<article> <p style="text-align: justify;">উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের টাকা বাড়ায় এবং ১৫ শতাংশের কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার নিয়মের কারণে ভোটে আগ্রহ কমেছে ছোট দলগুলোর। এ দলগুলোর অনেক নেতার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ থাকলেও ব্যয়ের কথা চিন্তা করে তাঁরা পিছু হটছেন। নিবন্ধিত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এরই মধ্যে এক গুচ্ছ সংশোধনী প্রস্তাব এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রার্থীদের জামানতের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ১০ হাজার টাকার জায়গায় এক লাখ টাকা করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যানদের জামানত আগে ছিল পাঁচ হাজার, নতুন বিধিতে এটিকে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। জামানত বাড়ানোর পাশাপাশি ১৫ শতাংশের কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিধান করা হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসিতে নিবন্ধিত দলগুলোর নেতাদের দাবি, জামানতের অর্থ সাধারণ প্রার্থীদের জন্য সহনশীল নয়। জামানতের অর্থ বাড়ানোর ফলে নির্বাচনে ‘কালো টাকার’ খেলা বৃদ্ধি পাবে। যাঁরা বিত্তশালী প্রার্থী তাঁরাই শুধু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কর্মী সংখ্যা বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করবে বলে এই সংশোধনীর নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গত ৩১ মার্চ লাখ টাকা জামানতের বিধির ফের সংশোধন চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট। ইসি নিবন্ধিত দলটির ‘ছড়ি’ প্রতীকে দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ৬৬ জন প্রার্থী। দলটির সভাপতি লায়েস মুন্না সে চিঠিতে বলেছেন, গেজেটে নির্ধারিত জামানত কোনোভাবেই আমাদের দেশের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাঁর প্রশ্ন, এটা কি দেশকে বিরাজনীতিকরণেরই আরেক কৌশল?</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">দ্বাদশ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় তৃণমূল বিএনপি। সে নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫ জন প্রার্থী দিয়েছিল দলটি। চরম ভরাডুবির পরও গত ২৭ জানুয়ারি দলীয় সভায় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">দলের ভাইস চেয়ারপারসন সালাম মাহমুদ কালের কণ্ঠকে জানান, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং দোহারের একাধিক উপজেলা ও ইউনিয়নে এরই মধ্যে দলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, এমন নেতাকর্মীদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে দলের সভায়।</p> <p style="text-align: justify;">জামানতের অর্থ এবং প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে সালাম মাহমুদ বলেন, ‘সামর্থ্য কম হওয়ায় আমার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রার্থী হয়তো দিতে পারব না। জামানত এক লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, আমরা এর বিপক্ষে। এতে অবৈধ অর্থ ও ক্ষমতার অধিকারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে। আবার ১৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে, অনেক পুরনো দলের প্রার্থীই এমন ভোট পান না, আমরা তো নতুন দল।’</p> <p style="text-align: justify;">জামানতের অর্থ ও জামানত রক্ষায় প্রাপ্ত ভোটে হার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), ইসলামী ফ্রন্টসহ কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতারা। ইসিতে নিবন্ধিত এই দলগুলো নিয়মিত জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহ করে। এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু কালের কণ্ঠ বলেন, ‘জামানতের অর্থ এভাবে বাড়ানো খুবই অন্যায়। এটা আমাদের মতো ছোট দলগুলোকে নির্বাচনে অনুৎসাহিত করবে।’</p> <p style="text-align: justify;">এ সংশোধনী স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ ও অসৎ প্রার্থীদের আরো উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন। তিনি বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেব। কিন্তু এক লাখ টাকা জামানত দিয়ে নির্বাচন করতে কোনো সৎ ও দেশপ্রেমিক প্রার্থী আগ্রহী হবেন না।’</p> <p style="text-align: justify;">উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে নিবন্ধনপ্রাপ্ত আরেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দলটির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী জানিয়েছেন, উপজেলা ভোটে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ঈদের পর দলীয় সভা ডাকা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">উপজেলা ভোটের প্রার্থীদের জামানত বৃদ্ধির বিষয় সাধারণ প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেন বিএসপির দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘আগামী সভায় এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করব। এরপর চেয়ারম্যান এ বিষয়ে আমাদের দলীয় প্রতিক্রিয়া জানাবেন।’</p> <p style="text-align: justify;"><b>উৎসাহ হারাবেন </b><b>‘</b><b>শখের</b><b>’</b><b> প্রার্থীরা</b></p> <p style="text-align: justify;">ঢাকা-১২ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন নাইম হাসান। তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নে ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি ভোট পেয়েছিলে মাত্র ৫৯৯টি। অন্যদিকে গণফন্ট্রের মনোনয়নে গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী লিমা হাসানও। ‘জনতার কথা বলে’ নামক একটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে এ দম্পতির।</p> <p style="text-align: justify;">নাইম হাসান কালের কণ্ঠকে জানান, নির্বাচনে অংশগ্রহণ তাঁর শখ। দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি একাধিক সংসদীয় আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস, নিয়মিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে শিগগিরই তাঁর দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন লাভ করবে। তবে উপজেলা নির্বাচনের জামানতের অর্থ বাড়ানোয় তিনি সংশয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন করলাম নিজের টাকা খরচ কইরা। উপজেলায় জামানতের টাকা জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে বেশি কেন নির্ধারণ করল, বুঝতে পারছি না।’</p> <p style="text-align: justify;">আতাউল্লাহ-রুবিনা দম্পতিও নিয়মিত বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নেন। দ্বাদশ নির্বাচনে ঢাকা-৯ আসন থেকে রুবিনা আক্তার অংশগ্রহণ করেছিলেন তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নে। বিএসপির ‘একতারা’ মার্কার প্রার্থী হয়ে কক্সবাজার-১ আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও ঋণ জটিলতায় মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল আতাউল্লাহ খানের। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা থাকলেও খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত এই দম্পতিও।</p> <p style="text-align: justify;">গণআজাদী লীগের চেয়ারম্যান আতাউল্লাহ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপজেলা ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনো কিছু ভাবিনি। জামানতের অর্থ বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের মতো ছোট দলগুলোর জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এটা নিয়ে আমাদের জোটের সঙ্গে আলাপ করব।’</p> </article>