<article> <p style="text-align: justify;">সরকারি কেনাকাটার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও এখনো আইএমইডির বরাদ্দেই চলছে। এটির পদবিন্যাস বা অর্গানোগ্রাম আগেরটাই রয়ে গেছে। এতে বাড়েনি জনবল। কার্যত নাম ছাড়া কিছুই পরিবর্তিত হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও জানেন না, বিপিপিএ কবে পুরো শক্তি নিয়ে কাজ করতে পারবে।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="নাম বদল হলেও ক্ষমতা বাড়েনি" height="360" src="https://www.kalerkantho.com/_next/image?url=https%3A%2F%2Fcdn.kalerkantho.com%2Fpublic%2Fnews_images%2F2024%2F02%2F14%2F1707852964-bcfc8ec8eac757bc80e69b8bde50386e.jpg&w=1920&q=100" width="600" /></p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কেনাকাটার নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাঠামোগত দুর্বলতা কাটিয়ে বিপিপিএকে পুরোপুরি কার্যক্ষম করতে দক্ষ জনবল নিয়োগের পাশাপাশি তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">বিপিপিএ সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন, ক্রয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাদারি সৃষ্টি এবং টেকসই সরকারি ক্রয় বাস্তবায়নে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুমোদন পেয়েছে, যা আগে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একটি ইউনিট (সেন্ট্রাল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ইউনিট—সিপিটিইউ) ছিল।</p> </article> <p style="text-align: justify;">বিপিপিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি ক্রয়ে প্রতিবছর তিন হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। জাতীয় বাজেটের প্রায় ৪৫ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রায় ৮৫ শতাংশ ব্যয় হয় সরকারি ক্রয়ে। এই বিশাল অঙ্কের ব্যয়ে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী সরকারি ক্রয়ে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ই-জিপি সিস্টেম উদ্বোধন করেন। এর সুবিধার কারণে দ্রুত এই ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার প্রসার ঘটে।</p> <article> <p style="text-align: justify;">বর্তমানে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এই সিস্টেমে যুক্ত হয়েছে। প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ, সরকারি ক্রয়ের বর্ধিষ্ণু কলেবর এবং পেশাদারি বৃদ্ধির যে চাহিদা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করার মতো জনবল ও সক্ষমতা সিপিটিইউয়ের ছিল না। তাই এটিকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে বিপিপিএ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">এর আগে গত বছরের ৫ জুলাই পরিকল্পনামন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথিরিটি বিল-২০২৩ পেশ করেন, যা ১০ সেপ্টেম্বর পাস হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়, পরে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সিপিটিইউ ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ডিজিটাইজিং ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (ডিম্যাপ) নামের একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে। ডিম্যাপের চারটি কম্পোনেন্টের প্রথমটি হলো সিপিটিইউয়ের পুনর্গঠন ও নীতি সংস্কার। এর আওতায় সিপিটিইউকে একটি কর্তৃপক্ষে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বিপিপিএর কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত নীতি, কৌশল ও আইনি কাঠামো প্রণয়ন; বিপিপিএর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতি প্রণয়ন; বিপিপিএর উন্নয়নসংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন; বিপিপিএর সার্বিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় দিক‌নির্দেশনা প্রদান; সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইনের প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ, পরিবীক্ষণ, সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এবং ই-জিপির প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব আনয়ন।</p> <p style="text-align: justify;">অথরিটি হিসেবে নিজেদের অবস্থানের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শোহেলের রহমান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নতুন অর্গানোগ্রাম করছি। এটির অনুমোদন হলে লোকবল নিয়োগ করতে হবে, তাঁদের ট্রেনিং দিতে হবে, তখন বিপিপিএ পুরো কর্মক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে পারবে।’ তবে অর্গানোগ্রাম তৈরি ও অনুমোদন পেতে সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">এখন কী কী কাজ আগে করা দরকার, জানতে চাইলে শোহেলের রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সবার আগে অর্গানোগ্রাম করা দরকার। নতুন ভবনের বিষয়ে এখনো চিন্তা নেই। এত দিন তো আইএমইডির বাজেট থেকে চলছি। এখন বিপিপিএর নামে বরাদ্দ পেতে অর্থ বিভাগে যোগাযোগ চলছে।’</p> <p style="text-align: justify;">বিবিপিএ পুরোদমে কাজ শুরু করলে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিপিপিএ পুরোপুরি কাজ শুরু করলে কাজের গতি ও ব্যাপ্তি অনেক বাড়বে। এখন লোকবল অনেক কম। অনেক কাজ করতে চাইলেও অসুবিধা হচ্ছে। এখন তো পাবলিক প্রকিউরমেন্টে অনেক এরিয়া তৈরি হচ্ছে। আমরা সাসটেইনেবল পাবলিক প্রকিউরমেন্টে যাচ্ছি। লোকবল বাড়লে এখানে অনেক কাজ করার স্কোপ আছে। হাই ভ্যালু কন্টাক্টের জন্য নতুন করে দেশব্যাপী ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট করা যাবে। ই-জিপিতে আরো অনেক মডিউল ডেভেলপ করা করা যাবে। এগুলো হলে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে আরো গতি নিয়ে এগোতে পারব।’</p> <p style="text-align: justify;">সিপিটিইউকে অথরিটি করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালক মো. ফারুক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিপিটিইউ ছিল আইএমইডির একটি উইং। যখন আইনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে হতো, তখন তারা সরাসরি সিদ্ধান্ত দিতে পারত না। কোনো মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটায় মতামত চাইতে হলে তারা সরাসরি সিপিটিইউকে বলতে পারত না। আইএমইডি বরাবর লিখে সিপিটিইউ থেকে মতামত নিতে হতো। এতে কেনাকাটায় দীর্ঘসূত্রতা হতো। এ কারণে সিপিটিইউকে অথরিটি করতে হয়েছে। আমাদের আশপাশের সব দেশের প্রকিউরমেন্ট বডিই স্বায়ত্তশাসিত। তাই আমাদেরও অথরিটি করা দরকার ছিল, যদিও অনেক দেরি হয়ে গেছে।’</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, এখন যেহেতু নামেও হয়েছে, কাজেও হবে যদি অর্গানোগ্রাম ডেভেলপ করা যায়। বর্তমান গভর্নিং বডিতে সরকারের প্রতিনিধি, অর্গানাইজেশন ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিও আছেন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হবে কেনাকাটায় কতটা ট্রান্সপারেন্ট, কতটা অ্যাকাউন্টেবল বা কতটা ইনটেগ্রিটি বজায় রাখা যায়।</p> <p style="text-align: justify;">সিপিটিইউকে অথরিটি করার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সিপিটিইউকে শক্তিশালী করা দরকার ছিল। আগে পরামর্শ দেওয়া ছাড়া সিপিটিইউয়ের তেমন কোনো ক্ষমতা ছিল না। সেখানে যদি কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকে, সেটা শুধু ধরিয়ে দিলে হবে না, নিশ্চিত করতে হবে যে সংশোধন করা হচ্ছে। তবে এটিকে আপডেট করার প্রস্তাব অনেক পুরনো।  </p> <p style="text-align: justify;">জানতে চাইলে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট ড. মো. নুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি পর্যায়ে কার্য, পণ্য ও সেবা ক্রয়ে টেকসই কেনাকাটা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা থাকা দরকার। যেকোনো টেকসই কেনাকাটা করতে গেলে অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। টেন্ডারের স্পেসিফিকেশন, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে এসব বিষয়ে নম্বর রাখতে হয়। অভিজ্ঞ জনবলসহ অন্যান্য প্রস্তুতি না থাকায় এটি বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন হবে। আর এসব প্রস্তুতি ছাড়া যদি টেকসই কেনাকাটা বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে অনেকে সমস্যায় পড়বেন।’</p> </article>