<p>মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য রাষ্ট্রীয় বাজেটের বরাদ্দ থাকছে মাত্র ২ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সারা বিশ্বের সরকারগুলোর মনোযোগ ও পরিকল্পনাও হতাশাজনক। করোনাভাইরাস মহামারিতে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি দরকার ছিল, কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মানসিক স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অনেকটাই অধরা থাকছে।</p> <p>আজ ১০ অক্টোবর। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির আগে গতকাল শনিবার ডাব্লিউএইচও মেন্টাল হেলথ অ্যাটলাস প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি তিন বছর পর পর তারা এটি প্রকাশ করে।</p> <p>ওই প্রতিবেদনে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গোটা বিশ্বের দৈন্যদশা উঠে এসেছে। চিকিৎসা ব্যয়বৃদ্ধি, তথ্য সহজকরণ, মানুষের দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করা এবং এ খাতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকারের বাড়তি মনোযোগ আদায়ে বৈশ্বিক এই সংস্থাটি দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ১৭১টি দেশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটি এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।</p> <p>প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র ৩৯ শতাংশ দেশ জানিয়েছে, তারা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করেছে। ৩৪ শতাংশ দেশ জানিয়েছে, তারা এই খাতের উন্নতিতে প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ দিয়েছে। অর্থাৎ এ বিষয়ে অনেক দেশেই পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া লোকবল কিংবা আর্থিক বরাদ্দ দিয়েই কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের চিত্র বদলানো যাবে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বের সংকট রয়েছে।</p> <p>ডাব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারির সময় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার স্পষ্ট এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়াটা অত্যন্ত উদ্বেগের ব্যাপার। এই জায়গায় মনোযোগ দিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কোনো স্বাস্থ্যই নেই।’</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক চিকিৎসা অনুযায়ী, সব মানদণ্ড পূরণ করেছে মাত্র ২৫ শতাংশ দেশ। এ ছাড়া মাঝারি আয়ের দেশের ৭০ শতাংশ হাসপাতাল নির্মাণে অর্থ ব্যয় করে। উন্নত দেশে এর পরিমাণ ৩৫ শতাংশ। এতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতাল নির্মাণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক খাতেই বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে।</p> <p>তবে প্রতিবেদনে কয়েকটি ইতিবাচক ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে আত্মহত্যা কমানোর ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য বীমা বা এই ধরনের স্কিমের আওতায় আসার হার ৭৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশ হয়েছে। প্রতি লাখ মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ২০১৪ সালে ছিল মাত্র ৯ জন, যা গত বছরে ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে এসব অগ্রগতি সামান্য।</p> <p>প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা কাঠামোর উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তার ৩১ শতাংশ কর্মসূচিতে পর্যাপ্ত মানবসম্পদ ও আর্থিক সংস্থান নেই, ২৭ শতাংশ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই এবং ৩৯ শতাংশ ক্ষেত্রে অগ্রগতির কোনো নজিরই নেই।</p> <p>উল্লেখ্য, ডাব্লিউএইচও ২০২০ সাল পর্যন্ত যে বিস্তৃত মানসিক স্বাস্থ্য কর্মপরিকল্পনা এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুমোদন করেছিল তা ২০৩০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।</p>