ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭
স্থায়ী কমিটির বৈঠক

ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি। এটিকে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়ে মত দিয়েছে দলটি। গত বুধবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে ঘোষণাপত্রের ওপর বিএনপির মতামতে এই দলিলকে আর্কাইভে (সংরক্ষণ) রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বিএনপির কাছে পাঠানো জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে দলীয় মতামত চূড়ান্ত করতে বুধবার রাতে স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়। ওই রাতেই খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এনে তাতে চূড়ান্ত মতামত দিয়েছে বিএনপি। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংবিধানে স্থান দেওয়া হলে তাতে ভবিষ্যতে জটিলতা বাড়তে পারে।

কেউ কেউ নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানকেও সংবিধানে রাখার দাবি তুলতে পারে। এ জন্য তাঁরা রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় আর্কাইভে ২০২৪ সালের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার দাবি তোলে।

স্থায়ী কমিটি বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, খসড়া ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলা হলেও বিএনপি তাতে দ্বিমত জানিয়েছে।

গণ-অভ্যুথানের ১১ মাস পর এসে এই ধরনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। বৈঠক সূত্র জানায়, খসড়ার শুরুতে উল্লিখিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এ ভুখণ্ডের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রাম করেছিল এবং এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সাল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল’—এই অংশ অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে তা বিএনপি বাদ দিয়েছে।

দলটির নেতারা বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই স্বাধীনতাযুদ্ধকেই প্রধান অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে ঘোষণাপত্র শুরু হওয়া উচিত।

খসড়া ঘোষণাপত্রে আছে, যেহেতু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শাসনামলের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনির্মাণের ব্যর্থতা ও অপর্যাপ্ত ছিল এবং এ কারণে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও শাসকগোষ্ঠীর জবাদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি’—বিএনপি এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাসনামলের জায়গায় আওয়ামী শাসনামলের কথা উল্লেখ করেছে।

  খসড়ায় এক-এগারোসংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে ক্ষমতার সুষ্ঠু রদবদলের রাজনৈতিক ব্যর্থতার সুযোগে কথাগুলো পরিবর্তন করে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সুযোগে লেখার মতামত দিয়েছে  বিএনপি।

এ ছাড়া দলটি ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় বাদ দিয়ে সংবিধানের বিদ্যমান সংস্কার উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন করার পক্ষে মত দিয়েছে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের খসড়া থেকে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রসঙ্গটি বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রের খসড়ার শেষ অংশে সেকেন্ড রিপাবলিক কথাটি উল্লেখ ছিল। জানা গেছে, এর বাইরেও খসড়ায় আরো কিছু শব্দগত সংযোজন-বিয়োজন করেছে বিএনপি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল। অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তখন ওই খসড়ার ওপর তাদের মতামত দেয়। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে। এনসিপি সম্প্রতি সরকারকে আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় তাদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

সরকার ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আর এটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমরা তার ওপর মতামত গতকাল (বুধবার) দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকার একটা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সব কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু ৭২-এর সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ২৪-এর মহত্ত্ব ও গুরুত্বের প্রতি বিএনপি যথাযথ মর্যাদা দেয়। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য!

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা
শেয়ার
আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য!

হত্যা মামলার আসামি কনটেন্ট ক্রিয়েটর ব্যাডবয় তৌহিদ আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর বেপরোয়া ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় এখন রিমান্ডে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ।

সেই সঙ্গে তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা তিনটি ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। এসব ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী অনেক ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মিলছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, হার্ডডিস্ক ও ম্যাকবুক (তিনটি ডিভাইস) জব্দ করা হয়েছে। এসব ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।

এখন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আপাতত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রোসিকিউটর মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, আসামি তৌহিদ লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের নারকীয় হত্যা করতে উৎসাহিত করেন। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডিভাইসে অবশ্যই ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ আছে। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষা করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ষড়যন্ত্র, কার কী ভূমিকা এবং আন্দোলন দমনে কী ধরনের যোগসাজশ ছিল তা জানা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উদ্ধার হওয়া ডিভাইসগুলোতে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে। এসব চ্যাটে আন্দোলনের সময় কোথায় কিভাবে আন্দোলন দমন করা করা, সেইসব পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে।

এর আগে রবিবার রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, আসামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে একজন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং মাই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ২৪ জুলাইয়ে স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে তিনি সেলিব্রিটি ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর দিয়ে আন্দোলন বন্ধের জন্য প্ররোচিত করেছেন এবং যাঁরা দ্বিমত পোষণ করেছেন, তাঁদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এবং ওই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্র-জনতার দাবি উপেক্ষা করে আন্দোলনবিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ জোগান। আসামির উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণে মামলার ভিকটিম আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করেন বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলার প্রকৃত ঘটনা, অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দিন ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। এর আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৮ আগস্ট এই মামলায় তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মন্তব্য

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা আজ

    অক্টোবরে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা আজ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার কমিশনের বৈঠকে এই কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এদিকে গতকালই সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ইসির খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তির শুনানি শেষ হয়েছে।

ইসি সচিবালয় জানায়, টানা চার দিনে ৩৩টি জেলার ৮৪টি আসনের সর্বমোট এক হাজার ৮৯৩টি দাবি-আপত্তির ওপর ইসি শুনানি গ্রহণ করে। ইসির প্রস্তাবের বিপক্ষে এক হাজার ১৮৫টি এবং পক্ষে ৭০৮টি পরামর্শমূলক আবেদনের শুনানি হয়।

নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে গতকাল ইসি সচিব বলেন, আমরা যে কর্মপরিকল্পনা করেছি, সে কর্মপরিকল্পনা আপনাদের জানাব। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি।

এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন।

এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, কর্মপরিকল্পনার সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।

২০০৭-০৮ সাল থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের রেওয়াজ চলে আসছে। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রোডম্যাপ প্রকাশ করে তৎকালীন ইসি। বর্তমান ইসিও এ ধরাবাহিকতা বজায় রাখছে।

বর্তমান ইসি ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ভোট ধরে একটি প্রথমিক কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছিল। পরে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ভোটের সময়সীমা নির্ধারণ হওয়ার পর নতুন সময় ধরে কর্মপরিকল্পনাটি পরিমার্জন করা হয়।

ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা ও সাম্ভাব্য সময়সীমা উল্লেখ থাকছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের জন্য এক মাস সময় রাখা হচ্ছে। অক্টোবরে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত ভোটার হালনাগাদের খসড়া তালিকা ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত হবে। এরপর আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করে সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন দিয়ে এসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে। নির্বাচনী আইন সংস্কার; ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ চূড়ান্ত করা; নির্বাচনী প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করার সময়সীমা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময়এসব কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ থাকবে।

আসনবিন্যাস চায় পাবনা, আগের আসন পুনর্বহাল চায় সিরাজগঞ্জ : এদিকে সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গতকালের শুনানিতে পাবনায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের দাবি ওঠে। আর সিরাজগঞ্জবাসী আগের আসন পুনর্বহালের দাবি জানায়। পাবনার প্রতিনিধি জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন, বর্তমানে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে পাবনা-১ আসন রয়েছে। বেড়া উপজেলার অপরাংশ ও সুজানগর উপজেলা নিয়ে পাবনা-২ আসন রয়েছে। আমরা শুধু সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে পাবনা-১ আসন চাই।

তিনি আরো বলেন, একই সঙ্গে বেড়া ও সুজানগর নিয়ে পাবনা-২ আসন চাই। এই দুটি আসন বিন্যাসের প্রস্তাব ২০১৮ সালেও ছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সিরাজগঞ্জের প্রতিনিধি আবদুল মান্নান বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ২০০১ সাল পর্যন্ত সাতটি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসন কমিয়ে ছয়টি আসন করা হয়। আমাদের দাবি, আগে চৌহালী উপজেলা ও শাহজাদপুর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের চারটি ইউনিয়ন মিলে যে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন ছিল তা আমরা ফিরে চাই।

তিনি আরো বলেন, আমরা বর্তমানে বেলকুচি ও চৌহালী নিয়ে যে আসনে আছি এই আসনে আমরা থাকতে চাই না। দুর্গম ও নদীভাঙন এলাকা হিসেবে আমাদের একটিই দাবি, আমরা আগের আসনে ফিরে যেতে চাই।

 

মন্তব্য

রাকসুতে ভোট ২৫ সেপ্টেম্বর

রাবি প্রতিনিধি
রাবি প্রতিনিধি
শেয়ার
রাকসুতে ভোট ২৫ সেপ্টেম্বর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে এ তথ্য জানান রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠীর বিষয়টি বিবেচনা করে ২৮ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে গতকাল সকালে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ২৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুপুর ২টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রশিবিরের  নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী থাকায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয় নির্বাচন কমিশন। পরে সন্ধ্যা ৭টায় এক জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করে নির্বাচন তিন দিন এগিয়ে আনা হয়।

সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ৩১ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ১ থেকে ৪ ও ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর, প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ সেপ্টেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাডেমিক ভবনে ভোট চলবে এবং একই দিন ভোট গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটের সব প্রার্থীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ২৮ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করে তার প্রতিবেদন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

মন্তব্য
বিএনপি মহাসচিব

নির্বাচন বানচাল করতে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচন বানচাল করতে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে
মির্জা ফখরুল

পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য কিছুসংখ্যক রাজনীতিকের পক্ষ থেকে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেই একটি অংশ সচেতনভাবে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে রাজনীতিক কাজী জাফর আহমদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য, নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলে চলছে।

এমন দাবি তুলছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত নয়। সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলো সব ধরনের সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁরা কোথাও বাধা সৃষ্টি করেননি। কখনো বড় ধরনের দাবি তুলে রাজপথে নেমে সরকারকে বিব্রত করেননি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংস্কার শব্দের সঙ্গে সাধারণ মানুষ পরিচিত নয়।
সেখানে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) বুঝতে সময় লাগবে। এটা মানুষকে বোঝানো খুবই কঠিন। আবার কাকে ভোট দেওয়া হচ্ছে, সেটা জানা যাবে না। কিন্তু এসব বাস্তবায়নে অনেকে কথা বলছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন।

গণ-অভ্যুত্থানের সাত থেকে আট দিন পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছিলেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। এ নিয়ে তাঁকে অনেক সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখনই একটা পরিবর্তন হয়, সেই পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে নেয় অন্যরা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা চলছে একাত্তরের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার; কিন্তু সেটা ভোলা সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, এ কারণে সরকারের ভেতরের একটা মহল সচেতনভাবে চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরো অনেক কাজ করতে হবে।

এস আলম গ্রুপ ভারতে থাকা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, তারা পরিকল্পনা করছে, কিভাবে ওই টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করা যায় এবং শেখ হাসিনাকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কেমন যেন হতাশার ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। বেশির ভাগ মানুষ নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি আর দুর্নীতি। যেদিকে তাকাবেন, সেখানেই দুর্নীতি। দুঃখজনক যে রাজনৈতিক নেতারা জড়িত হয়ে পড়ছেন।

জটিলতা না বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ করাসহ ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ