<p>ক্যান্সার রোগীর সঠিক ওজন এবং পুষ্টিগত অবস্থা বজায় রাখার জন্য যথাযথ খাদ্য পরিকল্পনা করা তার সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আবার কিছু সুনির্দিষ্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্যও নানা খাদ্য সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।</p> <p> </p> <p><strong>সতর্কতা</strong></p> <p>রেডিওথেরাপি বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ক্যান্সার রোগীরা খাদ্য গ্রহণে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে ক্ষুধামান্দ্য, খাদ্যের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, গ্যাস জমে পেট ফুলে থাকা, পেটে ব্যথা, শুষ্ক মুখ, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, বমি বমি ভাব, মুখে ঘা হওয়া, গলা ব্যথা ও ফুলে যাওয়া, বমি, ওজন হ্রাস ইত্যাদি হলো সাধারণ সমস্যা। এই বিরূপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে ক্যান্সার রোগীদের চরম খাদ্যবিতৃষ্ণার কারণে, যা মূলত কেমোথেরাপির ফল। এ জন্য খাদ্য গ্রহণের দুই-তিন ঘণ্টা আগে ও পরে কেমোথেরাপি বন্ধ রাখা বাঞ্ছনীয়।</p> <p> </p> <p><strong>যা খাবেন, যা খাবেন না</strong></p> <p><span style="color:#008080">►</span>  জরায়ুর ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রস্টেট এবং কোলন ক্যান্সার রোগীদের অতিরিক্ত চর্বিবহুল খাদ্য পরিহার করা উচিত। আবার অতিরিক্ত ক্যালরিবহুল খাদ্য গ্রহণ গলব্লাডার ও এন্ড্রমেট্রিয়াম ক্যান্সারের জন্য ক্ষতিকর।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   কিছু খাদ্য আছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধী। যেমন—আঁশযুক্ত খাবার কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিহত করে। পাকস্থলী ও খাদ্যনালির ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন ‘সি’যুক্ত খাবার। ভিটামিন ‘এ’ ও ক্যারোটিনযুক্ত খাদ্য ফুসফুস, ব্লাডার ও গলনালি ক্যান্সার প্রতিরোধী। ফল ও সবজিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী অনেক উপাদান আছে। ডালজাতীয় খাদ্যের মধ্যে সয়াবিন, মসুর, শুকনো শিমের বিচিতে ক্যান্সারবিরোধী উপাদান রয়েছে। সয়া খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বাড়ালে তা ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। লাইকোপেন ও ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন—গাজর, টমেটো প্রভৃতি ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>  ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘ই’-এর সম্পূরক ফর্মের খাদ্যগুলোকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ রাখার সুপারিশ করা হয়। কারণ এটি ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে ও ক্যান্সার চিকিৎসায় বাধা দান করে।</p> <p> </p> <p><strong>ক্যান্সার রোগীদের করণীয়</strong></p> <p><span style="color:#008080">►</span>   যতটুকু সম্ভব খাদ্য গ্রহণের চেষ্টা করা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   প্রচুর তরলজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   খাদ্য গ্রহণের ৩০ মিনিট আগে বা পরে বেশি করে পানি পান করে নেওয়া।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   খাদ্য গ্রহণের মাঝে পানীয় কম গ্রহণ করা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>  খাদ্য বা পানীয়ের গন্ধ পছন্দ না হলে সেটি গ্রহণ না করা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   মুখ সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে উষ্ণ তরল গ্রহণ করা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা। যেমন—শুকনো ফল, মটরশুঁটি, শিমের বিচি, শস্যজাতীয় খাদ্য খাওয়া।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   ডায়রিয়া হলে সোডিয়াম ও পটাসিয়ামযুক্ত তরল খাদ্য গ্রহণ করা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   মুখ শুকিয়ে গেলে বরফের টুকরা বা চুইংগাম মুখে রাখা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   বমি বমি ভাব থাকলে খুব গরম বা খুব ঠাণ্ডা খাদ্য ও তরল গ্রহণ না করা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   মুখে ঘা থাকলে তরল পান করার জন্য স্ট্র ব্যবহার করা। এ ছাড়া টকজাতীয় ফল, মসলাযুক্ত খাবার, লবণাক্ত খাবার, শক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   দিনে তিন-চারবার কুলি করলে মুখের ঘা উপশম হবে।</p> <p><span style="color:#008080">►</span>   ক্ষুধা লাগা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সময় অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা।</p> <p> </p> <p><strong>লেখক</strong> : প্রধান পুষ্টিবিদ</p> <p>ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড</p> <p> </p>