মো. তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বা এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়েছেন। নিজ নির্বাচনী এলাকায়ও কায়েম করেছিলেন দুর্নীতি-সন্ত্রাসের রাজত্ব। ব্যতিক্রম ছিল তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি সংস্থা। দুটি সংস্থার প্রাত্যহিক কাজে তাজুল হস্তক্ষেপ করতেন না।
ঘুষের খনি ছিল ওয়াসা-এলজিইডি
- তাজুল : রাজনীতি মানেই দুর্নীতি—চতুর্থ পর্ব
বিশেষ প্রতিনিধি

তবে শুধু একটি সোনার খনিতেই সন্তুষ্ট থাকার লোক নন তাজুল। এলজিইডির ঘুষের টাকায় তাজুলের সব কিছু ঠিকঠাক চললেও তাঁর লোভ ছিল ওয়াসার দিকেও। ওয়াসার রাজত্ব ছিল তাকসিম এ খানের হাতে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা একক কর্তৃত্ববলে তাঁকে ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ দেন। এরপর আওয়ামী লীগের মতোই জোর করে ওয়াসার এমডি ছিলেন তাকসিম। ইচ্ছামতো লুটপাট করেছেন। তাকসিমের খুঁটির জোর এতই শক্ত ছিল যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীদেরও তিনি পাত্তা দিতেন না। তাজুল এটা বুঝতে পেরেই তাঁর সঙ্গে ঘুষের সমঝোতা করেন। তাজুল জানতেন, তাকসিমের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে লাভ নেই; বরং যা পাওয়া যায় তাই ‘লাভ’।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যখন খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি ওয়াসার এমডিকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার বাধায় সেই চিন্তা থেকে সরে আসেন। তাকসিম খান হয়ে ওঠেন আরো দুর্বিনীত। তাজুল চতুর মানুষ। অতীতের মন্ত্রীদের তাকসিমকেন্দ্রিক তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি শিক্ষা নিয়েছিলেন। তাজুল স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হলে তাকসিম খানকে ডেকে নিয়ে আসেন, তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁঁছান। তাকসিমও তাঁর ঝামেলাহীন লুটপাটের জন্য তাজুলের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহী ছিলেন। তিনি তাজুলকে আশ্বস্ত করেন যে ওয়াসার পক্ষ থেকে তাজুলকে এককালীন উপঢৌকন দেওয়া হবে। যেমনটি বলা হলো তেমনভাবে কাজও হলো। তাকসিম তাজুলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনটি বাড়ি উপঢৌকন দেন। তাকসিম যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন ও তাঁর পরিবার সেখানে বসবাস করত; তাজুল ইসলাম তাঁকে অনুরোধ করেন যেন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর জন্য কিছু সম্পদ কিনে দেওয়া হয়। তাকসিম এই শর্তে রাজি হন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় তিনটি বাড়ি রয়েছে তাজুল ইসলামের। এই বাড়িগুলো কেনা হয়েছে তাকসিম খানের তত্ত্বাবধানে। এ ছাড়া তাকসিম তাজুলের স্ত্রী ও সন্তানদের কানাডায় বাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি ওয়াসা থেকে ঘুষ নিতেন। জানা গেছে, ওয়াসার ফাইল গেলেই দ্রুত স্বাক্ষর করতেন তাজুল।
তাকসিম ছিলেন তাজুলের বিদেশে বিনিয়োগের প্রধান হাতিয়ার। দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় বাড়ি, সম্পদ কেনা ও বিনিয়োগের কাজে তত্ত্বাবধান করতেন তাকসিম। তাজুল মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তাকসিম হয়ে উঠেছিলেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে। এমনকি ওয়াসার তৎকালীন চেয়ারম্যান যখন তাকসিম খানের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, তখন তাজুল চেয়ারম্যানকে মুহূর্তের মধ্যে সরিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেননি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এলজিইডি ও ওয়াসার মাধ্যমে তাজুল দুর্নীতির নবরূপ দিয়েছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে তাজুলের সম্পত্তি জব্দ করা হলেও তাঁর বিদেশে সম্পদ উদ্ধারে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তা না করা হলে তাজুলের দুর্নীতির গভীরতা ও অবৈধ সম্পদ সম্পর্কে কখনোই জানা যাবে না।
সম্পর্কিত খবর

ঐক্যবদ্ধ না থাকলে এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে
নিজস্ব প্রতিবেদক

দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, আমরা যদি সতর্ক না থাকি তাহলে এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে আইনজীবীদের ভূমিকা : আলোচনা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা দেন বিএনপির মহাসচিব।
দেশের মানুষ সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন কী, সেটি বোঝে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই সংস্কার হোক।
নির্বাচনের জন্য আর দেরি করা অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের জন্য সঠিক হবে না মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে ডেডলাইন, এর পরে হলে আপনি যে সম্মান নিয়ে এসেছেন, পুরো বিশ্বে আপনার যে সম্মান, সেই সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।’
সভায় প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গত এক বছরে বাংলাদেশের জন-আকাঙ্ক্ষার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং পুরা জিনিসটিই আপনি সংস্কারের নামে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে এত বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন; শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হচ্ছে সংস্কারের নামে অপসংস্কার তৈরি করে দিয়ে যাবেন।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঐকমত্য দেখি না, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেখি না। নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে বিদায়ের চিন্তা করুন।
সভার শুরুতেই একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

পুলিশের দাবি গোপন বৈঠক
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ গ্রেপ্তার ২২ জন কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গোপন বৈঠকের ঘটনায় করা মামলায় সন্দেহভাজন ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর এক মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তাকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, গত ৮ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই কনভেনশন সেন্টারে গোপন বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে অন্তত ৩০০-৪০০ লোক অংশ নেওয়ার তথ্য মেলে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় গত ১৩ জুলাই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ভাটারা থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ‘প্রিয় স্বদেশ’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’, ‘শেখ হাসিনা’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’সহ একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয়। এই বৈঠকের অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন সেনাবাহিনীর মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিক।
পুলিশ বলছে, গত ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানার একটি বাসা থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন একই এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিনকে (শম্পা)। তাঁর স্বামী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ১৩ জুলাই ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়।
মেজর সাদিক নামের একজন আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন—এমন সংবাদের বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা।
ডিবি জানায়, সেখানকার অনেকের বক্তব্য অনুযায়ী, দিনজুড়ে সেখানে ব্যানারবিহীন এক ধরনের ‘রাজনৈতিক তৎপরতা’ চলছিল। এরই অংশ হিসেবে ঢাকার বাইরে থেকেও লোকজন আনা হয়।

দর-কষাকষির বৈঠক শেষ
শুল্ক ২০ শতাংশেই সমাধান দেখছে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে উভয় দেশের বাণিজ্য দপ্তরের দর-কষাকষির বৈঠক শেষ হয়েছে বাংলাদেশ সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে। এটাই ছিল চূড়ান্ত আলোচনা। এতে শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২০ শতাংশের আশপাশে নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। বৈঠকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কূটনীতিকরাও অংশ নেন।
এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের ওপর আরো কিছু জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ফিলিপিন্স ১৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ২০ শতাংশের আশপাশে হতে পারে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন দূতাবাসের একটি সূত্র।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার অন্যতম কারণ ভিয়েতনাম উদাহরণ। ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি যেখানে ১২৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে তারা ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কে সমঝোতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ঘাটতি মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার, যা আগামী এক-দেড় বছরে দেড় বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
যদিও দেশটি বলছে, এক বছরের মধ্যে ছয় বিলিয়ন ডলার ঘাটতি শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। এ জন্য এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেসরকারি খাত থেকেও তুলা, সয়াবিন, গম ও ডাল আমদানির লক্ষ্যে একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।

জুলাই সনদ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রয়োজনে এ নিয়ে আবারও আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তবে এই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আর বিএনপি দাবি করেছে, সংস্কার প্রস্তাবের আইনি ভিত্তি দেওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২৩তম দিনের আলোচনার শুরুতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেন সংলাপের সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সংলাপে সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রধান এবং মৌলিক দায়িত্বটা রাজনৈতিক নেতাদের।
তিনি বলেন, সনদের খসড়া নিয়ে এরই মধ্যে আপনাদের পরিবর্তন, সংশোধন বিষয়ক মতামতগুলো আমরা পেয়েছি এবং তা প্রতিফলনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করছি। সনদের দুটি দিক রয়েছে, একটি হচ্ছে পটভূমিসহ আমরা কী কী বিষয়ে একমত হয়েছি এবং অপরটি হচ্ছে ভবিষ্যতে আবার আলোচনায় বসার প্রতিশ্রুতি। আমরা আশা করছি, আজকের মধ্যে সব বিষয়ে নিষ্পত্তি করে আলোচনা শেষ করতে পারব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার পাশাপাশি সনদ বাস্তবায়নে দুই বছরের সময়সীমা নিয়েও আমরা একমত। যাঁরা বলছেন যে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি দেওয়া যাবে না, তাঁরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এর আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। আগামী সংসদে সেই ভিত্তি দিতে হবে। যদি তা না হয় তবে স্বাক্ষর করা, না করার কোনো পার্থক্য থাকে না। জাতির সঙ্গে তামাসা করার সুযোগ আমরা দেব না। তিনি বলেন, সংস্কারের প্রস্তাব হলো দীর্ঘ আলোচনায় ফলাফল। এই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন জরুরি। এ বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে বিএনপির দ্বিমত নেই। বিএনপির বিষয়টি হলো আমরা ভালো মানুষ, ভালো দল, আমরা শপথ ভঙ্গ করব না। প্রস্তাব বাস্তবায়নে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
বিএনপির বক্তব্যের প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, তাঁরা বলছেন সংসদে আইনের ভিত্তি দেবেন; তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য তার দৃষ্টান্ত আমরা এর আগে দেখেছি। গত ৫৪ বছরে কোনো সরকারই শপথের মর্যাদা রাখেনি। তাই আমরা বলব, এখনই যদি আইন না হয়, তাহলে আমাদের এত দিনের আসা-যাওয়া ও সময় ব্যয় হওয়া সবই জিরো। আমরা এত কষ্ট করলাম; কিন্তু বাস্তবায়ন না হলে এসবের কোনো মূল্য থাকবে না। বাস্তবায়ন না হলে শপথ করারও কোনো মূল্য থাকে না। তাই আমরা বলেছি প্রয়োজনে আরো আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হতে। তিনি জানান, আইনি ভিত্তি না দিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না তার দল। কারণ নির্বাচিত সরকার এসে এটি আইনে রূপ দেবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই যা করার এখনই করতে হবে।
জামায়াত সনদে স্বাক্ষর না করলে সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো সংকট হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, লিগ্যাল স্বীকৃতি না থাকলে স্বাক্ষর করলেই কী, আর না করলেই কী? সংকট হবেই। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আইনি স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায়? যাঁরা বলেন, এর কোনো সুযোগ নেই, তাঁরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আমরা মনে করি, শুধু প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করলে হবে না। আইনি ভিত্তি না থাকলে এই চার্টার মূল্যহীন হয়ে পড়বে। সে জন্য আমরা কমিশন ও সরকারের বিরুদ্ধে কমপেনসেট মামলা করব। আইনি ভিত্তি ছাড়া এই চার্টার জিরো হবে। আমরা পরিষ্কার বলেছি, আইনগত ভিত্তি ছাড়া সই করব না। এই সরকারের মেয়াদেই এটি কার্যকর করতে হবে। কাল থেকেই এটা সম্ভব। আইনি ভিত্তি না দিয়ে যদি সরকার বাস্তবায়নের পথে না এগোয়, তাহলে আমরা এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে অসমাপ্ত মনে করব। সই করলেই যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এটা এক ধরনের প্রহসন। সুতরাং আমরা সরকার ও কমিশনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, তারা যেন নিজেদের ওয়াদা বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এখনো পর্যন্ত অস্পষ্ট। এটি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আবারও বসতে হবে। দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হলে আমরা প্রত্যাখ্যান করব। দ্রুত এটি কার্যকর করতে হবে। আইনি ভিত্তি না দিলে, এই সনদ একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেই থাকবে। এমনটি হলে আমরা সই করব না। কারণ পরবর্তী সরকার এর স্বীকৃতি দেবে—এমন কথা ফাঁকিবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।