<p>২০২৪ ২৫ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৮ হাজার কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। </p> <p>আজ বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্সরুমে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই নীতিমালা ঘোষণা করা হয়।</p> <p>নীতিমালা অনুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। তবে গেল অর্থবছর বিতরণ হয়েছে ৩৭ হাজার ১৫৩ কোটি ৯০ লাখ।</p> <p>এবার চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এক হাজার ২৬৪ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মোট ঋণের অর্ধেক বা ৫০% দেবে ব্যাংক নিজেই আর বাকি অর্ধেক দেবে এনজিওর মাধ্যমে।</p> <p>দেশের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, কৃষি পেশায় যুক্ত কর্মী তিন কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার। দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১২ শতাংশ। মোট রপ্তানিতে কৃষিজাত পণ্যের শরিকানা প্রায় ৩ শতাংশ। এর সঙ্গে হিমায়িত মৎস্য ও পাটজাত দ্রব্য যোগ করা হলে মোট রপ্তানিতে কৃষির হিস্যা প্রায় ৭ শতাংশ। </p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, দেশে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহের জরুরি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৩৮,০০০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যমাত্রা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৮.৫৭ শতাংশ বেশি।</p> <p>উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে নির্ধারিত ৩৫,০০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকসমূহ কর্তৃক ৩৭,১৫৩.৯০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করা হয়েছে যা পূর্ববর্তী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বিতরণকৃত ৩২,৮২৯.৮৯ কোটি থেকে ৪,৩২৪.০১ কোটি টাকা বা ১৩.১৭ শতাংশ বেশি। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতায় বর সুদহারে কথাও ১৮৮৯ কোটি হতে। স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকসমূহকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০% কৃষি ও পল্লী ঋণ নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এবং আবশ্যিকভাবে উক্ত লক্ষ্যমাত্রার ৬০% শস্য ও ফসল খাতে, ১৩% মৎস্য খাতে এবং ১৫% প্রাণিসম্পদ খাতে বিতরণ করতে হবে।</p> <p>ব্যাংকসমূহের কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ কৃষি খাতেই বিনিয়োগের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড (বিবিএডিসিএফ)’ নামে একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকসমূহের অনর্জিত অংশ এ ফান্ডে জমা করা হবে এবং জমাকৃত অর্থের বিপরীতে তাদেরকে ২% হারে সুদ প্রদান করা হবে। এই কমন ফান্ডে জমাকৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে জারীকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার নির্ধারণ করে কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালার আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা হবে এবং মেয়াদ শেষে তহবিল ব্যবহারকারী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংককে ২% সুদসহ আসল পরিশোধ করবে।</p> <p>কভিড-১৯ অতিমারি উত্তর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কৃষি খাতের গুরুত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে আমদানি নির্ভর ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য আমদানি বিকল্প ফসলসমূহে ৪% রেয়াতি সুদহারে কৃষিঋণ বিতরণ অব্যাহত আছে। এ ছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নিমিত্ত কৃষির প্রধান প্রধান খাতসমূহে স্বল্পসুদে (৪% সুদহারে) ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) কোটি টাকা এবং গম ও ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১,০০০ (এক হাজার) কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিম চলমান। কভিড-১৯ এর সময় দরিদ্রতা বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশে গঠিত ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় ৫০০ (পাঁচ শ) কোটি টাকার একটি পুনঃ অর্থায়ন স্কিমও চলমান রয়েছে। এসব পুনঃ অর্থায়ন স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।</p> <p>২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট স্বল্প সুদে ঋণ প্রবাহ পৌঁছতে সহায়ক হবে। কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পল্লী অঞ্চলে গ্রামীণ অর্থায়নের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনেও এ নীতিমালা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।</p>