<p>নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমানের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে আজ বিকেল ৪টায় বন্দরের নাসিম ওসমান উচ্চ বিদ্যালয়ে মিলাদ ও দোয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন এতিমখানা, মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেও পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর ছোট ভাই ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার শ্রমিক ও এতিমদের নিয়ে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করবেন। </p> <p>এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও দোয়ার আয়োজন করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় অংশ নেওয়ার আকুল আবেদন জানানো হয়েছে।</p> <p>২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের দেরাদুনে চিকিত্সাধীন অবস্থায় নাসিম ওসমানের মৃত্যু হয়। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি শুধু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধই করেননি, ১৯৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রতিরোধ যুদ্ধেও।</p> <p>নাসিম ওসমান ১৯৫৩ সালের ৩১ জুলাই নারায়ণগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) প্রয়াত এ কে এম শামসুজ্জোহা ছিলেন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তাঁর মা মরহুম বেগম নাগিনা জোহাও ছিলেন ভাষাসৈনিক। সদালাপী নাসিম ওসমান ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান।</p> <p>ছাত্রজীবনে পরিবারের ভূমিকায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নাসিম ওসমান আওয়ামী লীগের রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অকুতোভয় বীর সেনানী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নাসিম ওসমান পালিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে তিনি গেরিলা যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরে এসে যুদ্ধ করেন।</p> <p>১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে নাসিম ওসমানের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, যে অনুষ্ঠানে তোলা ছবিটি ছিল শেখ কামালের জীবনের তোলা শেষ আলোকচিত্র। পরদিন তথা ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর একটি অনুষ্ঠান থাকায় নাসিম ওসমানের অনুরোধ সত্ত্বেও শেখ কামাল ওই রাতে নারায়ণগঞ্জে আসেননি। তিনি নারায়ণগঞ্জে এলে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়তো অন্যভাবেও রচিত হতো। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিজের নবপরিণীতা স্ত্রীকে রেখে পরিবারের সব নারী সদস্যদের অলংকার সংগ্রহ করে নাসিম ওসমান চলে যান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হলেও শুধু তত্কালীন সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সুরক্ষার কথা ভেবে কৌশলগত কারণে আশির দশকের শুরুতে নাসিম ওসমান যোগ দেন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে। তিনি আমৃত্যু জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি যথাক্রমে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে মোট চারবার জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনের  সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। </p>