<p>মালয়েশিয়ার সর্বপ্রাচীন মসজিদ কামপং লাউত। এটি দেশটির সর্বপ্রাচীন কাঠের স্থাপনাও। কামপং লাউত মালয়েশিয়ার কেলানতান প্রদেশের তুমপুত জেলায় অবস্থিত। কামপং লাউত তুমপুতের সাগরের তীরবর্তী একটি এলাকা, যা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত।</p> <p>এখানে হাজার বছর ধরে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে মিশে বসবাস করছে। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টীয় ১৫ শতকে মসজিদটি প্রথম নির্মাণ করা হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার এর সংস্কারকাজ করা হয়েছে। চাম্পা রাজ্যের একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল মসজিদটি প্রথম নির্মাণ করেন।</p> <p>জাভার সুফি আলেম, যাঁরা ‘ওয়ালিসংগো’ নামে পরিচিত, তাঁরাই কামপং লাউত মসজিদ নির্মাণ করেন। তাঁরা ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপ থেকে এখানে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। এ জন্য জাভার দেমাক গ্রেট মসজিদের সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।</p> <p>বলা হয়, ওয়ালিসংগোরা যখন জাভা থেকে চাম্পা যেতেন, বা সেখান থেকে ফিরতেন, তখন রাস্তায় কামপং লাউত এলাকায় বিশ্রাম গ্রহণ করতেন। ফলে এখানে তাঁরা একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদেই তাঁরা মানুষকে ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষা দিতেন। ভক্ত ও মুরিদদের নিয়ে অবস্থান করতেন।</p> <p>আবার কারো মতে, ১৪০১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি জাভা দ্বীপে তৈরি করা হয় এবং এখানে তা সংযুক্ত করা হয়। অন্যদের মতে, জাভা সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে মুসলিম বণিকদের জাহাজ বিধ্বস্ত হয়। তাঁরা আশ্রয় নেন কামপং লাউতে। তাঁদের হাতেই নির্মিত হয়েছিল ঐতিহাসিক এই মসজিদ।</p> <p>কেলানতান সালতানাতের সময় (১৮৫৯-১৯০০ খ্রি.) কামপং লাউত মসজিদটি বিশেষ রাজনৈতিক গুরুত্বও লাভ করেছিল। ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সুলতান এখানেই দেখা করতেন। এ সময় মসজিদের সম্প্রসারণের কাজ হয়। এতে ২০টি নতুন পিলার, তিন স্তরবিশিষ্ট ছাদ, ছাদের নিচে ছোট কক্ষ, একটি মিনার ও পানির ট্যাংক যুক্ত করা হয়। এ সময় মসজিদের এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়।</p> <p>ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ১৯৭০ সালে এটি কেলানতান সরকারের হাতে হস্তান্তর করা হয়। অবশ্য কেলানতানে ১৯২৬ ও ১৯৬৬ সালে সংঘটিত দুটি বন্যায় কামপং লাউত মসজিদ প্লাবিত হয়। দ্বিতীয় বন্যার সময় মসজিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যার পানিতে মসজিদের একটি অংশ ভেসে নদীর কাছে চলে যায়। বন্যার পর তা আবার সংস্কার করা হয়।</p> <p>কামপং লাউত মসজিদ নির্মাণে আরবীয় রীতি-নীতির পরিবর্তে স্থানীয় রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। স্থানীয় পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি লক্ষ্য রেখেই হয়তো এমনটি করা হয়েছে। নির্মাণ কাঠামোর দিক থেকে মসজিদটি ‘নুসান্তারা শৈলী’ দ্বারা প্রভাবিত। কেননা এর নিচে চতুর্কোণ মেঝে, তিন স্তরবিশিষ্ট ছাদ এবং ছাদের শীর্ষদেশে টুপিবিশেষ ‘ইতিক’। স্থানীয় লোকবিশ্বাস অনুসারে ‘ইতিক’ ড্রাগনের প্রতীক। তবে মসজিদের শীর্ষে স্থাপিত ইতিকে ড্রাগনের কোনো ছাপ নেই।</p> <p>মসজিদের মূল প্রার্থনাকক্ষ ছাড়াও এতে রয়েছে বারান্দা, বালাই লিনট্যাং (উন্মুক্ত হল) ও ওয়াকাফ ওয়ারাং কায়া (নামাজের পর অভিজাতদের বিশ্রামের স্থল)। ওয়াকাফটি ১৯৫০ সালে ওয়ারাং কায়া হুসাইন নির্মাণ করেন। মসজিদের প্রধান প্রবেশপথের বিপরীতে মূল প্রার্থনাকক্ষের সামনে বালাই লিনট্যাং অবস্থিত। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মুহাম্মদ চতুর্থ এটি নির্মাণ করেন।</p> <p><em>সূত্র : মস্ক পিডিয়া ডটকম, উইকিপিডিয়া ও প্রবন্ধ : কনস্ট্রাকশন টেকনিক অব দ্য ট্রেডিশনাল কামপং লাউত ওল্ড মস্ক</em><br />  </p>