<p>মানুষ জন্মগতভাবে একে অন্যের মুখাপেক্ষী। সবাই যখন নিজের প্রয়োজন পূরণে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে, তখন বান্দার দাসত্বের পূর্ণরূপ প্রকাশ পায়। এ জন্য হাদিসে দোয়াকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, দোয়া হলো ইবাদতের মগজ ও নির্যাস। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭১)</p> <p><strong>মানুষের কাছে বেশি চাইলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট</strong></p> <p>আল্লাহ তাআলা এমন একজন দাতা যে চাইলে তিনি খুশি হন, বরং না চাইলে অসন্তুষ্ট হন। আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর দয়া ও রহমত চাও। কেননা চাইলে তিনি খুশি হন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭১)</p> <p><strong>দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করা</strong></p> <p>মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই হৃদয়ের আর্তনাদ শোনেন। তিনি অবশ্যই কবুল করবেন এমন বিশ্বাসের সঙ্গে দোয়া করতে হয়। কেননা তিনি প্রত্যেকের ধারণা অনুযায়ী দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার সঙ্গে তেমন ব্যবহার করি আমার প্রতি সে যেমন ধারণা রাখে। আর সে যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার সাথেই থাকি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮৫৬, মুসলিম, হাদিস : ৭০০৫)</p> <p><strong>দোয়া কখনো বিফলে যায় না</strong></p> <p>আল্লাহ তাআলা কখনো কখনো দোয়ার ফলাফল প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে থাকেন। কখনো দোয়ার প্রতিদান আখিরাতের জন্য রেখে দেন। অতএব, দোয়া কবুল হয় না এমন ধারণা করা ভুল। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যদি কোনো মুসলমান কোনো জিনিস চাওয়ার জন্য আল্লাহর দিকে স্বীয় চেহারাকে ফেরায়। অর্থাৎ তাঁর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করেন। হয়তো ওই জিনিস তাকে তৎক্ষণাৎ দান করেন অথবা দুনিয়া ও আখিরাতে তার জন্য জমা করে রাখেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৯৭৮৫)</p> <p><strong>দোয়া কবুল হওয়ার সময়</strong></p> <p>দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ বিশেষ কিছু সময় আছে। তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত উত্তম সময়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে আমাদের রব আমাদের নিকটতম আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে আমার কাছে দোয়া করবে? আমি তার দোয়া কবুল করব। আমার কাছে কে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে দান করব। আমার কাছে কে তার গুনাহ মাফ চাবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। (বুখারি, হাদিস : ৬৩২১)</p> <p><strong>দোয়া করার পদ্ধতি</strong></p> <p>হাত তুলে দোয়া করা সুন্নত। উভয় হাতের আঙুলগুলো স্বাভাবিক রেখে সিনা বরাবর হাত রেখে দোয়া করতে হয়। সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার অনেক শরম ও আত্মমর্যাদা আছে ৷ সুতরাং মানুষ যখন চাওয়ার জন্য তাঁর নিকট দুহাত উত্তোলন করে, তখন তিনি সেই হাত দুটিকে ব্যর্থ ও খালি ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৫৬, আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৮৮)</p> <p><strong>দোয়ার আগে করণীয়</strong></p> <p>দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা জরুরি। দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার সহজ উপায়। ফাদালা ইবনে উবাইদ (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) শুনতে পান যে জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা ও নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ ছাড়া দোয়া করতে শুরু করে। তিনি বলেন, সে তাড়াহুড়া করেছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৮১, তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৬)</p> <p><strong>দোয়া শেষ করার নিয়ম</strong></p> <p>আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদের মাধ্যমে দোয়া শেষ করতে হয়। তারপর হস্তদ্বয় দ্বারা মুখমণ্ডল মুছে নিতে হয়। আস-সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) দোয়ার সময় তাঁর ওপরে হাত উত্তোলন করতেন এবং তাঁর দ্বারা মুখমণ্ডল মাসাহ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৯২)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের সব দোয়া কবুল করুন।</p>