ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭
হোমার থেকে স্টিফেন কিং পর্যন্ত মড়কের খতিয়ান

সাহিত্যের ইতিহাস থেকে আমরা যা শিখতে পারি

  • মূল : মিশা কেটচেল । অনুবাদ : অদিতি ফাল্গুনী
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
সাহিত্যের ইতিহাস থেকে আমরা যা শিখতে পারি

হোমারের ‘ইলিয়াড’ এবং বোকাচ্চিওর ‘ডেকামেরন’ থেকে স্টিফেন কিংয়ের ‘দ্য স্ট্যান্ড’ এবং লিং মার ‘সেভেরেন্স’ পর্যন্ত মহামারি বা মড়ক নিয়ে যত আখ্যানের মাধ্যমে পশ্চিমা সাহিত্যের ইতিহাস যেন অনেকটা আমাদের হৃদয়ের বিপুল যত আবেগ পরিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়া হিসেবে এবং যুগে যুগে মানুষ কিভাবে জনস্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের মোকাবেলা করেছে তার দলিল-দস্তাবেজই উপস্থাপন করে।

আজকের এই কভিড-১৯-এর বিপর্যয়ের প্রতি মানব প্রজাতি হিসেবে আমাদের উত্তর কেমন হবে, সেটা গড়ে তোলায় সাহিত্যের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। পাশ্চাত্য সাহিত্যের এই সম্ভারের দিকে একটু চোখ বোলালেই বরং আমরা আরো ভালো বুঝতে পারব কিভাবে এই মহামারির দুর্যোগ এড়ানোয় আমরা কাজ করতে পারি; একই সঙ্গে এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে কেন্দ্র করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা বর্ণবাদ, অভিবাসীবিদ্বেষ ও সক্ষমতাবাদকেও (প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভঙ্গি) আমরা যুঝতে সক্ষম হব।

ধ্রুপদি সাহিত্য থেকে শুরু করে সাম্প্রতিককালের উপন্যাসগুলোতেও তাই মহামারির সময়ে আমরা পেতে পারি এক অনিশ্চিত স্বস্তি এবং সামনে কী করণীয় সে-সংক্রান্ত রূপরেখা।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্রুপদি সাহিত্যের বিশ্লেষক মেরি বেয়ার্ড আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে ‘ইলিয়াড’ শুরুই হয়েছে ট্রয়ে গ্রিক শিবিরে মড়কের উপক্রমণ দিয়ে। আর কেন গ্রিক শিবিরে মড়ক লেগেছে? যেহেতু আগামেমনন ক্রিসেইসকে অন্যায় দাসত্বে বন্দি করেছেন, তার শাস্তি বা অভিশাপ হিসেবে এই মড়কের সূচনা। মার্কিন গবেষক ড্যানিয়েল আর ব্লিকম্যানের মতে, ‘ইলিয়াড’-এ আগামেমনন ও একিলিসের তর্ক ‘যেন আমাদের ভুলে যেতে না দেয় যে কিভাবে মড়ক সামনের অনাগত সময়ের চারিত্র্য বা মেজাজ কেমন হবে, সেটা ঠিক করে দেয়। আরো যেটা গুরুত্বপূর্ণ, এই আখ্যানের হৃদয়ের কাছাকাছি যে নৈতিক বিন্যাস আছে, সেটিও নির্দিষ্ট করে দেয় দুঃসহ এই মহামারি।
’ ঘুরিয়ে বললে, ‘ইলিয়াড’ এই আখ্যানের সব চরিত্রের দ্বারা সাধিত যত মন্দ আচরণ থেকে উদ্ভূত মহামারির এক কাঠামোবদ্ধ বিবরণ পাঠককে উপহার দেয়।

কভিড-১৯ যে গোটা পৃথিবীরই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সুরিক্ষত যত প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াকে একটি বড় ঝাঁকুনি দিতে এসেছে তার ফল আমরা এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। কভিডের পরপরই গোটা পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্তর্জালে অনেক দূরশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে।

আর এমন একটা সময়ে সাহিত্যের পাঠ আমাদের ভাবতে শেখাবে, কিভাবে অতীতেও মানুষ দুর্যোগের মোকাবেলা করেছে এবং কিভাবে আমাদের সামাজিক কাঠামোসমূহকে এই কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে আমরা আরো ন্যায়পরতার সঙ্গে কাঠামোবদ্ধ করতে পারি।

মধ্যযুগের ইউরোপে কালো মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে লেখা জিওভান্নি বোক্কাচ্চিওর ‘ডেকামেরন’ (১৯৫৩) মড়কের সময়ে গল্প বলার সবল ভূমিকাকে উন্মোচন করে। কালো মৃত্যু বা মহামড়কের সময়ে দশজন ব্যক্তি ফ্লোরেন্সের বাইরে একটি ভিলায় দুই সপ্তাহের জন্য নির্জনাবাসে থাকছে। স্বেচ্ছা-অন্তরিন দশার এই সময় কাটাতেই তারা নৈতিকতা, প্রেম, যৌনতার রাজনীতি, বাণিজ্য ও ক্ষমতার নানা গল্প বলে। দশটি নভেলা বা উপন্যাসিকার এই সংগ্রহে রেনেসাঁর আদিতম দিনগুলোর সময়ে সামাজিক নানা কাঠামো ও মিথস্ক্রিয়ার পদ্ধতি হিসেবে গল্পবয়ানকে একটি পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

এই গল্পগুলো শ্রোতাদের (এবং বোক্কাচ্চিওর পাঠকদেরও) তাদের প্রতিদিনকার ‘স্বাভাবিক’ জীবনযাপনকে পুনর্গঠিত হওয়ার পথ জোগায়, যা মড়কের কারণে স্তব্ধ ও নিশ্চল হয়ে আছে।

 

কর্তৃপক্ষের সাড়া প্রদানে ব্যর্থতা

মেরি শেলির ভবিষ্যদ্বাণীমূলক উপন্যাস ‘দ্য লাস্ট ম্যান’ও (১৮২৬)’ কিন্তু প্রতিদিনের জীবনের স্বাভাবিকতাকে তার কেন্দ্রবিন্দু করেছে। ২০৭০ থেকে ২১০০ সালের ব্রিটেনে প্রোথিত এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক উপন্যাস, যা ২০০৮ সালে চলচ্চিত্রায়িত হয়, লিওনেল ভার্নি নামের এক ব্যক্তির জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, যিনি বিশ্বজুড়ে এক প্রবল মড়কের পর পৃথিবীর ‘শেষ মানবে’ পরিণত হন। শেলির উপন্যাস বন্ধুত্বের মূল্যকে গুরুত্ব দেয়। উপন্যাসটি শেষ হয় যেখানে ভার্নি একটি ভেড়া কুকুরের সঙ্গে একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন এক দৃশ্যে। এমন দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় যে পালিত প্রাণীরা কিভাবে সংকটের সময় স্বস্তি ও স্থিরতার প্রতীক হতে পারে। মড়কের প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি বিষয়ে উপন্যাসটি বেশ কঠোর। বৈপ্লবিক কল্পস্বর্গবাদ ও মড়কের পর বেঁচে যাওয়া মানবগোষ্ঠীগুলোর ভেতর যে তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব ও লড়াই শুরু হয়, তাকেও তিনি বিদ্রুপ করেছেন। পরে অবশ্য তারাও মারা যায়।

এডগার অ্যালান পোর ছোটগল্প ‘লাল মৃত্যুর মুখোশ’ও (১৮৪২) মহামড়কে যথোপযুক্ত ও মানবিক সাড়া দিতে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। লাল মৃত্যু যখন দেখা দিল, তখন দেহের ছিদ্র থেকে প্রবল রক্তপাতে মানুষ মরতে শুরু করল। উত্তরে রাজপুত্র প্রসপেরো তাঁর এক হাজার বিত্তশালী অমাত্যকে নিয়ে একটি নির্জন তবে বিলাসবহুল প্রাসাদে জড়ো করেন, কঠোরভাবে দ্বার রুদ্ধ করে দেন এবং সময় কাটাতে অভিজাত শ্রেণির সবাইকে নিয়ে একটি মুখোশ পরা বল নাচের আসরও আয়োজন করেন। বাইরের পৃথিবী তো তার নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে সক্ষম : রাজপুত্র প্রসপেরো অভিজাত নর-নারীদের মন খারাপ করতে বা দুশ্চিন্তা করতেও নিষেধ করলেন। রাজপুত্র তাদের আমোদ-আহ্লাদ করার সব ব্যবস্থাও করে দিলেন।

পো সেই বিলাসবহুল বল নাচের আয়োজনের খুঁটিনাটি বর্ণনা দিয়েছেন। এই আখ্যানের শেষ হয় মানুষের বেশে স্বয়ং লোহিত বর্ণ মৃত্যুও অপ্রাকৃত আগমনের ভেতর দিয়ে। মড়ক নিজেই সেই রাজপুত্র ও তাঁর অমাত্যবর্গের জীবন কেড়ে নেয়। বিলাস-আনন্দে মত্ত অভিজাতরা একের পর এক হলঘরে লুটিয়ে পড়তে থাকে—রক্তভেজা, হতাশ দেহভঙ্গিমায়।

 

আধুনিক ও সাম্প্রতিক সাহিত্য

বিশ শতকে আলবার্ট কাম্যুর ‘দ্য প্লেগ’ (১৯৪২) এবং স্টিফেন কিংয়ের ‘দ্য স্ট্যান্ড’ (১৯৭৮) প্লেগের মতো মহামারির সামাজিক নানা প্রভাব বা নিহিতার্থের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষত মড়কের কারণে সৃষ্ট নির্জনাবাস ও রোগ নিরসন বা জনতার ভেতর ছড়িয়ে পড়তে থাকা আতঙ্ক হ্রাসে রাষ্ট্রের ব্যর্থতাও এ দুই উপন্যাসের উপজীব্য। কাম্যুর উপন্যাসে মড়কে দংশিত আলজেরীয় শহর ওরানের অধিবাসীদের মানবীয় আচরণ ও সম্পর্কের মূল্য বিষয়ে এক উদ্বিগ্ন পাঠ। ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী আছে সে বিষয়ে এই কঠোর ও চাঁছাছোলা অজ্ঞানতা এবং নিকট ভবিষ্যতের ভয়াবহতা, যা একই সঙ্গে এত কাছে ও এত দূরে, তার উপস্থিতির নীরবতা আমাদের সারা দিন অস্থির করে রাখে।  

কিংয়ের ‘দ্য স্ট্যান্ড’ উপন্যাসে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে জৈবপ্রযুক্তিগত কৌশলে সৃষ্ট একটি সুপারফ্লু ভাইরাস ‘প্রজেক্ট ব্লু’ একটি ছিদ্রপথে নির্গত হয়। এর পরই দেখা দেয় মহামারি। কিং সম্প্রতি টুইটারে বলেছেন যে কভিড-১৯ তাঁর ফিকশনের মহামারির মতো অত ভয়ানক অবশ্যই নয়, আর জনগণকে তিনি সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

একইভাবে ২০১৬ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘ফিভার’-এ দক্ষিণ এশীয় লেখক দিওন মেয়ের জৈবপ্রযুক্তিগত কৌশলে সৃষ্ট ও সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত এক ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার পর মহাদুর্যোগের প্রেক্ষাপটে বেঁচে যাওয়া মানুষরা সামান্য রসদের জন্য পরস্পর যে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়, তার বিবরণ এঁকেছেন।

‘সেভেরেন্স’ (২০১৮) উপন্যাসেও লিং মা সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় চালকশক্তি জোগানোর কথা লিখেছেন; লিখেছেন তাঁর বোধশক্তি ভোঁতা করে দেওয়া রচনায়। খানিকটা রূপকের রহস্যে মোড়া এই উপন্যাসে নায়িকা ক্যান্ডেস ভবিষ্যতের নিউ ইয়র্ক, যা ধীরে ধীরে ধসে পড়ছে, সেখানে প্রতিদিনই তার কাজের জায়গায় যায়। অবশেষে সে বেঁচে থাকার জন্য একটি বৃত্তে যোগ দেয় এবং বৃত্তের অন্য সদস্যরা জম্বিদের প্রতি যে ভয়াবহ মনোভাব পোষণ করে, তাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও নৈতিকভাবে সে খাপ খাইয়ে নেয়। ‘হাড়ে-মজ্জায় উলঙ্গ হয়ে যাওয়া উত্তর-পুঁজিবাদী মানবসমাজের অণুতে-পরমাণুতে বিভাজিত রূপ এভাবেই এ উপন্যাসে বিধৃত’ বলে উল্লেখ করেছেন বইটির আলোচক জিয়াইয়াং ফাং।

 

কারো কারো জন্য অন্তিম নিয়তি চলেই এসেছে

‘আদিবাসী ভবিষ্যদ্বাদ’—এমন শব্দবন্ধটির কথাও একবার ভাবুন, যেটা প্রথম জাতীয় সাংস্কৃতিক ও জাতিগত অধ্যয়ন বিষয়ক তাত্ত্বিক গ্রেস এল ডিলিয়ন উদ্ভাবন করেছিলেন। আদিবাসী ও অশ্বেতকায় লেখক যেমন এন কে জেমিসিনের ‘ভগ্ন মৃত্তিকা’ সিরিজের লেখা, ক্লেয়ার জি কোলম্যানের ‘টেরা ন্যুলিয়াস’ এবং কার্মেন মারিয়া মাচান্দোর ছোটগল্প সংকলন প্রভৃতি রচনা প্রসঙ্গেই ডিলিয়নের এই শব্দবন্ধ ব্যবহার। আদিবাসী ও অশ্বেতকায় এই লেখকরা উপনিবেশবাদ ও ঔপনিবেশিকগণ কর্তৃক রোগের সংক্রমণ ঘটানোকে আজকের এই চলমান মহাদুর্যোগের ঐতিহাসিক উদ্ভবের প্রেক্ষাপট হিসেবে বিবেচনা করছেন। অতীতের উপনিবেশীকৃত নানা এলাকায় এই দুর্যোগ এরই মধ্যে এসেছে—মড়ক (আক্ষরিক ও রূপকার্থ—উভয়ত) ইতিমধ্যেই তাদের জনসংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।

চিরায়ত সাহিত্যের যে বিশুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, তা মড়কে ও বিপর্যয়ে আচ্ছন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাহিত্যকর্মেও বিধৃত। আসন্ন নির্জনাবাসের পর্বগুলো দিয়ে বিকল্প সামাজিক কাঠামোকে তত্ত্বীয় আলোকে সাজানো এবং একে অন্যকে আমরা কিভাবে বাঁচি সে বিষয়ে গল্প বলাটা যদি আমরা না করি, তাহলে আর কোন গল্পই বা আমরা বলতে পারি বা পারব?

 

লেখক : সম্পাদক, দ্য কনভারসেশন

(দ্য কনভারসেশন, ১৭ মার্চ ২০২০-এর সৌজন্যে)

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বই আলোচনা

মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে

শেয়ার
মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে

সাংবাদিক মাশির হোসেন, যিনি হিরু ডাকনামে অধিক পরিচিত। তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও সুধীজনের কাছে তিনি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রায় দুই দশক পরেও তাঁরা তাঁকে ভুলে যাননি; মনে রেখেছেন। মুস্তাফা মজিদ সম্পাদিত মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থ : বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে তারই প্রমাণ।

মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর শৈশব কাটে ঢাকার আর্মানিটোলায়, পরবর্তীতে শান্তিনগরে। স্বাধীনচেতা মাশির হোসেন তাই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা। শুরু করেন স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে। ভাষা আন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন।

স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক মুস্তাফা মজিদ বলেছেন, অন্য অনেক স্মারকগ্রন্থের মতো মাশির হোসেন হিরু স্মারকগ্রন্থও সাদামাটা, যা ভালোবাসার মানুষদের স্মৃতিচারণাই। যদিও কোনো কোনো বৃহৎ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন কেউ কেউ, তা সত্ত্বেও তার ভেতরেই ফুটে উঠেছে এক অনন্য অকৃত্রিম দরদ এবং মাশির হোসেনের চরিত্রের নানা দিক, যা তাঁকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছে বর্তমান প্রজন্মের মানুষদের মাঝে; বিশেষত সাংবাদিকতাজগতে যাঁরা এ প্রজন্মের, যাঁদের অনেকেই মাশির হোসেনকে ব্যক্তিগতভাবে দেখেননি এবং চেনেন না। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই গ্রন্থে যাঁরা লিখেছেন তাঁদের সবাইকে।

এই স্মারকগ্রন্থে লিখেছেন আমানউল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এরশাদ মজুমদার, আবুল কাসেম ফজলুল হক, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, মনোয়ার হোসেন, লুত্ফুর রহমান, সৈয়দ দীদার বখত, দীপা দত্ত (সেন), গোলাম তাহাবুর, ড. মাহবুব উদ্দীন চৌধুরী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, রফিকুর রহমান, কাজিম রেজা, আব্দুল আউয়াল ঠাকুর, এ কে এম মহসিন, এলাহী নেওয়াজ খান, আহমদ আখতার, কাজী রওনাক হোসেন, মমতাজ বিলকিস, মারুফ কামাল খান, খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ফজলুল বারী, মোস্তফা কামাল মজুমদার, শওকত মাহমুদ, বুলবুল আহমেদ, মাহমুদ শফিক, শওকত আনোয়ার প্রমুখ।

এ ছাড়া আছে মাশির হোসেন হিরুর লেখা, জীবনবৃত্তান্ত ও কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র, যা এই গ্রন্থকে আরো আকর্ষণীয় করেছে। আশা করি, মাশির হোসেন হিরুকে জানতে স্মারকগ্রন্থটি নতুন প্রজন্মকে সাহায্য করবে।

রিহাম হাসান

 

মন্তব্য
পাঠকের প্রিয় বই

যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছি

    তাওহীদাহ্ রহমান নূভ, বাংলা বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার
যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছি

চিঠিপত্র তো ব্যক্তিমানসের মুকুর। কেবল এই মুকুরকেই কাজে লাগিয়ে রচিত হতে পারে অনবদ্য কোনো উপন্যাস, এটা হয়তো বুদ্ধদেব গুহর আগে ভাবেননি কোনো কথাকার। শুধু আঙ্গিকেই নয়, বহু দিক থেকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সবিনয় নিবেদন নামের চমৎকার এই উপন্যাস। শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও উদারমনা এক নারী ঋতার সঙ্গে বেতলার জঙ্গলে এক চরম বিপন্ন মুহূর্তে একঝলক দেখা হয়েছিল ঝকঝকে, ব্যক্তিত্ববান অফিসার রাজর্ষি বসুর।

এরপর শুরু হয় দুজনের পত্রবিনিময়। শেষ হয় এই বিনিময়েই।

যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম খুলেছিসবিনয় নিবেদন-এর মতো বই পড়া যেন এক ধরনের নীরব সাধনা। যেন কারো একান্ত গোপন চিঠির খাম আমি খুলে বসেছি, যার ভাঁজে ভাঁজে জমে আছে অভিমান, ব্যথা, অরণ্যের ঘ্রাণ আর অপ্রকাশিত ভালোবাসা।

এ উপন্যাস কাহিনি নয়, চরিত্র নয়এ যেন এক দীর্ঘ আত্মালেখ্য, যা পাঠকের হৃদয়ের দরজায় কড়া নাড়ে শব্দহীনভাবে।

প্রথম থেকেই মনে হয়েছে, উপন্যাস পড়ছি, না একটি রাগপ্রবণ, বেদনাঘন রাগিণী শুনছি। যেন এক পিয়ানো, যার কিছু চাবি বাজে না, কিছু অতিরিক্ত সুর তুলে দেয়। বুদ্ধদেব গুহর ভাষা এতটাই স্বচ্ছ ও জীবন্ত যে চরিত্রের চোখের জলও যেন স্পষ্ট অনুভব করা যায়।

সেই জল শুধু দুঃখের নয়; তাতে মিশে থাকে স্মৃতির অনুতাপ, সৌন্দর্যের শোক এবং অমোঘ অভিজ্ঞতার মৌন সম্মতি।

প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন একটি কুয়াশাময় সকালঅস্পষ্ট, কিন্তু অনুভবে পরিপূর্ণ। সম্পর্ক এখানে নদীর মতোপ্রবহমান, বাঁক নেয়, স্রোতের নিচে পাথর লুকিয়ে থাকে। লেখকের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা অনুভবগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত, যেন পাঠকের আত্মজগতে আয়না ধরে রাখা হয়েছে, যেখানে নিজের ভেতরের চেহারা ধরা পড়ে, যেটা আমরা অনেক সময় এড়িয়ে যাই। ভালোবাসার বর্ণনা এ উপন্যাসে কোনো একপেশে আবেগে সীমাবদ্ধ নয়।

তা কখনো নৈঃশব্দ্য, কখনো দূরত্ব, আবার কখনো নিঃশর্ত প্রতীক্ষার মতো হয়ে ওঠে। বিচ্ছেদের ব্যথা এখানে করুণ নয়, বরং দার্শনিকএক ধরনের মেনে নেওয়া, যেন জীবন থেকেই শেখা যায় কিভাবে না-পাওয়া জিনিসও একদিন আপন হয়ে ওঠে স্মৃতির মাধ্যাকর্ষণে। ভাষার সৌন্দর্য এই উপন্যাসের সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য। কোথাও তা অরণ্যের মতো জটিল, কোথাও নদীর মতো স্বচ্ছ, কোথাও বা মৃত পাখির পালকের মতো হালকা ও বেদনাবিধুর। উপমা, ইঙ্গিত ও নৈঃশব্দ্য মিলিয়ে বুদ্ধদেব গুহ এক অন্তর্লোক নির্মাণ করেছেন, যেখানে পাঠক শুধু পাঠ করে না; অংশগ্রহণ করে।

গ্রন্থনা : পিন্টু রঞ্জন অর্ক

 

 

মন্তব্য
বিশ্বসাহিত্য

জার্মান লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাসের চমক

শেয়ার
জার্মান লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাসের চমক

সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে জার্মান সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও লেখক সেবাস্টিয়ান হাফনারের উপন্যাস আবসিড বা বিদায়। হাফনারের জন্ম ১৯০৭ সালে, মারা যান ১৯৯৯ সালে। আবসিড বা বিদায় নামের উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় প্রয়াত লেখকের ড্রয়ার থেকে। উপন্যাসটি লেখা হয় ১৯৩২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে।

এ উপন্যাস উনিশ শ ত্রিশের দশকের শুরুতে লেখা হলেও তখন প্রকাশ করার মতো পরিবেশ ছিল না। হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিটি ড্রয়ারে পান হাফনারের ছেলে অলিভার প্রেটজেল। এ উপন্যাসের কাহিনিতে বলা হয়েছে দুই নারী-পুরুষের ভালোবাসার কথা। ভিয়েনার ইহুদি মেয়ে টেডি এবং বার্লিনের আইনপড়ুয়া অ-ইহুদি ছেলে রাইমান্ডের প্রেমপূর্ব সাক্ষাৎ হয় ১৯৩০ সালে বার্লিনে।
বার্লিন ও প্যারিসে তাদের একসঙ্গে কাটানো সময় নিয়েই তৈরি হয়েছে উপন্যাসের অবয়ব। একটা টান টান উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে। হাফনারের আসল নাম রাইমান্ড প্রেটজেল। জন্ম বার্লিনে।
নাৎসি আমলের প্রাক্কালে ১৯৩৮ সালে তিনি লন্ডন চলে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি নাম পরিবর্তন করেন, যাতে জার্মানিতে অবস্থানরত পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁর কারণে নির্যাতনের শিকার না হন। এ উপন্যাসের জন্য প্রকাশের সময় প্রাক্কথন লিখে দিয়েছেন জার্মান সাহিত্য সমালোচক ভলকার ওয়েডারম্যান। তিনি মনে করেন, উনিশ শ ত্রিশের দশকে প্রকাশ না করার অন্যতম কারণ হলো, পাঠকের কাছে হাফনারের সে সময়ের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এ উপন্যাস বেশ বেমানান মনে হতো।

এ বছর এ উপন্যাস প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো, এখানে ইতিহাসের খুব কঠিন সময়ের সাদামাটা জীবনের গল্প বলা হয়েছে।

যুদ্ধের প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের জীবন কেমন ছিল তা জানার জন্য বর্তমানের পাঠকদের কৌতূহল জেগেছে বলেই তাঁরা এটা এতটা পছন্দ করেছেন। আরো একটি কারণ হলো, দৈনন্দিন জীবনের জটিলতার সঙ্গে বর্তমান সময়ের রাজনীতিও জটিল হচ্ছে। পাঠকের কাছে রাজনীতিও আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠছে।

ফাহমিদা দ্যুতি

 

মন্তব্য

এক ঘণ্টা

    জামান আখতার
শেয়ার
এক ঘণ্টা
অঙ্কন : তানভীর মালেক

রাত সাড়ে আটটায় ঢাকা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় সরকারি আদেশমতো।

সিটি শপিং মলের আটতলার সব দোকান আটটায় দ্রুত বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই লিফট-সিঁড়ি বেয়ে নেমে শপিং মল ত্যাগ করছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে সিকিউরিটি গেটে সবার চলে যাওয়ায় সহযোগিতা করছে।

কাল মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ।

রাত সাড়ে আটটা বাজার কিছুক্ষণ আগে ছয়তলা থেকে হন্তদন্ত হয়ে মাস্ক পরা এক স্মার্ট যুবক আশিক লিফটে চড়ে ডোর ক্লোজ বাটন টিপে ঘুরে দাঁড়াল। দেখল, লিফটের কোনায় কিছু শপিং ব্যাগ হাতে একটু ঘুরে দাঁড়ানো সালোয়ার-কামিজ হিজাব-নেকাব পরা এক যুবতি।

লিফট নিচে নামতেই সহসা একটা শব্দ করে থেমে গেল।

অন্ধকার হলো লিফট। মেয়েটি আঁতকে উঠে ঘুরে তাকাল

: কী হলো?

অস্ফুট স্বরে আশিক বলল

: কারেন্ট চলে গেল।

: লোডশেডিং!

: ভয় পাবেন না। জেনারেটর ছাড়লেই লিফট চলবে।

সিঁড়ি বেয়ে সবাই নেমে শপিং মল ত্যাগ করল। মার্কেট শূন্য। শুধু অন্ধকার লিফটের ভেতরে আটকা পড়ে আছে আশিক আর একটি রক্ষণশীল নারী।

আশিক তার মাস্ক খুলে মোবাইলের লাইট অন করল। বেশ আলোকিত হলো লিফট।

মেয়েটি দুচোখে ভয়ার্ত আতঙ্কে একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল। আশিক বুঝতে পারল, মেয়েটি শঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত। যেন তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে এই অন্ধকার বন্দিশালায়। আশিক লিফট ইন্টারকমের বাটন টিপল।

: হ্যালো। হ্যালো লিফটম্যান। হ্যালো হ্যালো।

আশিক ইন্টারকম বক্সে কারো কোনো সাড়াশব্দ পেল না। সিকিউরটি রমিজ  শপিং মলের আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কিং থেকে একজনের গাড়ি বিদায় করছে। লিফটে বন্দি আশিক চিৎকার করে বলছে

: কে আছ, লিফটের দরজা খোলো। আমরা আটকা পড়েছি।

সিকিউরিটির কানে তখনো আওয়াজ পৌঁছেনি। আশিক লিফটের দরজায় ডান হাতে অনবরত ঘুষি মারছে আর বলছে

: আমরা লিফটে আটকা পড়েছি। কে আছ, জেনারেটর চালু করো। নয়তো লিফট ভেঙে ফেলব। ভেঙেই ফেলব।

আশিকের এই আর্তচিৎকারে বিমর্ষ মেয়েটি। সিকিউরিটির কানে আওয়াজ পৌঁছল। দ্রুত সিকিউরিটি লিফট ইন্টারকম বাটন টিপে বলে

স্যার স্যার, আমি মার্কেট সিকিউরিটি রমিজ।

: তোমাদের লিফটম্যানকে বলো  জেনারেটর চালু করতে।

: স্যার, লিফটম্যান করিম ভাই তো সন্ধ্যাবেলা বাইত চইলা গেছে।

: তুমি তাড়াতাড়ি জেনারেটর চালু করো।

: কেমনে চালু করুম স্যার, সারা দিন তিনবার কারেন্ট গেছে। জেনারেটরে তেল নাই।

: লিফটের চাবি নিয়ে, তুমি লিফট ফ্লোর লেভেলে এনে দরজা খুলে আমাদের দুজনকে বের করো।

: স্যার লিফটের চাবি তো লিফটম্যান করিম ভাইয়ের কাছে থাকে। যাইবার সময় কইলো, মার্কেট বন্ধ হইলে লিফটের কারেন্ট পাওয়ার যেন আমি অফ কইরা দেই।

তোমার করিম ভাইকে ফোন করে লিফটের চাবি নিয়ে আসতে বলো।

: আইচ্ছা, ফোন দিতাছি স্যার। চিন্তা কইরেন না।

আশিক লক্ষ করল, মেয়েটি গরমে ঘামছে। আশিক একা মনেই বলল

: উহ্! এই গরমে টিকব কী করে?

মেয়েটি আঁতকে উঠল

: অ্যাঁ! তাহলে?

লিফটের ইন্টারকম বেজে উঠল। আশিক দ্রুত ঘুরে তাকল লিফটের সাউন্ড বক্সের দিকে।

: হ্যাঁ, করিম মিয়া আসছে তো?

সিকিউরিটি রমিজ বলল

: না স্যার। ম্যালা চেষ্টা করলাম, করিম ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ।

আশিক উদ্বিগ্ন স্বরে বলল

: হোয়াট!

শব্দ শুনে মেয়েটি আচমকা বলে উঠল

: হায় আল্লাহ, এখন উপায়!

রমিজ মিয়া বলল

আল্লাহ ভরসা। এক ঘণ্টার মধ্যেই কারেন্ট চইলা আসবো। তার পরেও আমি বিদ্যুৎ অফিসে খবর লইতাছি।

আশিকের মোবাইল আলোয় কী অদ্ভুত ঐন্দ্রজালিক অন্ধকার লিফটের চার দেয়ালের ভেতরে চৈত্রদাহে পুড়ছে, দুজন অচেনা-অজানা লিফটযাত্রী।

এক ঘণ্টার লোডশেডিং হলে বিদ্যুৎ আসতে এখনো চল্লিশ মিনিট বাকি। কতক্ষণ আর লিফটে দাঁড়িয়ে থাকা যায়। মেয়েটি শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে লিফটে বসে পড়ল। আশিকও বসে লম্বা করে পা মেলে দিল। আশিক লক্ষ করল, মেয়েটি শপিং ব্যাগ থেকে একটি পণ্যের প্যাকেট বোর্ড ছিঁড়ে হাতপাখা করে বাতাস তুলে নিচ্ছে তার গায়ে। গরমে হিজাব-নেকাব ভিজে একাকার। আশিক তার কাঁধে ঝোলানো লেদার সাইড ব্যাগ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতলটা বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে, কী যেন ভেবে হাতটা সরিয়ে নিল। আশিক ব্যাপারটা বুঝে বোতলের কক খুলে সামান্য পানি নিজে মুখে ঢেলে নিল। মেয়েটির মনে যেন একটা বিশ্বস্ততা ফুটে উঠল অজানা আশিকের প্রতি। এবার মেয়েটি হাত বাড়িয়ে মিনারেল বোতলটি ধরতেই চমকে উঠল, আশিকের হাতের আঙুল ফেটে তরতর করে রক্ত ঝরে পড়ছে। মেয়েটি পানির বোতলটা নিয়ে লিফটের ফ্লোরে রেখে দ্রুত তার মুখে আবৃত সাদা নেকাবটা টান দিয়ে খুলে আশিকের রক্ত ঝরা আঙুলে পেঁচিয়ে দিতে উদ্যত হলে আশিক হাত সরিয়ে নিয়ে খুব বিনয়ের সুরে বলে

: য়ু হু। আগে আপনার গলাটা ভিজিয়ে নিন।

মেয়েটি বোতল তুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেকাব দিয়ে আশিকের রক্ত ঝরা আঙুল পেঁচিয়ে বেঁধে দিল। আশিক এক অনন্যা অপ্সরী সুন্দরী নারীর রূপে অভিভূত হলো।। সহসা একটা নিষ্পাপ সুন্দর যেন আশিকের মনকে এই বন্দিত্বের কথা ভুলিয়ে দিল। মেয়েটিকে বলল

: আমি আশিক। আপনি?

: নাজমা!

: তো, এত প্যাকেট, কী শপিং করলেন?

: গায়েহলুদের কিছু সামগ্রী।

: ও! আপনার গায়েহলুদ?

: জি না। ছোট বোন সূচনার কাল হলুদসন্ধ্যা।

: তো, সাথে কেউ আসেনি?

: বাবা নেই। মা বুড়ো মানুষ!

: সূচনা?

: সামান্য কটা আইটেম, ভাবলাম একাই পারব।

: আপনার হাজব্যান্ড?

: জি!

নাজমা আঁতকে উঠল। আশিক বলল

: চমকে উঠলেন যে!

: এমনি।

: না...বলছিলাম, ছোট বোনের বিয়ে, আপনার হাজব্যান্ডকে নিয়ে...

: নেই।

: নেই, মানে ছোট বোনকে বিয়ে দিয়ে তারপর...

: বিয়ে, ঘর-সংসারএসব নিয়ে আর ভাবছি না।

: কেন?

: ব্যাপারটা কোথায় যেন একটু কমপ্লিকেটেড মনে হচ্ছে। তাহলে কি আপনার হাজব্যান্ড...

: ছিল।

: তো, এখন উনি...

আশিক লক্ষ করল, নাজমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। যেন জীবনের কোনো একটা অতৃপ্ত গল্প লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সহসা আশিকের মোবাইল বেজে উঠল। রিসিভ করল

: হ্যালো, মা। এইতো একটা জায়গায়। কারেন্ট এলেই চলে আসব। জি। জি মা।

আশিক মোবাইল বন্ধ করল

: বিপদে আছেন, মাকে বুঝতে না দিয়ে ভালোই করেছেন। আমার মা আর সূচনা হয়তো আমাকে ফোন দিয়ে পাচ্ছে না।

: সঙ্গে মোবাইল আনেননি।

: চার্জ নেই।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ