<p>ইউক্রেনের জন্য ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট অনুমোদন দিয়েছে এবং সেটি এখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের টেবিলে স্বাক্ষরের অপেক্ষায়। এখন এতে করে ইউক্রেন নতুন কী অস্ত্র পেতে যাচ্ছে এবং তা দিয়ে রাশিয়ার সামনে কতটা কী করতে পারবে তারা?</p> <p>ইউক্রেনের এই সামরিক সহায়তা ইসরায়েল, তাইওয়ানসহ মোট ৯৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার একটা অংশ। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বুধবার এতে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।</p> <p>সহায়তার বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি (বিল) মুক্তবিশ্বে গণতন্ত্রের নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করল।’</p> <p>এই সামরিক সহায়তার মধ্যে ইউক্রেনের জন্য কমপক্ষে আট বিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যেই এর সরবরাহ শুরু করবে।</p> <p>জার্মানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৪৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে। জার্মানি দিয়েছে ১০.৭ বিলিয়ন, যুক্তরাজ্য ৫.৭ বিলিয়ান, ডেনমার্ক ৫.২ বিলিয়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দিয়েছে ৬.১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা।</p> <p>এই মুহূর্তে ইউক্রেনের জরুরি ভিত্তিতে যে অস্ত্রগুলো প্রয়োজন সেগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, মাঝারি থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবারুদ। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা এই তিন ক্ষেত্রে কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে দেখে নেওয়া যাক।</p> <p><strong>আকাশ প্রতিরক্ষা</strong><br /> আকাশপথে রাশিয়ার হুমকি প্রতিহত করা, ইউক্রেনের শহর ও জ্বালানি অবকাঠামোর মতো জরুরি সব স্থাপনা রক্ষায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। গত সপ্তাহে জেলেনস্কি জানান, শুধু এই বছরই তার দেশ এক হাজার ২০০ রুশ ক্ষেপণাস্ত্র, দেড় হাজার ড্রোন ও সাড়ে আট হাজার বিশেষ বোমা হামলার শিকার হয়েছে।</p> <p>পশ্চিমাদের সরবরাহ করা কাঁধে নিয়ে ছোড়া স্বল্পপাল্লার মিসাইল স্টিঙ্গার থেকে শুরু করে সবচেয়ে আধুনিক ও খুবই দামি প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের মিসাইল পর্যন্ত এখন ইউক্রেনের কাছে রয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, আরো অন্তত সাতটি প্যাট্রিয়ট বা এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দরকার তাদের।</p> <p>রুশ ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ স্থল ও আকাশ থেকে ছোড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন কনভার্টেড এস-৩০০ ও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইরানের তৈরি শত শত শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের মোকাবেলা করা ইউক্রেনের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ এগুলো একসঙ্গে অনেকগুলো আক্রমণে আসে।</p> <p>আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বহুল চর্চিত একটি কৌশল হলো লক্ষ্যবস্তু সামনে ছুড়ে দেওয়া, তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানা, তাদের রাডার সিস্টেম শনাক্ত করা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ কমিয়ে আনা।</p> <p><strong>মাঝারি থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র</strong><br /> তবে যুদ্ধটা স্থলপথে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গত অক্টোবর থেকে রুশ বাহিনীর কাছে ইউক্রেন তাদের পূর্বাঞ্চলের অন্তত ৫৮৩ বর্গকিলোমিটার জায়গা হারিয়েছে, যার বড় কারণ গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়া।</p> <p>হাইমবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম বা হিমারস ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কারণ মোবাইল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমেই এটির সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো যায়। দ্রুত লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে যাচ্ছে, আক্রমণের জন্য তৈরি হচ্ছে ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আবার রাশিয়ান বাহিনী এটি দেখে ফেলা ও আক্রমণের আগেই চলে যাচ্ছে অন্য জায়গায়।</p> <p>এ রকম হিমারস এবার ইউক্রেনের বহরে আরো যুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং একই সঙ্গে আরো বেশি ট্যাংক ও ব্র্যাডলি যুদ্ধযান যুক্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।</p> <p>আরো উল্লেখযোগ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর দূরপাল্লার ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) সম্প্রতি ইউক্রেনে পৌঁছেছে। পুরনো এটিএসিএমএস ইউক্রেনে ব্যবহার হচ্ছে গত বছর থেকেই, কিন্তু এর নতুন ধরন প্রায় দ্বিগুণ দূরত্ব, অর্থাৎ ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে সক্ষম।</p> <p>ফলে এটি যুদ্ধকে দখলকৃত ক্রিমিয়ার ভেতরে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে, রাশিয়া যেই জায়গাটিকে সুরক্ষিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাযুক্ত তাদের প্রধান নৌঘাঁটি ও আরো অনেক কিছু হিসেবেই ব্যবহার করছে।</p> <p><strong>কামানের গোলা</strong><br /> তবে যুদ্ধে ব্যবহৃত প্রতিদিনের অস্ত্রগুলোর কথা ভুলে গেলেও চলবে না। এম৭৭৭ হাউয়িৎজার কামানকে প্রতিনিয়ত ১৫৫ মিলিমিটারের গোলাবারুদ দিতে হয়।</p> <p>২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র এ রকম ২০ লাখ গোলা পাঠিয়েছে ইউক্রেনে এবং খুব সম্ভবত তাদের নতুন সহায়তার ভেতরেও এটি অন্তর্ভুক্ত আছে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে ‘বিস্তৃত লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক’ ব্যবহার করেছে। তারা বলছে, যাতে ইউক্রেনে অস্ত্র দ্রুত কয়েক দিনের মধ্যে পৌঁছনো যায়।</p> <p>সহায়তাগুলো এখন ইউক্রেনের খুব কাছাকাছি এবং সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়া মাত্র সেগুলো ইউক্রেনের সম্পদ হয়ে যাবে।</p> <p>এসব সামরিক সরঞ্জাম যুদ্ধক্ষেত্রে নেওয়া, বিশেষ করে গোলাবারুদ নিয়ে যেতে বেশ কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। কারণ পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর জোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।</p> <p>গত সপ্তাহে রাশিয়া বলেছে, তারা পশ্চিমাদের সরবরাহ করা সরঞ্জামাদির সংরক্ষণাগার ও লজিস্টিকস কেন্দ্রগুলোতে হামলার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেবে।</p> <p><strong>...এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমান</strong><br /> এগুলোর সঙ্গে কিছু অর্থ আগেই এসেছে এবং সেগুলো এখন কাজে লাগতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের পাইলট ও ক্রুরা পশ্চিমা এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এই মুহূর্তে রুমানিয়াতে।</p> <p>একাধিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারা এ সব বিমান আকাশে মুখোমুখি লড়াই এবং আকাশ থেকে মাটিতে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে খুবই শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে, যা ইউক্রেনের সার্বিক আকাশ প্রতিরক্ষাকেই শক্তিশালী করে।</p> <p>মাস খানেকের মধ্যেই ইউক্রেনে ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক ডজন ‘ভাইপার্স’ পৌঁছনোর কথা। এই যুদ্ধবিমান রাতারাতি যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবে না, তবে কিয়েভের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ঝুলিতে নতুন তীর হিসেবে যুক্ত হবে।</p> <p>যদিও মস্কো এগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে এফ-১৬ যুদ্ধক্ষেত্রে খুব একটা পার্থক্য গড়তে পারবে না এবং রুশ বাহিনী সেগুলো আকাশেই ধ্বংস করে দেবে।</p>