<p>সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের দুটো গ্রহ—ইউরেনাস ও নেপচুন। এরা পৃথিবীর চেয়ে যথাক্রমে ১৯ ও ৩০ গুণ বেশি দূরত্বে থেকে সূর্যকে পাক খায়। সূর্যের আলোক স্বল্পতায় উভয় গ্রহে হিমশীতল অবস্থা বিরাজমান। এদের বায়ুমণ্ডলে মেঘের গড় তাপমাত্রা প্রায় -২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে ইউরেনাস পৃথিবীর হিসেবে ৮৪ বছর সময় নেয়, নেপচুন নেয় ১৬৫ বছর। </p> <p>পৃথিবী থেকে পাঠানো ভয়েজার-২ মহাকাশযান দিয়ে গ্রহ দুটোর ওপর জরিপ চালানো হয়। যেটা ১৯৮৬ সালে ইউরেনাস ও ১৯৮৯ সালে নেপচুনের পাশ দিয়ে উড়ে যায়। দুটো গ্রহের অধীনেই ক্ষীণ বলয় ব্যবস্থা রয়েছে। উভয়ের রয়েছে প্রাকৃতিক উপগ্রহ বা চাঁদের আধিক্য। </p> <p>ইউরেনাস ও নেপচুনের বায়ুমণ্ডল গভীর, তুলনামূলক বৈশিষ্ট্যহীন ও হিলিয়াম প্রভাবিত। যা শিলা ও বরফের একটা বৃহৎ কেন্দ্রকে ঘিরে রেখেছে। এখানে কিছু অতিরিক্ত হাইড্রোকার্বন থাকে। যেমন অ্যামোনিয়া, মিথেন—এগুলো মেঘের শীর্ষে প্রতিফলিত সূর্যের আলোর রং পরিবর্তন করে গ্রহদুটোকে স্বতন্ত্র সবুজ ও নীল রঙে রাঙায়। </p> <p>এদের আভ্যন্তরীণ তাপও বেশ অস্থিতিশীল। তা নেপচুনে পুরো সৌরজগতের কিছু দ্রুততম বাতাসকে ফুঁসিয়ে তোলে। সেই আলোড়নে এই বাতাস ঘণ্টায় ২,০০০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায়। নিজ কক্ষপথে পৃথিবী ২৩ ডিগ্রি কাঁত হয়ে ঘোরে। সৌরজগতের আর সাতটা গ্রহের মতো ইউরেনাসও প্রায় সোজা হয়ে ঘুরছিল। হঠাৎ একটা প্রোটোপ্লানেটের ধাক্কায় এটি তার ঘূর্ণন কোণ পরিবর্তন করেছে। বর্তমানে ইউরেনাস ৯৮ ডিগ্রি কাঁত হয়ে ঘোরে। একে বলা হয় ‘ইউরেনাসের নাচন’।</p> <p>ইউরেনাস এবং নেপচুন আমাদের সৌরজগতের বাইরে থেকে দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রহ। আকারে বিশাল বড় গ্যাস গ্রহ। যার প্রত্যেকটির ব্যাস পৃথিবীর চারগুণ। অনেকের ধারণা, ইউরেনাস নামটি নেওয়া হয়েছে গ্রিক পুরাণ থেকে। জুপিটারের পিতা স্যাটার্ন। স্যাটার্নের পরেই ইউরেনাসের অবস্থান। <br /> অবস্থান হিসেবে ইউরেনাস স্যাটার্নের অগ্রজ। তাই পুরাণে স্যাটার্নের পিতার নাম যেমন ইউরেনাস, সেই নামটিই ১৮৫০ সালে গ্রহটিকে দেওয়া হয়। নেপচুন নামটি অবশ্য রোমান সাগরের দেবতার নামে। সৌরজগতের গ্রহগুলোর ভেতর নেপচুন নীল গ্রহ। সাগরের নীলের সাথে মিলে যাওয়ায় নেপচুনই রাখা হয় স্থায়ী নাম হিসেবে।</p> <p><strong>পরিমণ্ডল</strong><br /> ইউরেনাস ও নেপচুন অন্য একটা দিক থেকে বিশেষ। এই দুটি গ্রহকে আধুনিক যুগের টেলিস্কোপের সাহায্যে আবিষ্কার করা হয়েছে। ইউরেনাস ১৭৮১ সালে উইলিয়াম হার্শেল আবিষ্কার করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, ইউরেনাস গ্রহটি সূর্য থেকে ভীষণ দূরে। তাই এর নিজস্ব মহাকর্ষ টান খুবই বেশি। সেজন্যই নিজস্ব কক্ষপথ প্রসারণ হচ্ছে এর এবং এটি আরও দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তখন থেকেই ‘অন্য’ এক নিকটবর্তী গ্রহের সাথেও ইউরেনাসের সমন্ধ থাকতে পারে বলে মত দেন অনেকে। অর্থাৎ, নেপচুন। জন কাউচ অ্যাডামস এবং আরবাইন লে ভেরিয়ার স্বতন্ত্র নেপচুনে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। ১৮৪৬ সালে জোগান গ্যালে নেপচুন আবিষ্কারের মাধ্যমে সেই ভবিষ্যদ্বানী প্রমাণিত হয়।</p> <p><strong>সম্পর্কিত বিষয়</strong><br /> বৃহস্পতি<br /> শনি</p> <p><br /> <strong>বিজ্ঞানী</strong><br /> <strong>উইলিয়াম হার্শেল</strong><br /> ১৭৩৮-১৮২২<br /> জার্মান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ইউরেনাসের আবিষ্কারক।<br /> <strong>আরবেইন লে ভেরিয়ার</strong><br /> ১৮১১-১৮৭৭<br /> ফরাসি গণিতবিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী।<br /> <strong>জোহান গটফ্রাইড গ্যালে</strong><br /> ১৮১২-১৯১০<br /> জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী। নেপচুনের আবিষ্কারক।<br /> <strong>জন কাউচ অ্যাডামস</strong><br /> ১৮১৯-১৮৯২<br /> ব্রিটিশ গণিতবিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী।</p> <p><strong>বর্ণনা</strong><br /> ক্যারোলিন ক্রফোর্ড</p>