<p>‘কভিড পরিস্থিতির আগে মোটরসাইকেলশিল্পের বাজার অত্যন্ত ভালো ছিল। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে এই শিল্পের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ করে হয়। কিন্তু গত বছরের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে কভিড পরিস্থিতিতে সব কিছু থমকে গেছে। এতে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে একই সঙ্গে সুযোগও তৈরি হয়েছে। সুযোগ এই কারণে যে বর্তমানে মানুষ ব্যক্তিগত বাহনের কথা বেশি ভাবছে। তাই করোনার প্রভাব কমতে থাকায় মোটরসাইকেলশিল্প চাঙ্গা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ।’</p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2021/09.Septembar/05-09-2021/Kk-21'09'5-3A.jpg" style="border-style:solid; border-width:1px; float:left; height:310px; margin-left:10px; margin-right:10px; width:250px" />মোটরসাইকেলশিল্পের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এসব কথা বলেন এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিডেটের সিওও নাগেন্দ্র দিবেদী। তিনি বলেন, “করোনায় সম্পূর্ণ লকডাউনে বিক্রয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এপ্রিল ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত এই শিল্পে বিক্রি ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে সরকার এপ্রিল থেকে আবারও কঠোর লকডাউন আরোপ করে, এই অবস্থার মধ্যেও আগস্ট পর্যন্ত বিক্রয়ের হার গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই শিল্পের আকার আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমার বিশ্বাস। দেশের উত্তরাঞ্চল হচ্ছে ১০০, ১১০, ১২৫ সিসি সেগমেন্টের বড় বাজার, এই অঞ্চলে আমাদের প্রডাক্টগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। কভিডের প্রভাব এই বাজারে বেশি ছিল। এ ছাড়া ‘আমার হিরো’ নামে একটি অর্থায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মাসিক কিস্তি সুবিধা গ্রাহকদের জন্য চালু ছিল। কিন্তু কভিডের সময় সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। এত সমস্যা সত্ত্বেও ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করে আমরা বাজারে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছি এবং এ বছর আমাদের মার্কেট শেয়ার ২২ শতাংশ।”</p> <p>বাংলাদেশে হিরোর অবস্থান নিয়ে এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘যেকোনো বিদেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে হিরো মোটোকর্প লিমিটেড প্রথম কম্পানি যারা নিটল-নিলয় গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে এবং যশোরে নিজস্ব ম্যানুফ্যকচারিং ফ্যাক্টরিতে পুরোদমে অপারেশন শুরু করে ২০১৭ সালের জুন মাসে। এই কারখানায় বছরে তিন লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে পারে। এই প্লান্টটি গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড, রপ্তানির জন্য আইএমএফ সার্টিফিকেট জিতেছে, উপরন্তু এটি একটি জিরো ডিসচার্জ এবং ওয়াটার পজিটিভ প্লান্ট। এ ছাড়া আমরা বেশ কিছু সিএসআর কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।’</p> <p>হিরোর বড় অর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় মাইলফলক হচ্ছে, হিরো মোটোকর্প বিশ্বে ২০১০-২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ কোটির বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে। অর্থাৎ মাত্র ১১ বছরে এই মাইলফলক স্পর্শ করল হিরো, যা বিশ্বের যেকোনো কম্পানির জন্য প্রথম। বিক্রয়ের সংখ্যায় গত ২০ বছর ধরে টানা শীর্ষস্থানে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল এবং স্কুটার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হিরো। বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ৪০টিরও বেশি দেশে পণ্য বিক্রি করছে।’</p> <p>নাগেন্দ্র দিবেদী বলেন, ‘হিরো বিশ্বের এক নম্বর ব্র্যান্ড। কারণ ৪০ বছর ধরে হিরো একাধিক প্রজন্মের কাছে একটি বিশ্বস্ত বাইক হিসেবে পরিচিত। এই ব্র্যান্ডটি জনগণকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য ক্ষমতায়ন করছে। আমাদের মূলমন্ত্র হলো  “Be the future of Mobility”. এই দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য আমরা ভারত ও জার্মানিতে অত্যাধুনিক আরঅ্যান্ডডি কেন্দ্র নির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি।’</p> <p>তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ক্রেতাসাধারণের জন্য বর্তমানে হিরো সব কয়টি সেগমেন্টে ১০টি মডেল তৈরি করে। জ্বালানি সাশ্রয়, নির্ভরযোগ্য পণ্যের জন্য লাখ লাখ গ্রাহকের কাছে হিরো স্বীকৃত আর কম্পানির বিক্রয় ও বিক্রয়ত্তর সেবা প্রদানের জন্য সারা দেশে ৫০০টি টাচ পয়েন্ট রয়েছে। আমরা দেশের প্রতিটি প্রান্তে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা এক হাজারের বেশি টাচ পয়েন্ট অতিক্রম করার আশা করছি। আমাদের লক্ষ্য প্রতি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত একটি টাচ পয়েন্ট নিশ্চিত করা।”</p> <p>তিনি বলেন, “গত বছর হিরো ‘জয়রাইড’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে, যেখানে গ্রাহক ডিসকাউন্ট মূল্যে বছরব্যাপী সেবা নিতে পারবে। শুরু থেকেই আমরা এই প্রগ্রামে গ্রাহকদের ব্যাপক আগ্রহ দেখছি। এর বাইরে সম্প্রতি আমরা অনলাইন সেমিনারের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেছি। কভিড যুগে আমরা গ্রাহকদের প্রশিক্ষণের জন্য ডিজিটালভাবে ২৪টি কাস্টমার মিটের ব্যবস্থা করেছি। এই প্রগ্রামের মাধ্যমে এক হাজারের বেশি গ্রাহককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। এ ছাড়া আমরা গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি হিরো কেয়ার ক্যাম্পেইন চালু করেছি।”</p> <p>ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নাগেন্দ্র দিবেদী বলেন, ‘হিরোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে বাংলাদেশের বাজারেও টু-হুইলার শিল্পে এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। সম্প্রতি আমরা তরুণ ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে থ্রিলার ১৬০আর এবং হাংক ১৫০আর চালু করেছি। বিক্রয়ের পরে আমরা সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা মনোনিবেশ করছি। কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ এবং ত্রুটিহীন পণ্য সরবরাহের জন্য প্লান্টে ব্যাপক বিনিয়োগ করছি। প্রমোশন এবং ব্র্যান্ডিংয়েও বিনিয়োগ হচ্ছে। আমরা সম্প্রতি চিত্রনায়ক আরিফিন শুভকে আমাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নিয়েছি। এসব কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে আমরা এক নম্বর ব্র্যান্ডে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছি। গ্রাহকরা আমাদের ব্র্যান্ডের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখছে, যা আমাদের জন্য প্রধান চালিকাশক্তি।’</p>