<p>মানুষ সর্বভুক প্রাণী। পৃথিবীতে মানুষই সম্ভবত একমাত্র প্রাণী, যাদের খাবারের তালিকায় মাছ, মাংস, ফলমূল থেকে শুরু করে লতাপাতা, কীটপতঙ্গ এমনকি পতঙ্গের বিষ্ঠাও বাদ যায় না। আমাদের দেশের খাবারেও আছে নানান বৈচিত্র্য। পার্বত্য অঞ্চলে সবজি হিসেবে বাঁশের কোড়ল জনপ্রিয়। আবার সিলেট অঞ্চলে চা-পাতার নানান রেসিপি প্রচলিত। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় খাবারের তালিকা করলে চীনের নাম থাকবে সবার ওপরে। রাশিয়া এবং জাপানের বেশকিছু অঞ্চলে কাঁচা মাছ-মাংসসহ নানান সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হয়।</p> <p>পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ এবং বন্য প্রাণী খাওয়ায় চীনাদের জুড়ি মেলা ভার। তাদের তিন বেলার প্রধান খাদ্যে—বিকেলের নাশতা কিংবা অতিথি আপ্যায়নেও কীটপতঙ্গ থাকে সবার প্রথমে। মৌমাছির লার্ভা চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিলাসবহুল খাদ্য। পাশাপাশি সাপ, ইঁদুর, তেলাপোকা, বিচ্ছুও সমানতালে জনপ্রিয়।</p> <p>এদের খাদ্য তালিকা থেকে কুকুরও বাদ যায়নি। শোনা যায়, কিশোরদের ইউরিনও পানীয় হিসেবে পান করে চীনারা। চীনাদের পাশাপাশি জাপানিদের খাদ্য তালিকাও বেশ অদ্ভুত। জাপানিদের জনপ্রিয় খাদ্য ‘ইনাগো’। গরম তেলে ঘাসফড়িং ভেজে তৈরি করা হয় এই খাবার।</p> <p>এদের আরও একটি জনপ্রিয় খাবার ‘জাজা মুশি’ বা শুঁয়াপোকার লার্ভা। আবার ঝিঁঝি পোকা দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবারও চীন দৈনিক<br /> এবং জাপানে বেশ জনপ্রিয়।</p> <p>থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে ঝিঁঝি পোকা, ঘাসফড়িং এবং ঘুণপোকা। গরম তেলে মচমচে করে ভাজা হয় এসব পোকা। থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় এসব পোকামাকড়। আবার পিঁপড়ার ডিমও থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় খাবারের একটি। আফ্রিকান দেশগুলোতে বসন্তকালে প্রচুর খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এই সময়ে তারা প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে উঁইপোকার মাধ্যমে।</p> <p>মেক্সিকোর কয়েকটি অধিবাসীর মধ্যেও পোকামাকড় জনপ্রিয় খাবার। সেদ্ধ করে, ভেজে কিংবা ভর্তা বানিয়ে খাওয়া হয় পোকা। রুটির সঙ্গে<br /> পোকা-ভর্তা সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। টাকিলার সঙ্গেও পোকা ভাজি খায় মেক্সিকানরা। টাকিলার সঙ্গে শুঁয়াপোকা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার।</p> <p>ব্রাজিলের নিম্নবিত্ত অধিবাসীদের ঐহিত্যবাহী খাবার বেশ বড় জাতের রানি পিঁপড়া। স্থানীয় ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে পোকা 'ইকাস' নামে পরিচিত। বর্তমানে ব্রাজিলের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোতেও পোকার চাহিদা বাড়ছে। তাদের ভাষ্যমতে এসব পোকার স্বাদ মিন্ট চকলেটের মতো।</p> <p>অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন আদীবাসীরা এক ধরনের পিঁপড়া খায়, যার নাম ‘হানি পট অ্যান্ট’। তাদের মতে, এই পিঁপড়া বেশ পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণে ভরপুর। আবার কম্বোডিয়ার খাবারও বৈচিত্র্যে ভরপুর। হৃষ্টপুষ্ট তেলাপোকা, মাকড়সা, ঘাসফড়িং, ঝিঝি পোকা, শুঁয়াপোকাসহ নানান জাতের ইঁদুর খাওয়া হয় সেখানে। এসব পোকা তাদের তিন বেলার খাবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।</p> <p>কোরিয়ার দুই দেশেই সাপ ও সাপের স্যুপ বেশ জনপ্রিয়। পাশাপাশি কুমিরও বাংলা খায় তারা। কুমিরের গ্রিল সেখানকার জনপ্রিয় খাবারের একটি। শুঁয়াপোকা দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ খাবার কঙ্গোতে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ এই খাবারটি তৈরি করা হয় অলিভ অয়েল দিয়ে।<br /> বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়ছে খাদ্যের ওপর।</p> <p>ডয়চে ভেলের এক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৫০ সাল নাগাদ মাংসের চাহিদা বর্তমানের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে কৃষিজমি। তাই ভবিষ্যতে খাবারের চাহিদা মেটাতে বিকল্প ব্যবস্থা ভাবাটা জরুরি হয়ে উঠেছে। অনেক ইউরোপিয়ান পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হলো, যতটা পারা যায় খাবারের তালিকায় আহারযোগ্য পোকামাকড় যোগ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ!</p>
