<p>অন্যের সাফল্য দেখে ভুরু কুঁচকানো কখনই স্বাভাবিক আচরণ নয়। অন্যের সাফল্য দেখলে গা জ্বলে-এমন একটা নেতিবাচক কথা আমাদের চলতি কথার মধ্যে শোনা যায়। আসলেই কি তা? অন্যের সাফল্য, নতুন সুযোগ, জীবনে বড় কোন উন্নতির খোঁজ পেলে মানবিক জায়গা থেকে আমাদের উৎসাহ দেয়া উচিত। ইতিবাচকভাবে অন্যকে অনুপ্রেরণার মাধ্যমে আমরা কিন্তু নিজেরাও জীবনে ইতিবাচকতা আনতে পারি। কিভাবে অন্যের সাফল্যে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সাফল্য গ্রহণ করবেন তা নিয়ে লিখছেন ফটোগ্রাফার <strong>ইয়াসমিন হক রলি</strong>।</p> <p>নিজেকে মানবিক ভাবে প্রকাশ করা জানতে হবে। আমরা সামাজিক প্রাণী, সমাজে অন্যদের নিয়েই থাকি। সামাজিক ঘটনাপ্রবাহে সাফল্যের খবর আমাদের কানে আসবেই। প্রতিবেশির সাফল্য, বন্ধু কিংবা সহকর্মীর সাফল্য শুনে অনেকেই মন খারাপ করি। এটা কখনই করা যাবে না। মানুষ হিসেবে সবার জীবনে আলাদা গল্প থাকে। আলাদা প্রচেষ্টা থাকে। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জীবনে সাফল্য আসে। সাফল্য যেমন আসে ব্যর্থতা তেমনি থাকে। একজন মানুষ হিসেবে আমাদের অন্যের সাফল্য কিংবা খুশির সংবাদ গ্রহণ করা শিখতে হবে। কেউ ভালো চাকরি পেয়েছে-তাকে শুভেচ্ছা জানানো ভদ্রতা, ইতিবাচকতা। কেউ বিদেশে যাবেন-এটা শুনে মন খারাপ করা যাবে না। অন্যের বিদেশযাত্রার কথা শুনে শুভ কামনা জানান। আপনি আজকে যাকে শুভেচ্ছা জানাবেন, আপনিও জীবনে ইতিবাচকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন। অনেকেই পরিবারের কোন সদস্যের সাফল্য আসলে নেতিবাচক কথা বলেন। হেয় করে কথা বলা, পরিশ্রমকে খাটো করে অসম্মান করা-এমন কথা কখনই প্রশয় দেবেন না। যারা এমন নেতিবাচক কথা বলে, তাদের স্পষ্টভাষায় বিষয়টি সম্পর্কে বলুন। নেতিবাচক অভ্যাস পরিত্যাগ করতে না পারলে ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি করুন। </p> <p>উৎসাহ দিতে শিখুন। অন্যের সাফল্যের কথা শুনে উৎসাহ দিতে শিখুন। এখন তো সবাই ব্যস্ত। প্রতিবেশির সাফল্যের কথা শুনলে তার বাসায় ফুল নিয়ে দেখা করতে পারেন। নিজের বানানো কেক বা প্রিয় কোন রান্না পাঠাতে পারেন। সেটাও সুযোগ না থাকলে ফোনে কথা বলতে পারেন। সাফল্যের জন্য যে পরিশ্রম তাকে উৎসাহ দিন। একজন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে আপনি যে সহনুভূতিশীল, আপনি যে দারুণ তা প্রকাশ করুন। সাফল্যের জন্য বন্ধু কিংবা আত্মীয়কে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না। সব মানুষই তার নিজের প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ পাবার যোগ্য-এটা সব সময় মনে রাখবেন। কেন ধন্যবাদ দিচ্ছেন তা পরিষ্কার ভাষায় প্রকাশ করুন। অন্য মানুষের পরিশ্রম আর তার অর্জনের জন্য তার পরিবারকেও ধন্যবাদ দিন। </p> <p>অন্যের সাফল্যকে উদযাপন করতে আমাদের কিছুটা জড়তা থাকে। এই জড়তা এড়িয়ে চলুন। যতই অস্বস্তি থাকুক না কেন, অন্যের সাফল্যকে সম্মান দিন। মানবিক অবস্থান থেকে তার সাফল্য উদযাপন করুন। তার প্রচেষ্টা ও খাটনিকে গুরুত্ব দিন। দূরের কোন বন্ধুর সাফল্যের খোঁজ পেলে তাকে ফোন করে উৎসাহ দিন। দীর্ঘদিন পরিচয় নেই, যোগাযোগহীন থাকলেও উৎসাহ দিন। কে কি ভাবলো তা না ভেবে নিজেকে প্রকাশ করুন। আপনি কতটা খুশি, কতটা অনুপ্রাণিত তা প্রকাশ করুন। </p> <p>অন্যের সাফল্যের কথা শুনে হিংসা করেন অনেকেই। এটা পুরোপুরি পরিহার করুন। মনে রাখবেন, আপনি যখন নেতিবাচক আচরণ করবেন। আপনার সন্তান তা আপনার কাছ থেকে শিখবে। আপনি কি চান আপনার সন্তান হিংসা নিয়ে বেড়ে উঠুক। আপনি কি চান আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হিংসাত্মক আচরণের বীজন রোপন হবে? মনের মধ্যে হিংসা কিংবা বিদ্বেষসূচক ভাবনা জমতে দেবেন না। নিজেকে সামাজিকভাবে গড়ে তুলতে ইতিবাচক জীবনযাপন করুন। প্রতিবেশির সঙ্গে দেখা হলে হেসে কথা বলুন। বিভিন্ন উৎসবে প্রতিবেশির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। সহকর্মীদের খোঁজ নিন নিয়মিত। পুরোনো দিনের বন্ধুরা কে কোথায় কেমন আছে তা জানতে চেষ্টা করুন। নিজেকে দায়িত্বশীল পরিপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তৈরি করুন।</p> <p>অনুপ্রেরণা নিতে শিখুন। একেকজন মানুষের গল্প একেক রকম। সবাই সাফল্য অর্জন করে পরিশ্রম করে। অন্যের পরিশ্রমকে সম্মান করুন। অন্যের সাফল্যের গল্প শুনে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। নিজের পরিবারের সদস্য বা সন্তানকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। পাড়া-প্রতিবেশি, বন্ধু কিংবা সহকর্মীর সাফল্য আপনার জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। আপনি না হলেও আপনার সন্তানের জন্য নতুন কোন পথ তৈরি করতে পারে। সৌহার্দ্যপূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে অন্যের সাফল্য ও পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা করুন। আপনি সফল হচ্ছে না, কিংবা আপনার কোন অর্জন নেই-এমন তুলনায় কেন নিজেকে ছোট করবেন। নিজেকে বড় মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অন্যের পাশে থাকুন, ইতিবাচকভাবে অন্যের সাফল্য উদযাপন করুন। </p>