অনেকের কাছে সেদিন শুভ সকাল হলেও এই পরিবারের তিনজনের কাছে সকালটি ছিল অশুভ। কে জানত গ্রামের একদল লোক তাঁদের পিটিয়ে মৃত্যুপথের যাত্রী হিসেবে পাঠিয়ে দেবে এই জগৎ থেকে। গত বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়িতে মা এবং তাঁর ছেলে ও মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মোবাইল ফোন চুরির জেরে প্রকাশ্য পিটুনিতে প্রাণ হারান খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৮) এবং মেয়ে জোনাকী আক্তার (৩২)।
মব সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ দেশ
রেজোয়ান বিশ্বাস ও মোবারক আজাদ

গত রবিবার ভোরে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানায় ১৯ বছরের যুবক শ্রমিক হৃদয়ের জীবনপ্রদীপ নিভেছে পিটুনিতে। চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। থানায় হত্যা মামলার পর চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে হৃদয় কারখানায় মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।
এভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব সন্ত্রাস’ চলছে। তাতে দেশের সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। ভুক্তভোগীরা আছে আতঙ্কে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ, মানবাধিকারকর্মীরা।
গবেষণা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত জুন পর্যন্ত ১০ মাসে ২৫৩টি মব সন্ত্রাস ঘটে। এতে ১৬৩ জন নিহত এবং ৩১২ জন আহত হয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুনে দেশে অন্তত ৪১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১০ জন নিহত হয়। গুরুতর আহত হয় ৪৭ জন। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে আহত অবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ডাকাতি, চুরি, খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কটূক্তি প্রতারণা ও অপহরণের অভিযোগ এনে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে তাদের।
এমএসএফ মনে করে, আইন অবজ্ঞা করে মব সহিংসতা তৈরি করে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে এক ভয়াবহ পরিবেশ তৈরিতে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) গণপিটুনিতে ৭৮ জন নিহত হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে গণপিটুনির ঘটনায় ৭৫ জন নিহত হয়। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) হিসাবে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত মে পর্যন্ত ৯ মাসে মব সন্ত্রাস ঘটেছে ২০২টি। এসব ঘটনায় ১৩১ জন নিহত হয়েছে। এ সময়ে আহত হয় ১৬৫ জন।
মূলত বিশৃঙ্খল জনতা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে সহিংসতা চালালে তাকে মব জাস্টিস বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার ভায়োলেন্স বলা হচ্ছে। সামাজিক অস্থিরতা, আইনের শাসন না মানা, রাজনৈতিক বিরোধ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অর্থনৈতিক দুরবস্থাসহ নানা কারণে একে অন্যকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর প্রবণতা, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে আইন না মানার প্রবণতায় গণপিটুনির ঘটনা বাড়ছে বলে অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সংঘটিত মব সন্ত্রাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ও গণপিটুনির ঘটনা বেশি ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মব তৈরি করে হামলা চালানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে পেশাদার অপরাধী ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও মব তৈরি করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মব সন্ত্রাস বন্ধ হচ্ছে না। আবার মব নিয়ন্ত্রণে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সেই ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে না। মব সন্ত্রাস নিয়ে সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ জারি করছে, কিন্তু মব সন্ত্রাস তৈরিকারীরা এগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর রাজনৈতিক পরিচয়ে যেসব মব তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দলের পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে এটি বন্ধ করা সম্ভব।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল শুক্রবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে মব ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একজন মানুষকে মেরে ফেলা হবে বা বড় ক্ষতি করা হবে, সেটা কোনোভাবেই হতে পারে না। অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে শান্তি ফেরানো যায়। তবে পুলিশের একার পক্ষে মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, এ ক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।’
পুলিশের ওপরও মব ভায়োলেন্স হচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যারা পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে তাদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’
দেশে গত ছয় দিনে সন্দেহভাজন ছয় ব্যক্তি গণপিটুনিতে নিহত হন। সর্বশেষ রাজধানীতে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে আল আমীন নামের এক তরুণকে রাস্তা থেকে ধরে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটুনি দেয় একদল লোক। এরপর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আলামিন নামের এক তরুণকে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করে একদল লোক। এই পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গত রবিবার ধর্ম অবমাননার অভিযোগে লালমনিরহাটে সেলুনের কর্মী পরেশ চন্দ্র শীল (৬৯) এবং তাঁর ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে (৩৫) গণপিটুনি দিয়ে সেলুনে আটকে রাখা হয়।
গত ২২ জুন রাজধানীর উত্তরায় সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা মারধর ও চরমভাবে নাজেহাল করে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে আটকের সময় যেভাবে মব সৃষ্টি করা হয়েছে, তা কাম্য নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ৬ মে গুলশানে হেনস্তা করা হয় ভাস্কর রাসাকে। গত ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। গত ২০ মে রাতে ধানমণ্ডির ৪ নম্বর সড়কে মব তৈরি করে হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফার বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করা হয়।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে গত বুধবার মানসিক প্রতিবন্ধী শামীম হোসেনকে কুপিয়ে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে শামীম বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিহতের বাবা সাইফুল এসিআই ফুড লিমিটেড কারখানার পেছনের একটি ডোবা-জঙ্গলের ভেতর ছেলের মরদেহ দেখতে পান। ধারণা করা হচ্ছে, আলামত নষ্ট করার জন্য তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
গত রবিবার ডিএমপি সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘মব সন্ত্রাস ঠেকাতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিএনপির কড়া বার্তা : সম্প্রতি বিএনপির উচ্চ মহল থেকে মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে তা দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জন্য বার্তা বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন পক্ষের প্রশ্রয়ে বিরোধী পক্ষকে হেনস্তা, বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তখনই বিএনপি এর বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছিল, এখন তা আবারও স্পষ্ট করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মব সন্ত্রাস কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। অপরাধের বিচার হবে আদালতে, রাস্তায় নয়। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব। বিএনপি এই অপশক্তির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার তার দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরও মব সন্ত্রাস হয়েছিল। তখনো এর প্রতিকার করেনি তখনকার সরকার। ফলে দেশে অরাজকতা তৈরি হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও মব সন্ত্রাস দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ বাম জোট : পটিয়া, মুরাদনগর, লালমনিরহাট, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে চলা মব সন্ত্রাস, নারী-শিশু নির্যাতন, হত্যা ও হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সরকারের নীরব ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি চট্টগ্রামের পটিয়ায়, কুমিল্লার মুরাদনগরে, লালমনিরহাট থানা এলাকায় ও ফরিদপুরে ব্যবসায়ী এ কে আজাদের বাসভবনে মব হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে মুরাদনগরে মা-ছেলেসহ বহু মানুষকে পিটিয়ে হত্যা এবং নারী-শিশুদের ওপর বর্বর নিপীড়নের ঘটনায় দেশবাসী আতঙ্কিত।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশ : ‘নতুন আপদের নাম এখন মব সন্ত্রাস। এতে আতঙ্কিত, ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দেশবাসী।’ গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকারের এখন প্রধান কাজ ‘মব’ বন্ধ করা। এটি বন্ধ করা না গেলে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
প্রধান বক্তা ‘সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন’-এর প্রধান উপদেষ্টা মুজিব রহমান বলেন, সারা দেশে আজ ‘মব’ আতঙ্ক। সরকারের এখন প্রধান কাজ মব বন্ধ করা, মানুষের আইনের অধিকার নিশ্চিত করা, বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা।
বিয়ের অনুষ্ঠানে মিছিল : গতকাল রাতে চট্টগামের চিটাগং ক্লাব লিমিটেডে আওয়ামী লীগ নেতা বোয়ালখালীর ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল হকের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে একদল লোক মিছিল করে। এ সময় তারা ক্লাবের মূল ফটকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা জানায়, আওয়ামী নেতা জাহিদুলের নামে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, তাই তাঁকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে এসেছে। এ সময় দেখা গেছে, ক্লাব থেকে বেরোনোর সময় প্রতিটি গাড়িতে তারা খুঁজতে থাকে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল আছেন কি না। তাঁকে পেলে ধরিয়ে দেবে বলে তারা জানায়।
সম্পর্কিত খবর

আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য!
মাসুদ রানা

হত্যা মামলার আসামি কনটেন্ট ক্রিয়েটর ‘ব্যাডবয়’ তৌহিদ আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর বেপরোয়া ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় এখন রিমান্ডে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, হার্ডডিস্ক ও ম্যাকবুক (তিনটি ডিভাইস) জব্দ করা হয়েছে। এসব ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রোসিকিউটর মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, আসামি তৌহিদ লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের নারকীয় হত্যা করতে উৎসাহিত করেন। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উদ্ধার হওয়া ডিভাইসগুলোতে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে। এসব চ্যাটে আন্দোলনের সময় কোথায় কিভাবে আন্দোলন দমন করা করা, সেইসব পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে।
এর আগে রবিবার রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দিন ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। এর আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৮ আগস্ট এই মামলায় তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা আজ
- অক্টোবরে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার কমিশনের বৈঠকে এই কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেন।
এদিকে গতকালই সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ইসির খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তির শুনানি শেষ হয়েছে।
নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে গতকাল ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা করেছি, সে কর্মপরিকল্পনা আপনাদের জানাব। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, কর্মপরিকল্পনার সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।
বর্তমান ইসি ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ভোট ধরে একটি প্রথমিক কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছিল। পরে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ভোটের সময়সীমা নির্ধারণ হওয়ার পর নতুন সময় ধরে কর্মপরিকল্পনাটি পরিমার্জন করা হয়।
ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা ও সাম্ভাব্য সময়সীমা উল্লেখ থাকছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের জন্য এক মাস সময় রাখা হচ্ছে। অক্টোবরে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত ভোটার হালনাগাদের খসড়া তালিকা ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত হবে। এরপর আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করে সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন দিয়ে এসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে। নির্বাচনী আইন সংস্কার; ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ চূড়ান্ত করা; নির্বাচনী প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করার সময়সীমা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময়—এসব কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ থাকবে।
আসনবিন্যাস চায় পাবনা, আগের আসন পুনর্বহাল চায় সিরাজগঞ্জ : এদিকে সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গতকালের শুনানিতে পাবনায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের দাবি ওঠে। আর সিরাজগঞ্জবাসী আগের আসন পুনর্বহালের দাবি জানায়। পাবনার প্রতিনিধি জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন, ‘বর্তমানে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে পাবনা-১ আসন রয়েছে। বেড়া উপজেলার অপরাংশ ও সুজানগর উপজেলা নিয়ে পাবনা-২ আসন রয়েছে। আমরা শুধু সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে পাবনা-১ আসন চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘একই সঙ্গে বেড়া ও সুজানগর নিয়ে পাবনা-২ আসন চাই। এই দুটি আসন বিন্যাসের প্রস্তাব ২০১৮ সালেও ছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সিরাজগঞ্জের প্রতিনিধি আবদুল মান্নান বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলায় ২০০১ সাল পর্যন্ত সাতটি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসন কমিয়ে ছয়টি আসন করা হয়। আমাদের দাবি, আগে চৌহালী উপজেলা ও শাহজাদপুর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের চারটি ইউনিয়ন মিলে যে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন ছিল তা আমরা ফিরে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বর্তমানে বেলকুচি ও চৌহালী নিয়ে যে আসনে আছি এই আসনে আমরা থাকতে চাই না। দুর্গম ও নদীভাঙন এলাকা হিসেবে আমাদের একটিই দাবি, আমরা আগের আসনে ফিরে যেতে চাই।’

রাকসুতে ভোট ২৫ সেপ্টেম্বর
রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে এ তথ্য জানান রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠীর বিষয়টি বিবেচনা করে ২৮ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল সকালে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ২৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুপুর ২টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী থাকায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয় নির্বাচন কমিশন। পরে সন্ধ্যা ৭টায় এক জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করে নির্বাচন তিন দিন এগিয়ে আনা হয়।
সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ৩১ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ১ থেকে ৪ ও ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর, প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ সেপ্টেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাডেমিক ভবনে ভোট চলবে এবং একই দিন ভোট গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
এ ছাড়া গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটের সব প্রার্থীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ২৮ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করে তার প্রতিবেদন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব
নির্বাচন বানচাল করতে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য কিছুসংখ্যক রাজনীতিকের পক্ষ থেকে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেই একটি অংশ সচেতনভাবে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে রাজনীতিক কাজী জাফর আহমদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য, নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলে চলছে।
গণ-অভ্যুত্থানের সাত থেকে আট দিন পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছিলেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। এ নিয়ে তাঁকে অনেক সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখনই একটা পরিবর্তন হয়, সেই পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে নেয় অন্যরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা চলছে একাত্তরের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার; কিন্তু সেটা ভোলা সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, এ কারণে সরকারের ভেতরের একটা মহল সচেতনভাবে চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরো অনেক কাজ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কেমন যেন হতাশার ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। বেশির ভাগ মানুষ নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি আর দুর্নীতি। যেদিকে তাকাবেন, সেখানেই দুর্নীতি। দুঃখজনক যে রাজনৈতিক নেতারা জড়িত হয়ে পড়ছেন।
জটিলতা না বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ করাসহ ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান মির্জা ফখরুল।