<p>কোনো মামলায় চূড়ান্ত বিচারে মৃত্যুদণ্ড বহাল না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কারাগারে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর রবিবার। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ দিন ধার্য করেছেন। রবিবার রিট আবেদনটি উপস্থাপন করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এরপর আদালত শুনানির দিন ধার্য করেন।</p> <p>চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলমের পক্ষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে এ রিট আবেদন দাখিল করেন।</p> <p>রিট আবেদনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকাবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সব কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাখার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে (সুযোগ-সুবিধা) কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইনসচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে বিবাদী করা হয়েছে।</p> <p>মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরপরই তা কার্যকর করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত আসামির ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দাখিল করার সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হলে সাংবিধানিক অধিকারবলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল আবেদন দাখিল করতে পারেন। আপিল বিভাগে সাজা বহাল লাকলে তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী রিভিউ আবেদন করার আইনগত সুযোগ রয়েছে। এর পরও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত ক্ষমার আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।</p> <p>তিনি বলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরপরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে বন্দি রাখা হয়। কোনো কোনো মামলায় দেখা যায়, নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিলে হাইকোর্ট তা বহাল রাখার পরও আপিল বিভাগ থেকে খালাস পেয়ে যান। এই খালাসপ্রাপ্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণি হওয়ার আগে বছরের পর বছর নির্জন কনডেম সেলে বন্দি থাকতে হয়, যা অমানবিক।</p> <p>তিনি বলেন, গত ১৮ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ডেথ রেফারেন্স জটে বছরের পর বছর কনডেম সেলে আসামিরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ডেথ রেফারেন্সের সংখ্যা ৭৭৫টি। এখন হাইকোর্ট বিভাগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি চলছে। এই সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে দুই হাজার পাঁচজন ফাঁসির আসামি কনডেম সেলে বন্দি।</p>