হৃৎপিণ্ডের কাজ হলো অক্সিজেন ও বিশুদ্ধ রক্ত সারা শরীরে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু সেটা যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ হয় না বা পৌঁছে না, তখনই শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন —
ডা. মো. মাহবুবুর রহমান
সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও সিসিইউ ইনচার্জ
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল
হৃদরোগীদের একটি অন্যতম উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট বা সহজেই হয়রান হয়ে যাওয়া। আর এই শ্বাসকষ্টের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো হার্ট ফেইলিওর হওয়া।
মাংসপেশি, রক্তনালি, ভালভ—এই তিনটি হলো হার্টের মূল উপাদান। এর যেকোনো একটিতে সমস্যা হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এর মধ্যে রক্তনালির ব্লক অন্যতম প্রধান কারণ। রক্তনালিতে চর্বি জমে ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেটাকে বলা হয় হার্ট অ্যাটাক। বিভিন্ন কারণে মাংসপেশি দুর্বল হয়েও হার্ট ফেইলিওর হতে পারে; একে বলে কার্ডিওমায়োপ্যাথি।
অন্য রোগেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে : হৃৎপিণ্ডের ভালভ নষ্ট হবার মূল কারণগুলোর মধ্যে বাতজ্বর, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, রক্তনালির ব্লক এবং কিছু কোলাজেন ডিজিজ দায়ী। এ ছাড়া হার্টের চারদিকে পানি জমেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
শুধু হার্টের নিজস্ব সমস্যা নয়, অর্থাৎ অন্য কোনো রোগ যেমন—ফুসফুসের রোগ, তীব্র রক্তশূন্যতা, থাইরয়েড, তীব্র ইনফেকশন, পানিশূন্যতা, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, যেকোনো তীব্র সিস্টেমিক রোগ এমনকি মানসিক আতঙ্ক থেকেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
করণীয় : হৃদরোগে আক্রান্ত এমন কোনো ব্যক্তির হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে প্রথমেই জানতে হবে, এই শ্বাসকষ্ট হার্টের কারণেই হচ্ছে কি না। এটি নিশ্চিত হতে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম ও বুকের এক্স-রে পরীক্ষাগুলো করান। তবে রোগীর শ্বাসকষ্ট চলতে থাকলে বিলম্ব করা যাবে না। কেননা হৃদরোগ চিকিৎসায় সাফল্যের চাবিকাঠি হলো সময়।
অর্থাৎ সময়মতো রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করলে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যায়। এর আগে সম্ভব হলে অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখে প্রয়োজন মনে হলে অক্সিজেন সাপোর্টও দেওয়া যেতে পারে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগীর সঠিক চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
হৃৎপিণ্ডের পরিচর্যা করুন সারা জীবন : একটি মানুষের হৃৎপিণ্ড সারা জীবন তার সেবা করে আসছে। সুতরাং আমাদের উচিত হৃৎপিণ্ডেরও সেবা বা পরিচর্যা করা। আর হৃৎপিণ্ডের সেবা কমবেশি সারা জীবন করে যেতে হবে। এ জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করলে, সঠিক মাত্রায় ঘুম ও বিশ্রাম নিলে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে এবং চিকিৎসকের দেওয়া কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে হৃদরোগ হলেও ভালো থাকা যায়।