<p>বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও হাওরে পরিমিত পানির উপস্থিতিতে হবিগঞ্জে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। খাল, বিল ও ঝিলে পানি থাকায় সহজেই জাগ দিয়ে পাট ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষকরা। তবে বাজারে পাটের মূল্য কম থাকায় কৃষকদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা। এ ছাড়া হবিগঞ্জে সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্র না থাকা ও সরকারি মূল্য নির্ধারিত না থাকায় দালাল ফড়িয়াদের মাঝে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের।</p> <p>হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা পাট আবাদের জন্য বিখ্যাত। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাট কলে বিক্রি করা হয় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পাট। পাট বিক্রির জন্য মাধবপুর উপজেলা সদরে রয়েছে ছয়টি আড়ত। এ ছাড়া মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন বাজারে রয়েছে আরো ছয়টি আড়ত। এসব আড়ত থেকে প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে পাট যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাটকলগুলোতে।</p> <p>ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় পাশে মাধবপুর উপজেলার নিচু জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। লাখাই উপজেলায়ও নিচু জমিতেও আবাদ হয়েছে বিভিন্ন জাতের পাট। </p> <p>হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরে আলম জানান, হবিগঞ্জ জেলায় এ বছর ৪১০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এর মাঝে দেশি বিভিন্ন জাতের পাট আবাদ হয়েছে ৯৫ হেক্টর জমিতে। তোষা পাট-৫ আবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে এবং তোষা পাট-৮ আবাদ হয়েছে ৪০ হেক্টর জমিতে। কেনাফ পাটের মাঝে কেনাফ-৩ আবাদ হয়েছে ১২০ হেক্টর এবং কেনাফ-৫ আবাদ হয়েছে ৯৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া মেস্তা-৩ পাট আবাদ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে।</p> <p>তিনি আরো জানান, গত বছর জেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৪৯৯ বেল পাট উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর ভালো আবহাওয়ার কারণে ফলন বেশি হবে। চার হাজার বেল পাট উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।</p> <p>তিনি বলেন, পাট উৎপাদনের ব্যয় তেমন নেই। যে জমিতে পাট আবাদ করা হয় সেই সময়ে তা পতিত থাকে। এ ছাড়া পাটের শাক, পাটখড়ি থেকেও কৃষকরা লাভবান হন।</p> <p>মাধবপুর পৌর এলাকার মা ট্রেডার্সের আড়তদার সিরাজ মিয়া বলেন, ‘এ বছর দুই হাজার টাকা মনে পাট বিক্রি হচ্ছে। আরো বেশি দাম না পেলে পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমে যাবে।’ মাধবপুরকে পাট চাষ ও বিক্রির একটি কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু মাধবপুর উপজেলার ১২টি আড়ত থেকে প্রতিবছর ৭০-৮০ হাজার মণ পাট বিক্রি হয়। আড়তদাররা প্রতি মণে ১০ টাকা কমিশন পান। মাধবপুরের আড়তে শুধু হবিগঞ্জের পাটই বিক্রি হয় না, পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার পাটও আসে।</p> <p>মাধবপুর উপজেলার বুল্লা গ্রামের কৃষক করম আলী জানান, অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে তারা পাট চাষ করেন। নিজেদের প্রয়োজনের পাট রেখে অবশিষ্ট পাট বাজারে বিক্রি করেন। একসময় ব্যাপকভাবে পাট আবাদ হলেও এখন পাট আবাদ কমেছে। কারণ ভালো দাম পাওয়া যায় না। ভালো বীজেরও অভাব রয়েছে। অন্যান্য ফসলের জন্য সরকার প্রণোদনা দিলেও পাটের জন্য কোনো প্রণোদনা ও সহযোগিতা পাওয়া যায় না কৃষি বিভাগ থেকে।</p> <p>তিনি আরো জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৮-১০ মণ পাট উৎপাদন হয়। কৃষকরা পাট বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে পাটকাঠিও বিক্রি করেন। প্রতিটি পাটকাঠি ১ টাকা দরে বিক্রি হয়।</p> <p>সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভিসি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার আজীবন সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, ‘পাটপণ্য পরিবেশ বান্ধব ও জনপ্রিয়। পরিকল্পনার অভাবে ও সিনথেটিক পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে আমাদের সোনালি ফসলটি হারিয়ে যেতে বসেছে।’ সরকারিভাবে বিভিন্ন ফসলের বীজ কৃষকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক ফসলের জন্য প্রকল্প ও প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা করা হয়। পাটের জন্যও অনুরূপ ব্যবস্থা করতে হবে। </p> <p>তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে কৃষকদের ভালো বীজ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে ফসলের সুদিন ফিরবে। পাশাপাশি কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দিকেও নজর দিতে হবে। পাট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এই পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়ায় এখন পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে হবে।</p>