<p>১৯১৯ সালে রাদারফোর্ড প্রোটন আবিষ্কারের পর ঠিক এমন একটা সমস্যায় পড়েছিল বিজ্ঞান। তত দিনে রাদারফোর্ড তাঁর পরমাণু মডেল দিয়েছেন, তাতে কিছু ত্রুটি ছিল, সেগুলো এড়ানোর জন্য বোর কোয়ান্টাম মডেল দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু বোরের পরামাণু মডেল একটি ইলেকট্রন ও একটি প্রোটনবিশিষ্ট পরমাণু অর্থাৎ হাইড্রোজেন পরমাণুর ধর্ম ও গুণাগুণ বেশ ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু যেসব পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা একধিক, সেগুলোর জন্য বোর মডেল ঠিকঠাকমতো কাজ করে না। তাই জার্মান বিজ্ঞানী সমারফেল্ড বোর মডেলটাকে সংশোধন করে নতুন মডেল দাঁড় করলেন। এতে একাধিক ইলেকট্রনের বিন্যাসটা ব্যাখ্যা করল ঠিকই কিন্তু একাধিক প্রোটনের নিউক্লিয়াস কেমন হবে, তার বিসস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারল না। কারণ, নিউক্লিয়াসের ভেতর যদি উটকো ঝামেলা এসে যোগ হয়, তাহলে হিসাব গুলিয়ে যাবে সহজেই।</p> <p>উটকো ঝামেলাটা কী? </p> <p>প্রোটন আবিষ্কারের পর সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, ঝামেলা চুকে গেছে। ইলেকট্রন-প্রোটনের একটা করে জোড়া মিলে পরমাণুকে চার্জ নিরপেক্ষ করে দেয়। তাই সব পরমাণুই চার্জ নিরপেক্ষ। যেমন হিলিয়ামে দুটি ইলেকট্রনের বিপরীতে এর নিউক্লিয়াসে দুটি প্রোটন থাকে, তেমনি অক্সিজেন পরমাণুর ভেতর বাস করে আটটি ইলেকট্রন ও আটটি প্রোটন।</p> <p>কিন্তু কণা পদার্থবিজ্ঞানের জগত্টা এত সরল নয়, শিগগিরই রাদারফোর্ডের নজরে পড়ল নতুন একটা সমস্যা। হিলিয়াম নিউক্লিয়াস বা তাঁর প্রিয় আলফা কণাতেই সমস্যাটা দেখা দিল। তিনি দেখলেন, হাইড্রোজেন পরমাণুর নিক্লিয়াস (হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসে একটামাত্র প্রোটন থাকে) অর্থাৎ একটা প্রোটনের যে ভর মেপেছিলেন, হিসাব অনুযায়ী আলফা কণার ভর তার দ্বিগুণ হওয়ার কথা। কিন্তু হিসাব কষে দেখলেন, একটা আলফা কণার ভর চারটি প্রোটনের ভরের সমান। তখন তিনি অন্যান্য মৌলের পরমাণু নিয়েও পরীক্ষা করে দেখলেন, ঠিক যতটা প্রোটন থাকার কথা সবগুলোর নিউক্লিয়াসের ভর পাওয়া যাচ্ছে দ্বিগুণ। যেমন অক্সিজেন নিউক্লিয়াসের ভর হওয়া উচিত ছিল আটটি প্রোটনের সমান। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে প্রোটনের ১৬টি প্রোটনের ভর। এই বাড়তি ভর কোত্থেকে এল?</p> <p>বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তখন রাদারফোর্ডই একটা সমাধান পেয়ে গেলেন, যদিও সেটা পরে ভুল প্রমাণিত হয়। তিনি বললেন, পরমাণুতে যতগুলো প্রোটন আছে বলে মনে করছি, তার আসল সংখ্যা অনুমানের দ্বিগুণ। তাই যদি হয়, তাহলে বাড়তি প্রোটনের কারণে পরমাণুগুলো আর চার্জ নিরপেক্ষ থাকে না। ধনাত্মক চার্জযুক্ত হওয়ার কথা। রাদারফোর্ড, তার সমাধানও দিলেন। বললেন, নিউক্লিয়াসে যে কটি বাড়তি প্রোটন থাকবে, ঠিক ততগুলো ইলেকট্রনও থাকবে গাদাগাদি করে, নিউক্লিয়াসের ভেতরেই। আর যেহেতু ইলেকট্রনের ভর কম, তাই সেগুলোর ভর নিউক্লিয়াসের ভরে কোনো প্রভাব ফেলে না।</p> <p>অর্থাৎ হিসাবটা এমন, হিলিয়াম পরমাণুর নিক্লিয়াসে থাকে চারটি প্রোটন আর দুটি ইলেকট্রন আর নিউক্লিয়াসের বাইরে কক্ষপথে থাকে আরও দুটি ইলেকট্রন—সব মিলিয়ে হিলিয়াম পরমাণু চার্জ নিরপেক্ষ! তেমনি অক্সিজেন নিউক্লিয়াসে থাকে ১৬টি প্রোটন ও ৮টি ইলেকট্রন। অন্যদিকে নিউক্লিয়াসের বাইরে থাকে ৮টি ইলেকট্রন। আর এই মতবাদের নাম দেওয়া হলো নিউক্লিয়াসের ‘ইলেকট্রন-প্রোটন’ মতবাদ। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্ব পেয়ে আত্মহারা। কণা পদার্থবিজ্ঞানের জগৎ এমনকি মহাবিশ্বের গঠনও এত সরল! মহাবিশ্বের তাবৎ বস্তু তাহলে দুটি মাত্র কণা দিয়ে তৈরি, ইলেকট্রন আর প্রোটন। আর গোটা মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র দুটি বল—মহাকর্ষ আর বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল! কিন্তু অচিরেই এ ধারণা ধাক্কা খেল; নতুন একটি চার্জ নিরপেক্ষ কণার আমদানি করলেন বিজ্ঞানীরা। সেটার নাম নিউট্রন। বাতিল হলো ইলেকট্রন-প্রোটন তত্ত্ব।<br />  </p>