<p>অর্থের অভাবে নবম শ্রেণিতেই স্কুল ছেড়েছিলেন মো. নাছির উদ্দিন। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের রায়ছটা গ্রামের সেই ছেলেই হঠাৎ একদিন আবির্ভূত হন ‘কোটিপতি নাছির’ হয়ে। দান করা শুরু করেন গ্রামে গিয়ে। তবে তখনো গ্রামের লোকজন বুঝতে পারেনি তিনি কিভাবে এত টাকার মালিক হলেন। পরে মামলা, গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে নাছির আসলে নানা ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করে ওই টাকার মালিক হয়েছেন। কোটিপতি নাছির পরে পরিচিতি পান ‘চিটার নাছির’ হিসেবে; যাঁর ঠিকানা এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।</p> <p>মামলা ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, সমাজের উচ্চবিত্ত ও ব্যবসায়ীদের ধোঁকা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নাছির প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।</p> <p>এলাকার লোকজন জানায়, বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়নের রায়ছটা গ্রামের মৃত আবুল হাশেমের ছেলে নাছির। ২০০৩ সালে বাহারছড়া ইউনিয়নের মোশাররফ আলী হাটে একটি ছোট কাপড়ের দোকান দিতেন তিনি। ২০০৪ সালে তিনি সৌদি আরব যাওয়ার কথা বলে এলাকা ছাড়েন। এরপর গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালো করে চিনতও না। ২০১৩-১৪ সালের দিকে হঠাৎ এলাকায় গিয়ে গরিব-অসহায় মানুষকে দান করা শুরু করেন। কাউকে টাকা, কাউকে আধাপাকা বাড়ি করে দিতে থাকেন। দুই-তিন বছর এভাবেই চলতে থাকে।</p> <p>এর মধ্যে ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর হাজার হাজার মানুষকে মেজবান খাওয়ান নাছির। মেজবানের সময় নাছির হেলিকপ্টারে করে বাড়িতে যান। এলাকায় তিনি হয়ে ওঠেন ‘কোটিপতি নাছির’। গত বছর ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁশখালীর চার হাজার পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল এবং ৫০০ করে টাকা দেন তিনি। এলাকায় গরিবদের ৫৫টি আধাপাকা ঘর করে দেন। প্রতিটি ঘরে খরচ হয় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। এভাবে দান করে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তখনো কেউ জানত না তাঁর টাকার উৎস কী।</p> <p>পরে নাছিরের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশ কিছু মামলা হয়। গত ৩ মার্চ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাড়ি থেকে নাছিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একে একে পাঁচটি প্রতারণার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে নাছির প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন।</p> <p>মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঠিকাদারকে জুটমিল ও সেতুতে পাথর সরবরাহের মাধ্যমে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।</p> <p>তবে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ব্যবসায়ী ওসমান গনি তাঁর বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় প্রতারণার মামলা করার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করে নাছিরের কুকীর্তি। ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ১০ জুলাই বাদীর কাছ থেকে আট কোটি টাকা নিয়েছেন নাছির। কথা ছিল ব্যবসা করে লভ্যাংশসহ মূল টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু তা না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে নাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওসমান গনি।</p> <p>গত ৮ মার্চ রাজধানীর শাহ আলী থানায় নাছিরের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন ঠিকাদার মাসুদ রানা। ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে রানার। তাঁর বন্ধু আরিফুল ইসলামের সঙ্গে নাছিরের বন্ধুত্ব ছিল। নাছির ও আরিফুল মিলে রানাকে পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহ এবং বাঁশখালীর বিদ্যুেকন্দ্রে বিনিয়োগের অনুরোধ করেন। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বাদী এক কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন নাছিরকে। পরে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন নাছির।</p>
