<p style="text-align:justify">দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে অসহায় এক শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবকের বিয়ে দিয়েছে এলাকাবাসী। বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে কেউ দিয়েছেন টাকা, কেউ-বা চাল আবার কেউ দিয়েছেন ছাগল।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলার বড় জালালপুর গ্রামের দিনমজুর আফজাল হোসেনের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী রুবেল হোসেন। জালালপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিয়ের আয়োজন।</p> <p style="text-align:justify">এলাকাবাসী জানায়, ২০ বছর আগে ঝড়ে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে হাত দিয়ে ধরে গুরুতর জখম হন রুবেল হোসেন। তার জীবন বাঁচাতে দুটি হাতই কেটে ফেলতে হয়। তখন তিনি ১০ বছর বয়সী শিশু। এখন তিনি ৩০ বছর বয়সী যুবক। বাবা মারা গেছেন ৪ বছর আগে। দুটি হাত না থাকলেও কখনো ভিক্ষাবৃত্তি করেননি রুবেল। বাড়িতে ছাগল ও ভেড়া পালন করে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকম খেয়ে দিন পার করছিলেন। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা মারা যাওয়ায় তার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন মা আরজিনা বেগম। তাই গ্রামের সচেতন কয়েকজন যুবক একই উপজেলার চৌঘুরিয়া গ্রামের আকবার আলীর মেয়ে মুক্তার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেন। সবার আর্থিক সহযোগিতায় বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিশোধ করা হয় মোহরানার এক লাখ টাকা এবং উভয় পক্ষের খাওয়াদাওয়া।</p> <p style="text-align:justify">প্রতিবন্ধী রুবেলের মা আরজিনা বেগম সেই দুঃসহ দিনের স্মৃতিচারণা বলেন, ২০০৪ সালে আগস্ট মাসের কোনো দিন হবে। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বাড়ি বাইরে খেলতে যায় রুবেল। বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে একটি তার ছিঁড়ে পড়ে তার গায়ে। সে বুঝতে না পেরে তার দুই হাত দিয়ে ধরে। এতে ছেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুটি হাতসহ শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। আমার স্বামী দিনমজুর। দিন আনি দিন খাই। তার চিকিৎসা করানো মতো কোনো সহায়-সম্বল ছিল না। এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় চিকিৎসার কোনো ত্রুটি না হলেও তাকে বাঁচাতে দুটি হাতের কনুই পর্যন্ত কাটতে হয়। তখন থেকেই রুবেল ছাগল ও ভেড়া পালন করে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘চার বছর আগে আমার স্বামী মারা যান। কিন্তু ছেলে এখন সাবালক হয়েছে। তা ছাড়া তাকে তিন বেলা খাইয়ে দিতে হয়। আমি বৃদ্ধ হয়েছি। আমি মারা গেলে কে আমার ছেলেকে দেখবে-এমন চিন্তা তাড়া করে বেড়াত। তাকে বিয়ে দেওয়ার মতো কোনো সম্বল নেই। কেবা দিবে মেয়ে। তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে গ্রামের লোক মেয়ে ঠিক করে বিয়ের যাবতীয় খরচ বহনের ভার নিয়েছে। আজ আমি অত্যন্ত খুশি। সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন। তারা যেন সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারে।’</p> <p style="text-align:justify">বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা বড় জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা আসলাম হোসেন জানান, রুবেলের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো। তার দুটি হাত না থাকলেও কখনো ভিক্ষাবৃত্তি করেননি। নিজে পরিশ্রম করে উপার্জন করে সংসার চালান। তার মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে বিয়ে দেওয়া । তাই গ্রামবাসী মিলে উদ্যোগ নিয়ে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">মেয়ের বাবা আকবর আলী বলেন, ‘জামাইয়ের (প্রতিবন্ধী রুবেল) বিয়ের আগে খোঁজখবর নিয়েছি। তাকে দেখে মায়া হয়েছে। নিজের সন্তানের এমন হলে কী হতো, সেই ভাবনা থেকে তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছি। মেয়েও এ বিয়েতে রাজি। তার সঙ্গে বিয়ে হয়ে মেয়ে খুশি হয়েছে।’</p>