১. উদ্দীপকটি পড়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মারুফ ইতিহাস বই পড়ে জানতে পারে কোনো এক দেশের ছাত্র-জনতা নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য এবং নিজ ভাষায় শিক্ষা অর্জনের অধিকার রক্ষার জন্য বুকের তাজা রক্ত উত্সর্গ করেছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথ উত্তাল করেছিল। পরবর্তী সময়ে এ আন্দোলন থেকেই ওই দেশটির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম চেতনা লাভ করেছিল।
ক. ‘স্মৃতির মিনার’ কবিতাটি কে রচনা করেন?
খ. ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ এর কর্মসূচি ব্যাখ্যা করো।
গ. মারুফের পড়া বইটির আন্দোলনের সঙ্গে মিল রেখে পাঠ্য বইয়ের এ ধরনের একটি আন্দোলনের সঙ্গে সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. ‘এ ধরনের একটি আন্দোলন বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর দরবারে পরিচিত করে দিয়েছে।’—বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :
ক. ‘স্মৃতির মিনার’ কবিতাটি রচনা করেন কবি আলাউদ্দীন আল আজাদ।
খ. ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় নতুন করে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ পুনর্গঠিত হয়। ১১ মাচ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ওই দিন সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এ কর্মসূচি পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ. মারুফের বইটির সঙ্গে পাঠ্য বইয়ের বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে। মারুফ একটি ইতিহাস বই পড়ে জানতে পারে কোনো এক দেশের ছাত্র-জনতা নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য এবং নিজ ভাষায় শিক্ষা অর্জনের অধিকার রক্ষার জন্য বুকের তাজা রক্ত উত্সর্গ করেছিল। পাঠ্যপুস্তকের আলোকে এখানে ভাষা আন্দোলনের চিত্র ফুটে উঠেছে।
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হলে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র্র প্রতিবাদ শুরু হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ওঠে, লেখালেখি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারিসহ সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১১ মার্চ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিন সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আম তলায় (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখ চত্বর) একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে ১০ জন করে মিছিল শুরু করা হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিক থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে, মিছিলে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে জব্বার, রফিক, সালামসহ আরো অনেকে শহীদ হন এবং অসংখ্য লোক আহত হন। ১৯৪৭ সালে সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালে প্রতিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপান্তরিত হলো। এ আন্দোলন বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ও স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তোলে। উল্লিখিত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে মারুফের বইটির আন্দোলনের সঙ্গে পাঠ্য বইয়ের পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. মারুফের বইয়ের বর্ণনায় বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের চিত্র ফুটে উঠেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভাষা আন্দোলন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে। ভাষাকেন্দ্রিক এ ঐক্যই জাতীয়তাবাদের মূলভিত্তি রচনা করে, যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৩ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে দেশব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে নগ্ন পায়ে হেঁটে ফুল অর্পণ করে আমরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। বাঙালি জাতির কাছে এটি একটি শোকের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেসকো বাংলাদেশের ২১ ফেব্রুয়ারির শহীদ দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। পৃথিবীতে ছয় হাজারের বেশি ভাষা রয়েছে। এ দিন পৃথিবীর সব ভাষার মানুষ অন্য যেকোনো ভাষা বা সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানায় সেই সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য জনগণের আন্দোলন ও রক্তদানের ইতিহাস পৃথিবীর জাতিগুলোর কাছে উপস্থাপিত হওয়ার সুযোগ হলো। পৃথিবীর সব জাতি ২১ ফেব্রুয়ারি নিজ নিজ ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করার সুযোগ পেয়েছে। অতএব বলা যায়, এ ধরনের আন্দোলন বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর দরবারে পরিচিত করে দিয়েছে।
২. উদ্দীপকটি পড়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক জোটগুলোর প্রশংসা করেন এবং মনে করেন এ ধরনের জোট আগেও ছিল। আমাদের ভাষা আন্দোলনের পরের বছরই ২১ দফা প্রণয়ন করে চারটি দল নিয়ে একটি ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। জনগণ ২১ দফাকে তাদের স্বার্থ রক্ষার সনদ বলে বিবেচনা করত। মনোয়ার সাহেবের দাদাও ওই ফ্রন্টের একজন সমর্থক ছিলেন।
ক. ‘কবর’ নাটকটি কে রচনা করেন?
খ. ‘শহীদ, সালাম, বরকত আমাদের প্রেরণা’—বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকের ফ্রন্টটির সঙ্গে মিলে পাঠ্যপুস্তকের এমন একটি ফ্রন্টের গঠন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. এ ধরনের একটি ফ্রন্ট নির্বাচনে প্রমাণ করে ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স’—বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : ক. ‘কবর’ নাটকটি রচনা করেন ড. মুনীর চৌধুরী।
খ. ১৯৪৭ সালে সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫২ সালে প্রতিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হলে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র্র প্রতিবাদ শুরু হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ওঠে, লেখালেখি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারিসহ সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১১ মার্চ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিন সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখ চত্বর) একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে ১০ জন করে মিছিল শুরু করা হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিক থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে, মিছিলে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে জব্বার, রফিক, সালামসহ আরো অনেকে শহীদ হন এবং অসংখ্য লোক আহত হন। রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে নিজেদের জীবন উত্সর্গ করে তাঁরা বাঙালিদের মধ্যে চেতনার একটি প্রেরণা সৃষ্টি করেন। এ আন্দোলন বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ও স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তোলে। তাই বলা যায়, শহীদ সালাম, বরকত আমাদের প্রেরণা।
গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় একটি ফ্রন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেখানে বলা হয় ভাষা আন্দোলনের পরের বছর ২১ দফা প্রণয়ন করে চারটি দল নিয়ে একটি ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। পাঠ্য বইয়ে আমরা অনুরূপ একটি ফ্রন্টের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটানোর লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২১ দফা প্রণয়ন করে চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল চারটি হলো আওয়ামী লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জনগণ যুক্তফ্রন্টের ২১ দফাকে তাদের স্বার্থ রক্ষার সনদ বলে বিবেচনা করে। উদ্দীপকের ফ্রন্টটিতেও জনগণ ২১ দফাকে তাদের স্বার্থ রক্ষার সনদ বলে বিবেচনা করত। উদ্দীপকের ফ্রন্টটির সঙ্গে আমরা পাঠ্য বইয়ের যুক্তফ্রন্টের মিল খুঁজে পাই। বাংলাদেশে এখনো রাজনৈতিক জোট বিদ্যমান রয়েছে। তাই বলা যায়, যুক্তফ্রন্ট রাজনৈতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঘ. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শাসকদল মুসলিম লীগ দীর্ঘদিন নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার গঠনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। মুসলিম লীগ বারবার পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনের তারিখ পেছাতে থাকে। অবশেষে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পূর্ব বাংলায় সাধারণ নির্বাচনের কথা ঘোষণা করা হয়। মুসলিম লীগকে মোকাবিলা করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, কৃষক-শ্রমিক-জনতা পার্টি, নেজামে ইসলামী ও গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি ও মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি লাভ করে। বাকি আসন অন্যরা পায়। এ নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতায় পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব ও প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার রায় প্রদান করে পূর্ব বাংলায় বাঙালিদের শাসন দেখতে তারা যে আগ্রহী সেটাই প্রকাশিত হয়। যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক সরকার গঠনের রায় লাভ করে জনগণই যে ‘সকল ক্ষমতার উত্স’ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন তা প্রমাণ করে। তারাই এ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে প্রত্যাখ্যান করে এবং পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগের শাসনের অবসান ঘটায়।