একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক রূপান্তরে এক বিস্ময়কর সময় অতিক্রম করেছে। আর তার স্বীকৃতি রয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়, বরেণ্য ব্যক্তিদের বক্তব্যে, গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে, এমডিজি, এসডিজি অর্জনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তির স্বীকৃতিতে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির আকার ছিল (জিডিপির ডলার মূল্যে) ১১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে উন্নীত হয়েছে ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে (বেড়েছে চার গুণ)। মাথাপিছু আয় ছিল ২০০৯-১০-এ ৭৮০ মার্কিন ডলার, যা ২০২১-২২-এ উন্নীত হয়েছে দুই হাজার ৬৮৭ মার্কিন ডলারে (৩.৪৪ গুণ)।
প্রবৃদ্ধির নতুন চলকের সন্ধানে
- ড. শামসুল আলম

২০১০-এ মধ্যম দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১.৫ শতাংশ, যা ২০২০-২১-এ কমে হয়েছে ২৮.৭ শতাংশ। চরম দারিদ্র্য ছিল ১৭.৫ শতাংশ, তা নেমে এসেছে ৫.৬ শতাংশে, এক দশকে কমেছে ১২ শতাংশ পয়েন্ট।
ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের (১৫ মার্চ ২০২১) প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ৫০ বছরে অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে বিভিন্ন ফ্রন্টে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছে। ব্লুমবার্গ ম্যাগাজিন (৫ জুন ২০২১) শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশের উত্থান হচ্ছে (বাংলাদেশ ইজ অন দ্য রাইজ)’ এবং ভারত ও পাকিস্তানের তাতে নজর দেওয়া উচিত। টাইমস অব ইন্ডিয়া (৩০ মার্চ ২০২১) শিরোনাম দিয়েছে বাংলাদেশ গত ১০ বছরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতকে পেছনে ফেলেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল দেশগুলোর একটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয়বারের মতো ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে প্রণীত হয় প্রথমবারের মতো রূপকল্প ২০২১ (ভিশন ২০২১)। এরই আলোকে প্রণীত হয় প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১)। এই দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প দলিলের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিকল্পনাজগতে মৌল পরিবর্তন (প্যারাডাইম শিফট) ঘটে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে বাংলাদেশ মাইলফলক কী কী অভীষ্ট অর্জন করবে, তা উল্লিখিত হয়। যেমন—মাথাপিছু আয় ২০২১ সালে দুই হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, ২০১৩-১৪ সালের মধ্যে চালে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জেন্ডারসমতা অর্জন, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যাপক প্রসার, প্রবৃদ্ধির হার ২০১৫ সালে ৭ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশের ওপর অর্জন। বলা হয়েছে, দুটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে (ষষ্ঠ ২০১১-২০১৫ ও সপ্তম ২০১৬-২০২০) এসব মাইলফলক অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কর্মসূচি সন্নিবেশিত করে তৈরি হবে। সেভাবেই যথাসময়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রূপকল্প দলিলের সব মাইলফলক শুধু অর্জিতই হয়নি, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লিখিত অভীষ্টের লক্ষ্য অর্জন ছাড়িয়ে যায়।
এর পরই প্রণীত হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫, যা প্রণয়নের ভিত্তি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় রূপকল্প দলিল ২০৪১; যার মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। স্মরণ করা যায়, প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যে দেশ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় শতবর্ষী বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে (বক্ষ্যমাণ নিবন্ধকার গত দশকব্যাপী উল্লিখিত এসব স্বপ্ন দলিল ও পরিকল্পনা প্রণয়নে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়েছেন)। গত দেড় যুগে বাংলাদেশ এগিয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক। এই পরিকল্পনাগুলোর মধ্য দিয়েই ‘এক নয়া জাতীয় পরিকল্পনা যুগের সূচনা হয়’।
রূপকল্প দলিল ও তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো জাতীয় সত্তাতাড়িত, দেশজ বাস্তবতা ধারণ করে জাতীয় নেতৃত্বের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রণীত। আশির দশকের কাঠামোগত সমন্বয়, নব্বইয়ের দশকের ওয়াশিংটন ঐকমত্য, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের পিআরএসপির উন্নয়ন অভীষ্টবিহীন দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যর্থতা এবং দ্বিতীয় দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের জনতুষ্টিবাদী অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞায় যোগাযোগ অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন নয়া প্রবৃদ্ধি যুগের সূচনা করে। প্রবৃদ্ধির প্রভাবক মূলসূচকগুলো ছিল, যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ও বহুমুখী বাজার সম্প্রসারণ, সেবা ও শিল্প খাতের দ্রুত বিকাশ, অব্যাহত রপ্তানি ও প্রবাস আয়।
অব্যাহত এই প্রবৃদ্ধির যাত্রায় প্রথম বিপত্তি ঘটায় ২০২০ সালের শুরুতে কভিডের বিস্তার। অবাধ জনচলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ে। দেশের অভ্যন্তরে সব খাতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। সাহসী ব্যাপক প্রণোদনা কার্যক্রম চালাতে সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়াতে হয় প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার। আর্থিক শৃঙ্খলার ওপর প্রথম চাপ আসে, যা ছিল অভাবিতপূর্ব। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে আসে আগের বছরের ৮.১৫ থেকে ৩.৪৫ শতাংশে। কভিডকালে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সৃষ্ট দেশব্যাপী অবকাঠামো ও সম্প্রসারিত বাজারব্যবস্থার কার্যকারিতায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৬.৯৪ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.১ শতাংশ, যা ছিল উন্নত অর্থনীতিগুলো তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন।
এই পুনরুত্থানকালেই আসে নতুন বিপত্তি, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ে। জ্বালানি তেল ও সমগ্র বাণিজ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি অত্যধিক বেড়ে যায়, যার ফলে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি পরিবাহিত হয়। আমদানি সংকুচিত করতে হয়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে হয়। মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোতে নীতি সুদহার নজিরবিহীনভাবে বাড়ানো হয়। মূল্যস্ফীতি ও নীতি সুদহার বৃদ্ধির কবলে পড়ে বাংলাদেশের টাকার বড় রকমের মূল্যমান কমাতে হয় (২৮ শতাংশ টাকার মান কমে যায়)। উন্নত অর্থনীতির উচ্চ নীতি সুদহার, টাকার অবমূল্যায়নে বর্ধিত আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে রিজার্ভ সংকটের সূত্রপাত ঘটে। বিনিয়োগ সংকুচিত হয়। অর্থনীতির এমন টালমাটাল অবস্থায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার নেমে আসে ৫.৭৮ শতাংশে। কভিড সংকট-উত্তর প্রবৃদ্ধি পুনরুত্থানকালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সংকুচিত মুদ্রা সরবরাহনীতি, বেসরকারি বিনিয়োগে মন্থরতা, জাতীয় নির্বাচনোত্তর প্রায় সারা দেশে দলগত অন্তঃকলহ ও সহিংসতায় উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব, কৃষিতে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির নিম্নহার, বিদেশি বিনিয়োগ কম আসা ইত্যাদি মিলিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার গড় স্বাভাবিক ধারায় (অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রক্ষেপিত সাড়ে ৮ শতাংশ) কবে ফিরবে? আমাদের অর্থনীতির আবার কবে পুনরুত্থান ঘটবে?
জনসমর্থিত নতুন সরকার যাত্রা শুরু করেছে। আন্তর্দলীয় রাজনৈতিক হারাকিরি নেই। ছোট-বড় সব অর্থনীতিই ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়াস চালাচ্ছে। ফেডারেল নীতি সুদহার এখন কমানোর কথা হচ্ছে। প্রধান অর্থনীতিগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। আমাদের রিজার্ভ পরিস্থিতির অবনতি থেমেছে। মুদ্রাপাচারের বিষয়গুলোতে বিএফআইইউ দৃশ্যমান সক্রিয়। এখন সমাজে আশা-জাগানিয়া প্রশ্ন, আবার প্রবৃদ্ধির উচ্চগামিতা কিভাবে অর্জন করা যায়? প্রবৃদ্ধি অর্জনে রপ্তানি ও প্রবাস আয় ইতিবাচক ধারায় থাকলেও প্রবৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে সাড়ে ৬, ৭ ও ৮ শতাংশে উন্নীত করতে নতুন চলকের সন্ধানে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। দেশে নিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, আমদানিতে চাপ কমানোর জন্য কৃষির অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তথাপি এ খাতের প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত নিম্নমুখী। ২০০৯-১০-এ কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.১৫ শতাংশ, ২০১৪-১৫-তে ৩.৩ শতাংশ এবং ২০২২-২৩-এ ২.৬১ শতাংশ।
কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে হলে বাণিজ্যিক কৃষিই একমাত্র পথ। প্রায় ৯০ শতাংশ ছোট জোত-জমা এবং প্রান্তিক চাষি। বাজার উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ তাঁদের কম। ব্যাপক রপ্তানি উদ্বৃত্ত উৎপাদন তাঁদের দ্বারা সম্ভব নয়। আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল কৃষিতে সরবরাহ অনিশ্চয়তা কাটানো, উচ্চ প্রযুক্তি গ্রহণ ও বাণিজ্যিক কৃষি প্রান্তিক চাষি দিয়ে সম্ভব নয়। স্কেল ইকোনমি (বৃহৎ আকৃতির সুবিধাবঞ্চিত) তাঁদের প্রতিকূলে। তাই খামার জোত-জমা বড় করার নীতি গ্রহণ (উদার ভূমিনীতিতে যেতে হবে), ফসল উৎপাদন প্লাস্টিক হাউস/গ্রিনহাউসে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন কৃষি-ব্যবসার (Agribusiness) দ্রুত প্রসারণ। রপ্তানি বহুমুখীকরণে সবাই একমত, তবে নীতি সংস্কার সেভাবে হচ্ছে না। আমরা মোট প্রায় এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ পণ্য রপ্তানি করি। সাকল্যে রপ্তানির ৮৪ শতাংশ আসে শুধু গার্মেন্টস পণ্য থেকে। বলা হয়, ১৭০টি দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করি, যা সাকল্যে এক বিলিয়ন ডলার বা তার কাছাকাছি। এক বিলিয়নের ওপর পণ্য রপ্তানি করি হাতে গোনা দু-তিনটি আইটেম। পণ্য রপ্তানির বড় বাধা আমাদের ট্যারিফ হার। অর্থনীতিবিদদের বহু পরামর্শ সত্ত্বেও আমাদের গড় ট্যারিফ হার এখনো ২৮ শতাংশ, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গড় ১৪ শতাংশ। আমাদের রপ্তানিকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে, রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হলে দ্রুত ট্যারিফ বা রপ্তানি কর যুক্তিযুক্ত করা প্রয়োজন। উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা না থাকলে দেশীয় পণ্য বলেই সংরক্ষণের নীতি পরিহার করা অতি আবশ্যক।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বাড়াতে হলে বাজারজাত সব পণ্য এখন হতে হবে আন্তর্জাতিক মান ও গুণ সম্পন্ন এবং সেসব পরিবেশবান্ধবভাবে উৎপাদন করতে হবে। সব পণ্য বাজার এবং সরবরাহ চেইনের সব স্তরে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। শ্রমবাজারকেও দক্ষ ও প্রযুক্তি সহায়ক হতে যথাযথ বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার। আমাদের প্রবৃদ্ধির অন্যতম চলক প্রবাস আয় বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করে প্রত্যেকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন সম্ভব নয়। বাজার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। বাজার কার্যক্রম পরিচালনা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে নির্মোহভাবে আইনের শাসন প্রয়োজন। ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। প্রবাস আয়ের মতোই আউটসোর্সিং আয় কর্মসংস্থান ও আমাদের বৈদেশিক আয় বাড়াতে পারে। আউটসোর্সিং আয় হতে পারে আগামী দিনগুলোতে প্রবৃদ্ধির অন্যতম চলক। পৃথিবীর আউটসোর্সারদের মধ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ১৫ শতাংশ এবং এ থেকে আয় প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। এসবই হতে হবে সমন্বিত পরিকল্পনামাফিক, যা প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন আসন্ন নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২৬-২০৩০)।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক পরিকল্পনা কমিশন সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
সম্পর্কিত খবর

বাবনপুরে জেগে আছেন শহীদ আবু সাঈদ
- ড. মো. ফখরুল ইসলাম

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে জুলাই ২০২৪ মাসটি এক অনন্য মর্যাদার দাবিদার। এই মাসে বারবার রক্ত ঝরেছে, শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার আহ্বানে কেঁপে উঠেছে শাসকের প্রাসাদ। সেই উত্তাল জুলাইয়ের সূচনা ঘটেছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মাটি রঞ্জিত করে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তে। পীরগঞ্জের বাবনপুর নামক গ্রামে একটি বাঁশের বেড়া দেওয়া কবরে তিনি শুয়ে আছেন নীরবে, নিঃশব্দে।
রংপুরে শিক্ষার বাতিঘর হয়ে উঠেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ বাণিজ্য, রাজনৈতিক দখল ও অবমূল্যায়নের কারণে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বারবার পরিণত হয়েছে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরিতে।
জুলাই বিপ্লব তাই কেবল রংপুরের বা বেরোবির নয়।
এই শহীদ যেন আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশে ছাত্ররাই বারবার যুগ পরিবর্তনের সূচনা করেন। হোক তা ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার সংগ্রাম কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই। আমরা চাই, এই শহীদের রক্ত বৃথা না যাক।
জুলাই বিপ্লবের এই প্রথম শহীদের স্মরণে রাষ্ট্র কি আরো একটু নত হবে, নাকি আবারও চলবে এড়িয়ে যাওয়ার নীলনকশা? যদি তা-ই হয়, তবে আগামী দিনগুলো আরো অস্থির, আরো উত্তাল হবে।
‘যেখানে বাধাগ্রস্ত হবে, সেখানেই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে’—এই চেতনা দেরিতে এলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে রাষ্ট্রযন্ত্রের চেহারার ভেতরে, যা দিন দিন হয়ে উঠছে আরো দুর্বিনীত, অসহনশীল ও জনবিচ্ছিন্ন। যখন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পাস করার পর চাকরির জন্য ঘুরে বেড়ান, তাঁদের দাবি উপেক্ষা করে, বিরোধিতা করে, এমনকি দমন করতে গিয়েই সরকার তার আসল চেহারা উন্মোচন করে। ঠিক এখানেই জুলাই এসে দাঁড়িয়েছিল প্রতিবাদের ভাষা হয়ে। এটি কেবল একটি মাস নয়, এটি একটি ধারণা, একটি রাজনৈতিক চেতনা, একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার নাম, যা শেখায় জুলুমের বিরুদ্ধে চুপ থাকা মানেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। তাই যখনই কোথাও প্রতিবাদ বাধাগ্রস্ত হবে, যখনই মত প্রকাশের অধিকার পদদলিত হবে, তখনই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে প্রতিরোধের এক ছায়াছবির মতো।
বাবনপুরে শায়িত জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ, তাঁর জীবন দিয়ে আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করে রাখা যায় না। তাই তাঁর মৃত্যু আর দশটি মৃত্যুর মতো নয়, বরং এটি এক বিস্মৃত সময়কে জাগিয়ে তোলার মুহূর্ত, যেখানে জুলাই আবার ফিরে এসেছে জনতার পাশে দাঁড়াতে।
এখন বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে, কর্মক্ষেত্রে, সংবাদমাধ্যমে, এমনকি সংসদের ভেতরেও যদি অন্যায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেখানেই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে। কারণ এই মাস শেখায় শুধু স্মৃতিচারণা নয়, স্মৃতি দিয়ে বাস্তব পরিবর্তনের দাবিও তোলা যায়।
তাই আমাদের দায়িত্ব এই শহীদের মৃত্যু যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। রাষ্ট্র যদি কখনো ন্যায়ের পথ ছেড়ে নিপীড়নের দিকে হাঁটে, তাহলে প্রতিটি গ্রামে বাবনপুরের মতো একেকটি জুলাই জন্ম নিতে পারে।
এমন সময় হয়তো আবারও প্রশ্ন উঠবে, জুলাই-জুলাই বলে এত মাতামাতি কেন? আমরা তখন উত্তর দেব, এর কারণ আমাদের প্রতিবাদের জায়গাগুলো একে একে নিঃশব্দ হয়ে যাচ্ছে। আর যেখানে হাতে মুষ্টি তুলে পথে নেমে সমস্বরে চিৎকার করা নিষিদ্ধ, সেখানে জুলাই-ই হয়ে উঠতে পারে একমাত্র ভাষা।
শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যু কেবল একটি গুলি বা একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল না। এটি একটি সাবধানবাণীও ছিল। বেরোবির পার্কের মোড়ের অদূরে যা ঘটেছিল, তা ছিল আসলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। যেখানে কথা বলা মানেই অপরাধ, দাবি জানানো মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ মনে করা হয়েছিল।
সেদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন রাষ্ট্র কী করেছিল? তারা কেন সেদিন তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করল? সেদিন যে তরুণ শহীদ হলেন, তিনি যেন গোটা বাংলাদেশের হয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, তৎকালীন ক্ষমতাধরদের কাছে তা অনুধাবন করা কি খুব জটিল বিষয় ছিল?
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিবাদের ঐতিহ্য খুব গর্বের। ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সবখানেই ছাত্রসমাজ পথ দেখিয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও ছাত্রসমাজের কণ্ঠ রোধ করতে গুলি ব্যবহার করতে হয়, এটি কি রাষ্ট্রের দুর্বলতা নয়? আগামী দিনে আমরা এ ধরনের আর কোনো রাষ্ট্রীয় দুর্বলতা ও ভয় দেখতে চাই না।
জুলাই বিপ্লবের এই প্রথম শহীদ শব্দটি যেন আমাদের সবার কাঁধে নতুন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। এর মানে, আরো অনেক শহীদ আসতে পারেন, যদি রাষ্ট্র তার দমননীতি থেকে ফিরে না আসে। যদি কথা বলার জায়গা, ভিন্নমতের জায়গা একে একে নিঃশব্দ হয়ে যায়, তাহলে শেষ ভরসা হয় রক্ত। বেরোবির ইংরেজি পড়ুয়া অকুতোভয় ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের তাক করা বন্দুকের নলের সামনে বুক উঁচিয়ে গুলি খেতে দ্বিধাহীন না থাকলে আজ কী করতাম আমরা, তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
জন্ম নিলেই সবাইকে একদিন না একদিন নির্বাক হতে হয়। কিন্তু সবার কথা কি সব মানুষের অনন্তকালব্যাপী মনে থাকে? শহীদ আবু সাঈদ বাবনপুরে শুয়ে আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন, দেশের যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাক থাকার দিন শেষ।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন
fakrul@ru.ac.bd

বিদ্যুতায়িত হওয়া থেকে বন্যপ্রাণীদের বাঁচানোর উপায় কী
- ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর মৃত্যু। দীর্ঘদিন ধরে ঘটছে এমন ঘটনা। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এ দায় কার? বিদ্যুৎ বিভাগ অবশ্য নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য আবরণযুক্ত তার ব্যবহার করছে। বন্যপ্রাণীর মৃত্যু।
২০২১ সালে একটি পত্রিকায় খবর এসেছিল, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে।
২০২২ সাল। একটি পত্রিকায় খবর আসে, মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বানর ও চশমাপরা হনুমানের মৃত্যু ঘটে। বনের ভেতরে রয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এই লাইনে জড়িয়ে অনেক বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটে।
২০২২ সালেরই মৌলভীবাজার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ঘটনা এটি। ওই বছর মার্চের ১৩ তারিখে একটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় যে গত দুই সপ্তাহেই সেখানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারটি চশমাপরা হনুমানের মৃত্যু ঘটেছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ২০২১ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিপন্ন প্রজাতির লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমানসহ ৯টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টের কাছে একটি লজ্জাবতী বানর মারা যায় বিদ্যুতায়িত হয়ে। একই বছরের ১৮ জুন রামনগর এলাকায় একটি চশমাপরা হনুমান, ১৬ জুলাই কালাছড়া বিট অফিসের কাছে একটি মুখপোড়া হনুমান, ২৪ জুলাই ভিক্টোরিয়া স্কুলের সামনে একটি বানর এবং ১৩ সেপ্টেম্বর আরেকটি বানরের মৃত্যু ঘটে। এসব ঘটনায় সেখানে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে খোলা তারের পরিবর্তে আবরণযুক্ত তার প্রতিস্থাপনের চিঠি দেয়।
একটি পত্রিকার তথ্য মতে, মৌলভীবাজারের পাথারিয়া সংরক্ষিত বনে ২০২৪ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিপন্ন প্রজাতির প্রায় ১১টি প্রাণী মারা গেছে। চারটি লজ্জাবতী বানর মৃত পাওয়া যায় জুড়ী রেঞ্জের লাঠিটিলায়, তিনটি চশমাপরা বানরও মৃত পাওয়া যায় সেখানে। এ ছাড়া বড়লেখা রেঞ্জের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কেও চারটি লজ্জাবতী বানর মারা যায়। এসব ক্ষেত্রেও আবরণহীন বৈদ্যুতিক তারের কারণে এমন ঘটছে বলে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন দাবি করছে। বিদ্যুৎ বিভাগ দায় এড়াতে কিছু জায়গায় প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়েছে। পত্রিকায় জানানো হয়েছে, বনের গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে বৈদ্যুতিক তারের কোনো আবরণ নেই।
এভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ভারতেও ঘটে। সেখানকার ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বন্যপ্রাণী মারা গেছে ২২টি। ২০২০ সালে একইভাবে বন্যপ্রাণী মারা গেছে ১০টি এবং ২০২১ সালে ১৬টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে এভাবে। এ ক্ষেত্রে ভারত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা আমরাও প্রয়োগ করতে পারি। তারা বন্যপ্রাণী চিকিৎসা পরিকাঠামো গঠন করেছে। উদ্ধার হওয়া বন্যপ্রাণীদের জন্য বিশেষ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। বৈদ্যুতিক তারগুলো ভূমি থেকে বিশেষ উচ্চতায় স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রতিটি বন্যপ্রাণীই আমাদের দেশের জন্য একেকটি সম্পদ। এসব সম্পদকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার-আপনার সবার। এ ক্ষেত্রে কেউই আমাদের দায় এড়াতে পারি না। তা বন বিভাগই হোক বা বিদ্যুৎ বিভাগ হোক বা হোক স্থানীয় জনগণ। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এসব বন্যপ্রাণীকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।
লেখক : শিক্ষক ও গবেষক

সেলাই করা খোলা মুখ
নেতার নাম নেতানিয়াহু
- মোফাজ্জল করিম

আমাদের শৈশবে (উনিশ শ পঞ্চাশের দশক) যেসব বিশ্বনেতার নাম ঘৃণার সঙ্গে উচ্চারিত হতে শুনেছি, জার্মানির একনায়ক অ্যাডল্ফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫) ছিলেন তাঁদের মধ্যে এক নম্বরে। তাঁর মতো আর কেউ বোধ করি মানবজাতির ইতিহাসে এত ধ্বংস ও অকল্যাণের জন্ম দেয়নি। ইহুদিদের প্রতি ছিল তাঁর এক ধরনের বিজাতীয় ক্রোধ। তিনি মনে করতেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮) জার্মানরা ইহুদিদের কারণেই পরাজয় বরণ করেছিল।
একই ভূমিকায় মুসলিম নিধনে অবতীর্ণ হয়েছেন হাল আমলের হিটলার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই ভদ্রলোক (?) বোধ হয় রোজ কিছুসংখ্যক ফিলিস্তিনি আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা হত্যার সংবাদ না পেলে পানিটুকুও পান করেন না! বিশেষ করে খাদ্য-পানীয়ের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া ফিলিস্তিনের গাজা নামক মুসলিম জনপদে অসহায় নারী ও শিশুদের মৃত্যুবরণ তাঁকে বোধ হয় এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ দান করে। তাঁর এই চরম মানবতাবিরোধী অপতৎপরতা প্রতিনিয়ত বিশ্ববাসীর মর্মমূলে আঘাত হানছে। কিন্তু নির্মম সত্য হচ্ছে, বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা এক শ ভাগ আশীর্বাদপুষ্ট ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছে না।
প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র না হয় বোধগম্য কারণে ইসরায়েলকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এত বড় যে মুসলিম বিশ্ব তার ভূমিকা কী? তার সদস্যরা কি কেবল বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে তাঁদের ভূমিকা পালন করছেন? তাঁদের সংগঠন ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব মুসলিম কনফারেন্স) কি অদ্যাবধি ফিলিস্তিনের পক্ষে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে, যা দেখে ইসরায়েল তার হত্যাযজ্ঞ চালানোর আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে? উত্তর নিশ্চয়ই ‘না’। অথচ তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশই মুসলিম দেশ। তাদের এক ভ্রুকুটিতে ইসরায়েলের ঘাম ছুটে যাওয়ার কথা।
এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের অন্দরমহলে একটু ঢু মারার চেষ্টা করা যাক।
নেতানিয়াহু যে কেবল একজন হৃদয়হীন যুদ্ধবাজ নেতা তা-ই নয়, তাঁর আরেকটি বড় পরিচয় তিনি একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। তিনি বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর একজন, যিনি দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আসামির কাঠগড়ায় নিয়মিত দাঁড়াচ্ছেন। বিজ্ঞজনদের অভিমত, নিজ দেশের মানুষের দৃষ্টি তাঁর পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি থেকে অন্যদিকে ফেরানোর মতলবেই তিনি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। সে যা-ই হোক, তিনি দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় বানান আর পর্বত বানান, সেটি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই, আমাদের প্রাণ কাঁদে ওই সব মৃত্যুপথযাত্রী ক্ষুিপপাসায় কাতর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার জন্য, বিশেষ করে কুসুমকলি অবুঝ শিশুদের জন্য, যাদের উদ্দেশে প্রেরিত ত্রাণটুকুও ইসরায়েলি পাশব বাহিনী গাজার অবরুদ্ধ অঞ্চলে যেতে দেয় না। হায়! একদিকে গাজায় হয় বোমার আঘাতে, না হয় খাদ্যাভাবে প্রতিদিন অকালে ঝরে পড়ছে শত শত নারী-পুরুষ-শিশু আর অন্যদিকে এই বিশ্বের পরাশক্তিগুলো শান্তির ললিত বাণী গেয়ে শোনায় বিশ্ববাসীকে প্রতিনিয়ত।...ঠাট্টা আর কা’কে বলে!
ভালো কথা, শেষ করার আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা একবার ভালো করে দেখে নিই। সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আমাদের এই দেশের। এ দেশের মানুষ যুগে যুগে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে কী করে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এ দেশে অন্যায়-অত্যাচার করে কেউই পার পেতে পারেনি। বিশ্বের কোথাও ‘অত্যাচারীর খড়্গকৃপাণ’ উত্তোলিত হতে দেখলে বাংলাদেশের মানুষ তার প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু আশ্বর্য, সেই বাংলাদেশ ইসরায়েলের ব্যাপারে কেমন জানি উদাসীন। এই যে প্রতিনিয়ত শত শত অবোধ শিশু ও অসহায় নারী-পুরুষ বলি হচ্ছে ইসরায়েলি যূপকাষ্ঠে, তারা মুসলমান না ইহুদি, খ্রিস্টান না হিন্দু, আস্তিক না নাস্তিক, সেটা বড় কথা নয়, তাদের প্রথম এবং প্রধান পরিচয় তারা মানুষ। তারা অসহায় নিরপরাধ মানুষ। এই পৃথিবীতে আপনার, আমার এবং ওই নরখাদক নেতানিয়াহুর যেমন বাঁচার অধিকার আছে, তাদেরও আছে সেই সমান অধিকার। সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে সদা সোচ্চার বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে এই নির্লিপ্ত আচরণ নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত নয়। ইসরায়েলের, বিশেষ করে তার খুনি নেতা নেতানিয়াহুর, এই নরমেধযজ্ঞের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকেও তেমন সোচ্চার হতে দেখি না। কেসটা কী? তাহলে এখানেও কি সেই ‘বড় মিয়া ফ্যাক্টর’ কাজ করছে? কী জানি! বলতেই হয়, ‘বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি!’
অগত্যা অগতির গতি দয়ামত আল্লাহপাকের দরবারে অসহায় ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য প্রার্থনা জানিয়ে শেষ করছি। আমিন। সুম্মা আমিন। সুধী পাঠক-পাঠিকা, আশা করি, আপনারাও নিশ্চয়ই এই প্রার্থনায় শরিক হবেন। আমিন।
লেখক : সাবেক সচিব ও কবি
mkarim06@yahoo.com

স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরা মৌসুমি ফল ও তার বাজার
- ড. জাহাঙ্গীর আলম

আম, লিচু, আনারস ও কলা প্রচুর পরিমাণে বাজারজাতকরণ হচ্ছে। কাঁঠালও প্রচুর পরিমাণে আসতে শুরু করেছে বাজারে। কৃষি অর্থনীতিতে এই ফলগুলোর গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। গরমে অতিষ্ঠ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের মনে এ সময় শান্তির পরশ বোলায় বিভিন্ন রসালো ফলের বিপুল জোগান।
এ দেশে ফলের উৎপাদন হয় প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টন। এর ৫০ শতাংশই উৎপাদিত হয় জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে। বাকি ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয় অবশিষ্ট ৯ মাসে। কয়েকটি ফল উৎপাদনে পৃথিবীর প্রথম সারির ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। ২০ বছর ধরে এ দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ১২.৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রধান ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আম। ১৫ মে থেকে শুরু হয়েছে আম পাড়া। প্রথমেই গুটি, হিমসাগর, গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, মিশ্রিভোগ, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া ইত্যাদি আগাম জাতের আম পেড়ে নেওয়া হয়। এরপর বাজারে আসে হাঁড়িভাঙ্গা, আম্রপালি ও ফজলি আম সামনে বাজারে আসছে। বারি আম-৪, আশ্বিনা ও গৌরমতি আসবে জুলাইয়ের মধ্যভাগে। কাটিমন ও বারি ১১ জাতের আম সরবরাহ হয় বছরব্যাপী। ক্ষীরশাপাতি আম বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। এই আম শ্বাস ও আঁশবিহীন, রসালো। গন্ধে বেশ আকর্ষণীয় এবং স্বাদে মিষ্টি। হাঁড়িভাঙ্গা আমও অত্যন্ত সুস্বাদু ও আঁশবিহীন। জিআই স্বীকৃতি পাওয়া অন্যান্য আমের মধ্যে আছে ল্যাংড়া, আশ্বিনা, ফজলি ও নাক ফজলি। এগুলোর বিশেষত্ব আলাদা। আগে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরেই ভালো জাত ও মানের আম হতো বেশি। এখন নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সারা দেশেই ভালো জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দুই বছর আগে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করে। গত বছর আম রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩২১ টন। এটি ছিল মোট উৎপাদনের মাত্র ০.০৫৫ শতাংশ। এবার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ হাজার টন। বিশ্বে আম রপ্তানি হয় প্রায় এক বিলিয়ন মেট্রিক টন। এতে বাংলাদেশের শরিকানা ১.৫ শতাংশ। বৈশ্বিক আমের বাজারের আকার প্রায় ৬৭.৪ বিলিয়ন ডলার। এতে বাংলাদেশের হিস্যা অনুল্লেখযোগ্য।
মোট উৎপাদনের দিক থেকে আমের পর কাঁঠালের অবস্থান। উৎপাদন প্রায় ২০ লাখ টন। আরো আছে কলা, যার উৎপাদন প্রায় ১৯ লাখ টন। পেঁপে, পেয়ারা ও আনারসের উৎপাদন যথাক্রমে প্রায় ১১ লাখ, পাঁচ লাখ ও ছয় লাখ টন। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে আমরা দ্বিতীয় এবং আম উৎপাদনে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছি। স্বাদে ও জনপ্রিয়তায় আমাদের দেশে লিচুর অবস্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মোট উৎপাদন প্রায় আড়াই লাখ টন। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। তবে আম সবার প্রিয় ও সুস্বাদু। এবার আমের উৎপাদন ভালো। লক্ষ্যমাত্রা ২৭ লাখ টন।
আম উৎপাদনকারীরা এখন খুবই দুশ্চিন্তায়। উৎপাদিত ফল উপযুক্ত দামে বিক্রি করা আদৌ সম্ভব হবে কি না, বাগানের খরচ উঠে আসবে কি না—এসবই দুশ্চিন্তার কারণ। মৌসুমি ফল পাকা ও পাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাজারজাত করতে হয়। নতুবা পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সাধারণত মৌসুমি ফল প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অপচয় হয়। অনেক সময় বাজারজাতকরণের ধীরগতির কারণে তা ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের বর্তমান ভরা মৌসুমে আমাদের কৃষি বিপণন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এবং সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদ্যোগে খামারপ্রান্ত থেকে আম, কাঁঠাল ও আনারস কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে তা বাজারজাত করা যেতে পারে। গরিব মানুষের মাঝে ত্রাণ হিসেবেও আম-কাঁঠাল বিতরণ করা যেতে পারে। তা ছাড়া আম, কাঁঠাল ও আনারস পরিবহনের জন্য বিআরটিসির উদ্যোগে ট্রাক চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ইদানীং অনলাইনেও ফল বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসের গাফিলতির জন্য তা সুনাম হারাচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সড়কপথে বাধাহীন ফল পরিবহনকে উৎসাহিত করা উচিত। তদুপরি আম ও অন্যান্য মৌসুমি ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত বৃহৎ কম্পানিগুলো এ সময় তাদের ক্রয় বাড়িয়ে দিয়ে ফলের দরপতন ও অপচয় থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে পারে। তা ছাড়া দেশের ফল চাষিদের সরকারি প্রণোদনার আওতাভুক্ত করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে ফল রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। আমাদের মৌসুমি ফল এরই মধ্যে চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও ওমানে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি করা ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, জড়ালেবু, এলাচি লেবু, কুল, সাতকরা, আমড়া, সুপারি, জলপাই, পেয়ারা ও কলা। বিদেশে এগুলোর চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি ফল রপ্তানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সাত বছর ধরে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের আম রপ্তানি হচ্ছে। রাজশাহী ও সাতক্ষীরার চাষিরা অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং উত্তম কৃষি কার্যক্রম অনুসরণ করে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করছেন। এর উৎপাদন খরচ ও বিক্রয়মূল্য বেশি। দেশের সুপারমার্কেটগুলো উন্নতমানের আম বাজারজাতকরণের দায়িত্ব নিতে পারে। গত পাঁচ বছর বাংলাদেশ থেকে ফল রপ্তানির আয় হ্রাস পেয়েছে। কৃষিপণ্যের রপ্তানি প্রণোদনা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করায় সম্প্রতি ফল রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়নি। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যেই বাংলাদেশি ফলের আন্তর্জাতিক বাজার ঊর্ধ্বগামী হবে বলে আশা করা যায়।
এখন একটি বিশেষ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আম কূটনীতি। গত বছর জুন মাসে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের রাজশাহীর কিছু আমবাগান পরিদর্শন করানো হয়েছে। এতে তাঁরা বাংলাদেশের আম উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। উৎপাদন এলাকায় গিয়ে আমের স্বাদ অনুভব করতে পেরেছেন। এরপর চীনসহ অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। এবার চীন থেকে ৫০ হাজার টন আম নেওয়ার কার্যাদেশ এসেছে। অন্যান্য দেশও আমদানির পরিমাণ বাড়াচ্ছে। তা ছাড়া অতীতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে পাকা আম। এতে আমাদের আম রপ্তানির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে লাখ লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে কর্মরত। আমাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগই রেমিট্যান্স হিসেবে আসে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। ওই সব দেশে আমাদের আম উপহার ভ্রাতৃত্ব ও আত্মার সম্পর্ক জোরদার করবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের আম কূটনীতি আরো জোরদার ও অর্থবহ হোক, এই কামনা সবার।
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ
সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং সাবেক উপাচার্য
ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ