<p>তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিবেশীর জমি ও বসতভিটা দখলের অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রণজিৎ দাশের বিরুদ্ধে। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক থাকাকালে প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ওই জমি দখল করে রেখেছেন তিনি। প্রতিবেশী সাধন চন্দ্র দাশের ছেলে দীলিপ দাশ এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) একটি মামলা দায়ের করেন।</p> <p>দীলিপ দাশের অভিযোগ, ওই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাননি। রণজিৎ দাশের নির্যাতনের অপমান সইতে না পেরে দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে মারা যান তার পিতা সাধন চন্দ্র দাশ।</p> <p>সম্প্রতি দেশের পটপরিবর্তনের পর ১১ বছর পর আদালতে মামলা করার সাহস পেয়েছেন বলে জানান দীলিপ দাশ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নেতা ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রণজিৎ দাশকে প্রধান আসামি করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেছেন। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী আমির হোসাইন বাদীর পক্ষে মামলাটি আদালতে উপস্থাপন করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশনা দিয়েছেন।</p> <p>মামলায় বাদী দীলিপ দাশ বলেন, ‘২০১৩ সালের ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় রণজিৎ দাশ ২০-৩০ জন লোক নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে আমাদের বসতভিটার দুই কড়া জমি দখল করে নেন। পরে তার বাড়ির দেয়াল ভেঙে আমাদের জমিসহ একসঙ্গে করে নতুন করে দেয়াল দিয়ে দেন। ওই ঘটনা পরদিন স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে রণজিৎ দাশ ক্ষিপ্ত হন। দুই দিন পর তিনি রাত ৮টার দিকে টেকনাফ বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির অফিসে আমাদের ডেকে নিয়ে আমাকে ও আমার বাবাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।’ </p> <p>এ সময় দীলিপ দাবি করেন, ওই দিন অস্ত্রের মুখে তাদের খালি স্ট্যাম্পে দস্তখত করতেও বাধ্য করেন আওয়ামী লীগ নেতা রণজিৎ দাশ। </p> <p>দীলিপ দাশ আরো বলেন, কক্সবাজার মৌজায় তাদের চার শতক জমি ছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বসার পর রণজিৎ দাশ সেই জমি দখলের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।</p> <p>মামলার এজাহারে বলা হয়, সাধন দাশ ও তার ছেলে দীলিপ দাশ জমি ফিরে পেতে থানা পুলিশ ও নেতাদের কাছে গেলেও রণজিৎ দাশ প্রভাব খাটিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে রাখেন। ফলে তারা আইনগত সহযোগিতাও পাননি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় প্রতিনিয়ত আসামিদের প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করতেন। ফলে এত দিন তারা মামলা করতে পারেননি। </p> <p>কথা বলার একপর্যায়ে দীলিপ দাশ বলেন, শুধু তাদের বসতভিটা নয়, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে রণজিৎ রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের সুরেশ চন্দ্র দাশ ও সুনীতি বালা দাশের ৬ একর জমিও জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে যান। ওই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ত্যাগ করেন সুরেশ চন্দ্র দাশ ও সুনীতি বালা দাশ। পরে রণজিৎ ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সেই জমি নিজের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও আদালত সুরেশ চন্দ্র দাশের উত্তরাধিকারীদের পক্ষে রায় দেন। </p> <p>আওয়ামী লীগ নেতা রণজিৎ দাশ জমি দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি নিজেই পৈতৃক বাড়িতে থাকি। আমার নিজের কোনো জমি নাই। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে দেশে আইন আদালত আছে। বিষয়টি সবাই জানতেন।</p> <p>এক প্রশ্নের জবাবে রণজিৎ দাশ বলেন, আওয়ামী লীগ তো কাউকে মামলা করতে নিষেধ করেনি। </p>