<p>বর্তমান যুগের কিছু মানুষকে বলতে শোনা যায় আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি আমাদের অন্তরে যথেষ্ট ভালোবাসা রয়েছে, ওয়াজের মাহফিলে যাই এবং মিলাদে অংশগ্রহণ করি; এই ভালোবাসা আমাদের মুক্তির জন্য যথেষ্ট। তারা নামাজ, রোজা, হজ করা আবশ্যক মনে করে না এবং তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করারও প্রয়োজন বোধ করে না। মূলত একশ্রেণির ধূর্ত মানুষ নিজেদের লোভ-লালসা চরিতার্থ করতে এসব কথা প্রচার করে এবং তারা নিজেদেরকে তাদের অনুসারীদের মুক্তিদাতা হিসেবে উপস্থাপন করে। এসব মানুষের ভুল ভাঙানোর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা আবু তালিবের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।</p> <p>বর্তমানে যত মানুষ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে, তাদের কারো ভালোবাসা আবু তালিবের সমকক্ষ নয়। আবু তালিব সেই ব্যক্তি, যিনি কোরাইশ সম্প্রদায়ের সবাই নবীজি (সা.)-এর সঙ্গ ও সহযোগিতা ত্যাগ করে চলে গেলেও তিনি তাঁর পাশে ছিলেন এবং কোরাইশদের পক্ষ থেকে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করেন। অথচ আমাদের ভালোবাসার দাবি হলো এমন—অন্যের সামান্য মন খারাপের ভয়ে শরিয়তের বিরুদ্ধাচরণে প্রস্তুত হয়ে যায়। নবীজি (সা.)-এর প্রতি আবু তালিবের ভালোবাসা লোক-দেখানো ভালোবাসা ছিল না। সত্যিকার ভালোবাসা ছিল।</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আবু তালিবের এত ভালোবাসা ও কষ্ট সহ্য করার পরও সে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে না। কেননা তার ভেতর ভালোবাসা ছিল কিন্তু আনুগত্য ছিল না। আর মুক্তির জন্য ভালোবাসার সঙ্গে আনুগত্যও আবশ্যক। আর যারা লোক-দেখানো ভালোবাসা ধারণ করে তাদের জন্য কবির সতর্কবার্তা হলো—‘ভালোবাসার মৌখিক দাবি করা অবিধেয় নয়। কিন্তু মুনাফিকের কথা আল্লাহর কাছে গোপন থাকে না।’</p> <p>ভালোবাসার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আলোচনা করতে হবে, তবে তা নিয়ম রক্ষা করেই করতে হবে। কবির ভাষায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর ভালোবাসার রূপ ছিল এমন—আমরা যা কিছু পড়েছি ভুলে গেছি, কেবল বন্ধুর আলোচনা ভুলিনি, তা প্রতিমূহূর্তে আমাদের ওজিহা হয়ে রয়েছে।’ তারা প্রতি মূহূর্তে নবীজি (সা.)-এর কথা, কাজ ও গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করতেন। আলোচনা করতেন যেন তাদের জীবন পুরোপুরি তাঁর নির্দেশ ও নির্দেশনা অনুসারে পরিচালিত হয়।</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নানাভাবে হতে পারে। ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে সহজ ও সুন্দর পদ্ধতি হলো বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। আর ভালোবাসার প্রমাণ মেলে যখন কোনো মুমিন সুন্নত ও তরিকা অনুসারে জীবন পরিচালনা করে। এ ছাড়া নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়। শাহ আবদুর রহিম দেহলভি (রহ.) প্রতিবছর রবিউল আউয়াল মাসে কিছু খাবার প্রস্তুত করে বিতরণ করতেন। একবার তিনি কোনো খাবার সংগ্রহ করতে না পেরে ছোলা ভেজে তা বিতরণ করেন। পরে রাতে স্বপ্ন দেখেন রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই ছোলা খাচ্ছেন। আল্লাহু আকবার! সত্যিকার ভালোবাসার প্রতিদান আল্লাহ এভাবে দেন। রবিউল আউয়াল মাসে আমরাও নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসার দান-সদকা করতে পারি, অসহায়-মিসকিনদের খাওয়াতে পারি।</p> <p><em>মাওয়ায়িজে আশরাফিয়া থেকে আলেমা হাবিবা আক্তারের ভাষান্তর</em></p>