানের নানা শাখার গান গেয়ে ও রেকর্ড করে তিনি জনপ্রিয় হন। তাঁর দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লীগানের সুর যেভাবে ফুটে উঠত, অন্য কোনো গায়কের কণ্ঠে তেমনটি হতো না। এ ক্ষেত্রে তিনি আজও অদ্বিতীয়। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্্‌দীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামী ভাবধারায় রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন।<br /> আব্বাসউদ্দীনের গান প্রথম রেকর্ড করে ১৯৩০ সালে হিজ মাস্টার্স ভয়েস। পরে মেগাফোন, টুইন, রিগ্যাল প্রভৃতি কম্পানিও তাঁর বহু গান রেকর্ড করে। গ্রাম-গঞ্জ-শহরের আসর-অনুষ্ঠান-জলসায় গান গেয়ে এবং গ্রামোফোনে গান রেকর্ড করে আব্বাসউদ্দীন বাংলার সংগীতবিরোধী মুসলমান সমাজকে সংগীতানুরাগী করে তোলেন। ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ (১৯৬০) তাঁর রচিত একমাত্র গ্রন্থ।<br /> সংগীতে অবদানের জন্য আব্বাসউদ্দীন আহমদ মরণোত্তর প্রাইড অব পারফরম্যান্স (১৯৬০), শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯) এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (১৯৮১) ভূষিত হন। তাঁর সন্তান ফেরদৌসী রহমান এবং মুস্তাফা জামান আব্বাসীও গান গেয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন।<br /> ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পল্লীগানের এই মহান সম্রাট মৃত্যুবরণ করেন।</p> <p>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল<br /> [আরো জানতে বাংলাপিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় আব্বাসউদ্দীন আহমদ সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>