ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
বন্যপ্রাণী

হঠাৎ দেখা বড় বেজি

  • বেজি স্তন্যপায়ী প্রাণী। নেইল, নেউল বা নকুল নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ৩৭-৪৮ সেন্টিমিটার। দেহ ঘন রুপালি-ধূসর লোমে আবৃত। খোলা বন, ঝোপঝাড়, ফসলি জমি ও মানুষের আবাসের কাছাকাছি বাস করে। এরা বেশ সুযোগসন্ধানী শিকারি; ইঁদুরজাতীয় প্রাণী, সাপ, পাখির ডিম-ছানা, গিরগিটি, সরীসৃপ ইত্যাদি এদের প্রধান খাদ্য। সহজেই বিষাক্ত সাপকে ঘায়েল করতে পারে
ড. আ ন ম আমিনুর রহমান
ড. আ ন ম আমিনুর রহমান
শেয়ার
হঠাৎ দেখা বড় বেজি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলসিলা রেস্টুরেন্টের পাশে একটি বড় বেজি। ছবি : লেখক

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর অ্যাপ্লায়েড ইথোলজির (ISIE) সপ্তম কর্মশালায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও কল্যাণ-এর ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিনাইদহ ক্যাম্পাসে এসেছি। কর্মশালা শেষে ঢাকা ফিরব। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক জালাল উদ্দিন সরদার ভাইয়ের বিশেষ অনুরোধে তাঁর সঙ্গে রাজশাহী যেতে বাধ্য হলাম। তখন বিকেলে সাড়ে ৫টা বাজে।

জালাল ভাই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটলেন। ট্রেন ৬টা ৪৫ মিনিটে। ছাড়বে চুয়াডাঙ্গা থেকে। এটা শুনে আমি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম।
এত তাড়াতাড়ি ওখানে কিভাবে যাব? কিন্তু উনি অভয় দিয়ে বললেন, চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা ট্রেন ধরতে পারব।

ঝিনাইদহ ক্যাম্পাস থেকে বের হতে হতেই চুয়াডাঙ্গার বাস চলে গেল। এতে দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেল।

কিন্তু তাসরিফ নামের এক ইন্টার্ন ছাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে একটি বাসে তুলে দিল। দ্রুতগামী এই বাসে মাত্র ৩৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা পৌঁছে গেলাম। স্টেশনে গিয়েই আরেক সঙ্গী অধ্যাপক মাহবুবকে পেলাম। ট্রেন এলো ৪৫ মিনিট দেরিতে। এর মধ্যে স্টেশনে পক্ষী আলোকচিত্রী স্নেহাস্পদ মারুফ রানার সঙ্গেও দেখা হলো।
ট্রেন ছাড়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সে আমাদের সঙ্গ দিল। রাজশাহী পৌঁছলাম রাত ১১টায়। এমফিল ছাত্র ড. নিয়ামতুল্লাহ রাতের খাবার খাইয়ে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথিশালার জুবেরি হাউসে নিয়ে গেল। পরদিন ভোর সোয়া ৬টায় ঘুম থেকে উঠে ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়লাম। গেস্টহাউস থেকে হাঁটতে হাঁটতে প্যারিস রোডে ভিসির বাংলোর কাছে পৌঁছলাম। এরপর রাস্তার দুই পাশের উঁচু উঁচু সব মেঘশিরীষগাছে তন্নতন্ন করে বিরল একটি পাখিকে খুঁজলাম। কিন্তু পেলাম না। এরই মধ্যে সাড়ে ৭টা বেজে গেছে। নিয়ামতুল্লাহ আমাকে স্টেডিয়ামের পাশের সিলসিলা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। বহুদিন পর সিলসিলায় এলাম। ২০১১-১৫ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেই এখানে নাশতা সারতাম। রেস্টুরেন্টের ভেতরে না বসে পুকুরপারের বেঞ্চে বসলাম। একসময় এই পুকুরপারে কতই না পাখির ছবি তুলেছি। পাখি এখনো আছে। নাশতা রেডি হতে হতে দু-চারটা ক্লিক করলাম। ভুনা খিচুড়ি, সবজি আর ডিম ভাজায় নাশতা শুরু হলো। খাচ্ছি আর এদিক- ওদিক তাকাচ্ছি। এমন সময় হঠাৎ করেই পুকুরপারের ভগ্নপ্রায় একটি দেয়ালের লতাঝোপ থেকে একটি প্রাণীর মাথা বেরিয়ে এলো। প্রথমে ততটা গুরুত্ব না দিলেও সে সে যখন পুরোপুরি বেরিয়ে এসে তার গায়ের চকচকে রুপালি লোমগুলো দেখাল, তখন একমুহূর্তও দেরি করলাম না। খিচুড়ি রেখে দ্রুত হাত ধুয়ে ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে শাটারে ক্লিক করে গেলাম। প্রাণীটিকে প্রথম দেখি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের সানওয়ে ওয়াইল্ডলাইফ পার্কে। এরপর প্রায় ১৭ বছর পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আবারও দেখি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমির কাছে মাছ চাষের পুকুরের আশপাশে। সেদিন প্রাণীটির প্রায় দেড় শ ছবি তুলেছিলাম। কিন্তু হার্ডড্রাইভ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরিয়ে রাখা দুটি ছাড়া বাকি ছবিগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হলো না। নাশতা সেড়ে আবারও মাছের পুকুরের কাছে গেলাম। পুকুরের কেয়ারটেকার মো. শরীফ ওখানেই ছিল। সে আমাকে চিনতে পারল। আমি তাকে প্রাণীগুলোর কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, বড়গুলো আশপাশে আছে। অবশ্য এখানে ওদের একটি ছানা রয়েছে। এই প্রাণীগুলো শরীফের যেন পোষা হয়ে গেছে! শরীফ ডাক দিতেই ছানাটি আমাদের কাছে চলে এলো। মোটেও ভয় পেল না। অথচ সিলসিলা রেস্টুরেন্টের পাশের প্রাণীটির চোখে চোখ পড়তেই পালিয়ে গেল। যা হোক, ছানাটির বেশ কিছু ছবি তুলে ও ভিডিও করে শরীফের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

এতক্ষণ যে স্তন্যপায়ী প্রাণীটির কথা বললাম সেটি এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান বন্যপ্রাণী বড় বেজি। নেইল, নেউল বা নকুল নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম কমন বা ইন্ডিয়ান গ্রে মঙ্গুজ। হারপেস্টিডি গোত্রের প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম হারপেস্টেস এডওয়ার্ডসি। সুন্দরবন বাদে এ দেশের সবখানেই দেখা যায়। দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্য, মরিশাস, দক্ষিণ এশিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানে বিস্তৃত।

লেজ বাদে বড় বেজির দৈর্ঘ্য ৩৭ থেকে ৪৮ সেন্টিমিটার। লেজ ৩৩ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার। ওজন ০.৯ থেকে ২.০ কেজি। লম্বা দেহের তুলনায় পা বেশ খাটো। কান ছোট। ঝোপালো লম্বা লেজ। দেহ ঘন রুপালি-ধূসর লোমে আবৃত, যা অন্যান্য প্রজাতির বেজির থেকে মোটা। দেহ থেকে পায়ের লোম গাঢ়। লেজের অগ্রভাগ হালকা হলদে বা সাদা। পুরুষ বেজি স্ত্রী থেকে আকারে বড়।

বড় বেজি খোলা বন, ঝোপঝাড়, ফসলি জমি ও মানুষের আবাসের কাছাকাছি বাস করে। সচরাচর মাটি বা গাছের গর্তে বাস করে। পুরনো জ্বালানি কাঠের স্তূপ, স্তূপ করা গাছের গুঁড়ি, ইটের স্তূপ ও পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি এদের পছন্দ। দিবাচর, সান্ধ্যচারী ও ভূচারী প্রাণীগুলো একাকী বা জোড়ায় থাকে। কদাচ গাছে চড়ে। ওরা বেশ সুযোগ সন্ধানী শিকারি। ইঁদুরজাতীয় প্রাণী, সাপ, পাখির ডিম-ছানা, গিরগিটি, সরীসৃপ ইত্যাদি এদের প্রধান খাদ্য। সহজেই বিষাক্ত সাপকে ঘায়েল করতে পারে। অমেরুদণ্ডী প্রাণী, ফল, গাছের শিকড়-বাকড়েও আপত্তি নেই। সচরাচর নীরব থাকে।

এরা বছরের যেকোনো সময় প্রজনন করতে পারে। বছরে দুই-তিনবার ছানার জন্ম দেয়। স্ত্রী ৬০ থেকে ৬৫ দিন গর্ভধারণের পর মে-জুনে বা অক্টোবর-ডিসেম্বরে দুই থেকে চারটি ছানা প্রসব করে। আয়ুষ্কাল প্রায় বুনো পরিবেশে সচরাচর সাত বছর এবং আবদ্ধাবস্থায় ১২ বছর পর্যন্ত।  

লেখক : পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ