<p>আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে শাহবাগে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল দেশে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। তবে পুলিশের বাধায় শাহবাগে কর্মসূচি না করতে পেরে মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে সংগঠনটি।</p> <p>আজ শনিবার সকাল ১১টায় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে উপস্থিত হন মায়ের ডাকের সংগঠক এবং অংশগ্রহণকারীরা। এর আগেই সমাবেশ ঘিরে ছিল পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। সমাবেশ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ তাতে বাধা দেয়।</p> <p>পুলিশ সমাবেশের মাইক কেড়ে নিয়েছে অভিযোগ করে মায়ের ডাকের আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের ৪৪টি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা সমাবেশ আয়োজন করেছিলাম, আমাদের মাইক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ দেশে আমাদের দুঃখের কথাগুলো বলার অধিকার পর্যন্ত নেই।’</p> <p>তিনি জানান, মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত সমাবেশটিতে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পরিবার এবং সম্প্রতি গ্রেপ্তার বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরাও অংশ নিয়েছিলেন।</p> <p>এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা জোনের পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. আক্তারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রগ্রামের জন্য তারা কোনো অনুমতি নেয়নি। তাই এখানে তাদের প্রগ্রাম করতে নিষেধ করা হয়। তখন তারা আমাদের বলে, তাহলে আমরা প্রেস ক্লাবে গিয়ে প্রগ্রাম করব। তারপর তারা প্রেস ক্লাবে চলে যায়।’</p> <p>এরপর জাদুঘরের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রদক্ষিণ করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পৌঁছয় মায়ের ডাক। সেখানে সংগঠনটির মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।</p> <p>মানববন্ধনে গুমের শিকার বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারহানা আক্তার বলেন, ‘আমরা কী অন্যায় করেছি যে আমার স্বামীকে গুম করা হয়েছে। আমার স্বামীর কী দোষ আমি এটা জানতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিয়েন না, আপনার কাছে রেখে দেন। শুধু এটুকু বলেন, কেন আপনি আমার স্বামীকে গুম করেছেন। আর কিছু জানতে চাই না আপনার কাছে।’</p> <p>গুমের শিকার সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নি বলেন, ‘১০ বছর আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ নাই। আমরা রাস্তায় রাস্তায় ভাইয়ের জন্য কাঁদি। আমরা আমাদের কথা বলতে শাহবাগে দাঁড়িয়েছিলাম, কেন টেনেহিঁচড়ে আমাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন? আমরা কি এই দেশের নাগরিক না?’</p> <p>বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট দানবীয় সরকার মানুষের বুকের রক্তের ওপর দিয়ে, মানুষের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এই স্বজনহারা মা-বোনদের কথা, তাদের বুকের বেদনার কথা, তাদের জীবনের কথা কোনোটাই চিন্তা করছে না।</p> <p>তিনি আরো বলেন, অবৈধ, জবাবদিহিবিহীন, বিনা ভোটের সরকার আজকে নতুন করে পাতানো নির্বাচনের খেলা খেলছে। তিনি (শেখ হাসিনা) নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে আওয়ামী লীগের নেতাদের সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে, কতগুলো বিরোধীদলীয় দাসকে নিয়ে ভোট করছে। কারণ তাকে (শেখ হাসিনা) আরো অনেক দিন থাকতে হবে।</p> <p>নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন মানুষের সমস্ত মানবিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করে তারা (সরকার) একটি তামাশা তৈরির চেষ্টা করছে। পুলিশসহ এই সরকারের যত বাহিনী আছে, যত অত্যাচারই করুক, মায়ের ডাক তার পরও তাদের লড়াই অব্যাহত রাখছে।</p> <p>মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরষদের পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ডা. ফয়জুল হাকিম প্রমুখ।</p>