<p style="text-align:justify">গত কয়েক দিনের নাশকতার ক্ষত আস্তে আস্তে সামনে আসতে শুরু করেছে। এই তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি ট্রাফিক পুলিশও। রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশের ৭৮টি বক্সে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। চালানো হয়েছে নজিরবিহীন লুটপাট। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সদস্যরা। ডিউটি শেষে বসে ক্লান্তি দূর করার, একটু পানি পান ও খাবারের জন্য মিলছে না মাথার ওপর কোনো ছাদ।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে মিরপুর-১০ এর মোড়ে ওভার ব্রিজের চতুর্দিকে সিঁড়ির মুখে একটি নোটিশ ঝুলানো। ওভার ব্রিজ ব্যবহার করা যাবে না মর্মে জানানো হয়েছে নোটিশে। পরে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হলো ওভার ব্রিজের ওপরে দেওয়া ছাউনির পুড়ে যাওয়া চিত্র দেখে। এখনো ক্ষত শুকায়নি এই ওভার ব্রিজের। আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, এই মোড়ে থাকা ট্রাফিক বক্সে আগুন লাগার পর সেটি দাউদাউ করে জ্বলে মেট্রো রেলের অংশ পর্যন্ত পৌঁছে। যার পোড়া এবং কালচে বর্ণ এখনো মুছে যায়নি। খুব সহজে অনুমান করা যাচ্ছে কী পরিমাণ আগুন লেগেছিল।</p> <p style="text-align:justify">তছিমুর নামের একজন ট্রাফিক সদস্য জানান, ঘটনার দিন তারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। ট্রাফিকের প্রতিটি সদস্য মাঠে ওইদিন আন্দোলনকারীদের সামাল দিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর ফাঁকে তাদের ট্রাফিক বক্সে আগুন দেওয়া হয়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ওভারব্রিজে। আন্দোলনকারীদের ভিড় এতটাই ছিল যে, দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসাটাও ছিল দুরূহ ব্যাপার। এতে চোখের সামনেই পুড়ে যায় সব।  </p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা শুধু ট্রাফিক বক্সে আগুন দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। তারা ট্রাফিক বক্সের জানালা, দরজা, এসিসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে।</p> <p style="text-align:justify">ট্রাফিক সদস্যরা বলছেন, গত ১৯ ও ২০ জুলাই ভাঙচুরের ঘটনা বেশি ঘটেছে। হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদের মারধরের পাশাপাশি পুলিশের স্থাপনাগুলোকেই বেশি টার্গেট করে। পরে সেগুলোতে তারা হামলা চালায়। কোনোটাতে আগুন দেয়, কোনোটাতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ৭৮টি ট্রাফিক বক্সের কোনোটির আগের চিহ্ন নেই। এসব ট্রাফিক বক্সে যেসব মালামাল ছিল সবই খুলে নেওয়া হয়েছে। ভেঙেচুরে টুকরো টুকরো করা হয়েছে প্রতিটি জিনিসপত্র।</p> <p style="text-align:justify">মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ের দক্ষিণ পাশে নার্সারির ভেতরে মোহাম্মদপুর ট্রাফিক এডিসির কার্যালয় ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। এই অফিসের দরজা জানালা কোনোটাই নেই। নেই সাইনবোর্ডও। দেখে চেনার উপায় নেই এক সপ্তাহ আগে এটি ট্রাফিক পুলিশের অফিস ছিল।</p> <p style="text-align:justify">তিন রাস্তার মোড়ের বিভিন্ন সিএনজি চালক এবং দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলাকারীরা টার্গেট করে ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করেছে। এর ভেতরে যত মালামাল ছিল সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে তারা। তবে এসব লুটপাটকারী কোনো ছাত্র ছিল না। অধিকাংশই টোকাই এবং স্থানীয় যুবক ছিল বলে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। তাদের হাতে ছিল লাঠি ও ধারালো অস্ত্র। ফলে কেউ তাদের সেদিন বাধা দেয়নি।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মিরপুর ও মোহাম্মদপুরেই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুলশান ট্রাফিকের ডিসি অফিসও। এই অফিসে বেশি ভাঙচুর করা হয়েছে। আগুন না দেওয়া হলেও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। অফিসটির মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তারা ট্রাফিক সদস্যদের মোটরসাইকেল পর্যন্ত নিয়ে গেছে। যেগুলোর হদিস এখন মেলেনি।</p> <p style="text-align:justify">ধারণা করা হচ্ছে, সুযোগসন্ধানীরা হামলাকারীদের সাথে ঢোকে এসব সরিয়ে নিয়ে গেছেন। তাদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। যদিও এখনো এসব ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা যায়নি।</p> <p style="text-align:justify">গুলশান ট্রাফিকের ডিসি অফিসে ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালানো হয়েছে। অফিসের সামনে পার্ক করা নয়টি মোটরসাইকেল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, এলইডি মনিটরসহ প্রায় ৬২ লাখ টাকার জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে। এমনকি ট্রাফিক সদস্যদের ব্যবহার করা লেগুনাটি নিয়ে গেছে লুটকারীরা।</p> <p style="text-align:justify">গুলশান ট্রাফিকের এডিসি হাফিজুর রহমান বলছিলেন, কেসের রেকর্ডসংক্রান্ত কাগজপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। এতে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে এটা বলে বোঝানো যাবে না। এরা সুযোগ সন্ধানী ও তৃতীয় পক্ষের কেউ বলে মনে করছেন তারা। ট্রাফিকের সদস্যরা বলছেন, তারা চাকরি জীবনে এমন তাণ্ডব দেখেননি। এই অবস্থা থেকে তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। আপাতত তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করছেন।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পুরো ঢাকায় ৭৮টি ট্রাফিক বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব ট্রাফিক বক্সে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। খুব শিগগির আমরা ট্রাফিক বক্সগুলো নতুন করে মেরামত করব। আপাতত আমাদের ট্রাফিক সদস্যরা বক্স ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের এখন বসার জায়গাটুকুও নেই।’</p>