প্রচণ্ড গরমে যখন চারদিকে ত্রাহি অবস্থা, তখন নাটোরের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মুখে সুখের হাসি। সংসারে অসচ্ছলতা নিয়ে একটুখানি সুখের আশায় জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা এই নারীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে দেশের পাঁচ মাস বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের দক্ষ করে গড়ে তোলার পর জীবনযোদ্ধা এই নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এ যেন তাঁদের কাছে ভাগ্য ফেরানোর হাতিয়ার। গত ২৭ ও ২৮ এপ্রিল নাটোর সদর ও লালপুরের ৪০ অসচ্ছল নারীকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে তাঁদের হাতে জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়।
নাটোরে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়া হলো ৪০ অসচ্ছল নারীকে
ভাগ্য ফেরানোর হাতিয়ার পেলেন নারীরা
শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমান বলেন, অসচ্ছল এসব নারী সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়ে আত্মনির্ভশীল হয়ে উঠতে পারবেন। অসহায় এসব নারীকে প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়া হলো। তাঁরা এই মেশিনের মাধ্যমে কাপড় সেলাই করে যা উপার্জন করবেন, সেটা কিছুটা হলেও সংসারের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।
নাটোরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার উপকারভোগী বিউটি বেগম জানান, স্বামীর উপার্জনে সংসার ঠিকমত চলে না। সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটে। তাই বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নাম লিখিয়ে পোশাক তৈরি করা শিখেছেন। এখন আশা করছেন এই সেলাই মেশিন দিয়ে পোশাক তৈরি করে উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। একই কথা শাহিদা বেগম ও তানিয়া খাতুনের।
দ্বিতীয় দিন ২৮ এপ্রিল নাটোরের লালপুরে ২০ জন অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা। উপজেলার ডেবরপাড়া বুধিরামপুর গ্রামের বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতিষ্ঠিত স্কুল প্রাঙ্গণে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়।
এদিন সকালে লালপুর বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি ও শুভসংঘ স্কুলের সমন্বয়ক জালাল উদ্দীন বাবুর সভাপতিত্বে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ।
এ সময় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশে সামাজিক ও মানবিক কাজের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমার নির্বাচনী এলাকার দরিদ্র অসচ্ছল নারীদের জীবনমান উন্নয়নে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকের হাতে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হচ্ছে, এটা সত্যি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এমন কর্মকাণ্ডের ফলে নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে ও স্বাবলম্বী হচ্ছে। পাশাপাশি আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে আর এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই।’
লালপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমার এলাকায় এমন একটি কাজ হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এটি সত্যি, যেখানে বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছে, তার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এখন এ অঞ্চলের শিশুরা সেখানে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি এই সেলাই মেশিন পেয়ে অবশ্যই অসচ্ছল নারীরা স্বাবলম্বী হবেন।’
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা, লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ, মাজার শরীফ টিবিএম কলেজের অধ্যক্ষ ও দৈনিক আজকের পত্রিকার লালপুর প্রতিনিধি ইমাম হাসান মুক্তি।
সেলাই মেশিন উপহার পাওয়া উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের বালিতিতা ইসলামপুর গ্রামের শিরিনা খাতুন (৩৮) বলেন, ‘আমি বিধবা। আমার দুটি সন্তান। স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব অভাবে দিনাতিপাত করছি। রোজগারের জন্য আমি সেলাই মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন সেলাই মেশিন দিয়ে আয়-রোজগার করে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারব। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেলাই মেশিন পাওয়া মনিরা বেগম (৪০) বলেন, ‘দিনমজুরির কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে আমার ছেলের পড়াশোনা খরচ ও পরিবারের খরচ চালাই। কিন্তু আমার এই অবস্থা দেখে বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই শেখার সুযোগ করে দেয় এবং তিন মাস ফ্রি প্রশিক্ষণ শেষে আজ সেলাই মেশিন উপহার পাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। এই সেলাই মেশিন পেয়ে সংসারে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পারব। সন্তানটির ভালোভাবে লেখাপড়া করাতে পারব। এ জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি চিরদিন ঋণী হয়ে থাকব। পাশাপাশি আমার মতো অনেক অসহায় নারী এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখছে।’
নাটোরের লালপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডেবরপাড়া গ্রামে অসচ্ছল ২০ নারীকে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়
সম্পর্কিত খবর

হার না মানা সুস্মিতা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ
বসুন্ধরা শুভসংঘ ডেস্ক

বাবা সমর চক্রবর্তী ছিলেন ব্যবসায়ী। তাঁর আয়েই চলত সংসার ও তিন সন্তানের লেখাপড়া। আকস্মিকভাবে তাঁর মৃত্যুতে স্ত্রী লক্ষ্মীরাণী চক্রবর্তী দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। দোকান চালানোর মতো আর কেউ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায়।

রাশিদার সন্তানদের লেখাপড়াও চলবে নিশ্চিন্তে
বসুন্ধরা শুভসংঘ ডেস্ক

‘স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। না পারছি তাদের ঠিকভাবে খাওয়াতে, না পারছি লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে। এই বিষয়ে কাউকে কিছু না পারছি বলতে, পারছি না সহ্য করতে।’ তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পেয়ে এভাবেই অনুভূতি জানাচ্ছিলেন রাশিদা বেগম।

দারিদ্র্য দূর করতে বসুন্ধরা গ্রুপের অনন্য উদ্যোগ
- ফারহান উদ্দিন আহমেদ পাশা, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, বিএনপি কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট

গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের পাশে দাঁড়ানোর এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বসুন্ধরা গ্রুপ যে চিন্তা থেকে বাংলাদেশের একেবারে শেষ প্রান্তের জেলা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জকে বেছে নিয়েছে, তাদের প্রতি অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। পিছিয়ে পড়া এই উপজেলায় অসচ্ছল মানুষ যেমন আছে, তেমনি নদীভাঙন-বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এসব পরিবারের অনেক ছেলেমেয়ে অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারছে না, নানাভাবে সমাজে লাঞ্ছিত হচ্ছে।

এই নারীরা একদিন সমাজের মডেল হবেন
- মাওলানা রুহুল আমিন, আমির, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট

আমাদের দেশের শিল্পপতিরা প্রতিদিন নাশতা খেতে বা সামান্য কাজে যত টাকা ব্যয় করেন, তা দিয়ে যদি সাধারণ মানুষের ভালো করার কথা চিন্তা করেন, তাহলে সমাজের জন্য তাঁরা অনেক কিছু করতে পারেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করেন। তাঁদেরই একজন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপ বা বসুন্ধরা শুভসংঘ ইচ্ছা করলে অসচ্ছল নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন বিতরণ না করে এই টাকা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারত।