ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা

ফাঁসির ৯ আসামিসহ সবাই খালাস কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ফাঁসির ৯ আসামিসহ সবাই খালাস কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আহত সাংবাদিক জাবেদ আখতার

তিন দশক আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। আসামিদের সবাই বিএনপির নেতাকর্মী। প্রায় ছয় বছর আগে পাবনার আদালত ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল, জেল আপিল মঞ্জুর ও ডেথ রেফারেন্স মঞ্জুর করে গতকাল বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতের রায়টি বাতিল করা হয়েছে।

গত ৩০ জানুয়ারি এই মামলায় আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়। আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কায়সার কামাল, কামরুজ্জামান মামুন ও জামিল আক্তার এলাহী। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মজিবুর রহমান।

যে ঘটনায় মামলা ও বিচার : ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা। তাঁকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রেনটিতে ফের হামলা চালানো হয়।

এ ঘটনায় দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ওই সময়কার ওসি বাদী হয়ে ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা করার পর ওই বছর কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ।

বিচার শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এ ছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সেই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজার আসামিদের তিন লাখ টাকা করে এবং ১০ বছরের সাজার আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিচারের সময় ৩২ জন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। রায়ের পর ১৪ জুলাই যাবজ্জীবন সাজার আরো সাত আসামি আত্মসমর্পণ করেন।

ফাঁসি থেকে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন এ কে এম আক্তারুজ্জামান, মো. জাকারিয়া পিন্টু, মোখলেছুর রহমান বাবলু, রেজাউল করিম শাহীন, শহীদুল ইসলাম অটল, আজিজুর রহমান ফড়িং, শ্যামল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ ও শামসুল আলম।

এই রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরাও আপিল করেন। ওই বছর ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট দণ্ডিতদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। গত ৩০ জানুয়ারি সেসব আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের চূড়ান্ত শুনানির পর উচ্চ আদালত রায় ঘোষণা করলেন।

 

ভাষার মাসে বাংলায় রায়

রায় ঘোষণার আগে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, এই মামলার বিষয়বস্তু অনেক বিস্তৃত। সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করা হবে। যেহেতু ফেব্রুয়ারি মাস মহান ভাষা আন্দোলনের মাস। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত রায়টি বাংলায় ঘোষণা করা হবে। এরপর রায় ঘোষণা করেন আদালত।

 

রায়ের পর্যবেক্ষণ

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিচারিক আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা পক্ষপাতদুষ্ট এবং বিশেষ কোনো ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত। বিচারিক আদালতের রায়ে বিচারকের বিচারিক মননের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। বিজ্ঞ বিচারক গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে এই রায় দিয়েছেন। এ যেন বেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার মতো। মূলত এটি একটি বিদ্বেষপ্রসূত মামলা, যেখানে তিলকে তাল করা হয়েছে।

 

পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে আপিলের সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্রপক্ষ

রায় নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অবস্থান জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে আদালতকে সহযোগিতা করে থাকি। আইন কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের ভূমিকা রাষ্ট্রের পারপাস সার্ভ করা। আমাদের কাজ হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে আদালতের বিচারকাজে সহযোগিতা করা। এই মামলার নথিপত্র, সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে আমার মনে হয়েছে হাইকোর্ট উপযুক্ত রায় দিয়েছেন।

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, জানতে চাইলে মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে এ রায়ের বিষয়ে নোট দেওয়া হবে। তা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

 

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা

এই মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে বিএনপির কয়েক শ নেতাকর্মী সুপ্রিম কোর্টে এসে জড়ো হন। রায় ঘোষণার সময় তাঁদের অনেকে অদালতকক্ষে এবং আদালতের বারান্দায় অবস্থান নেন। রায় ঘোষণা শেষে তাঁরা এনেক্স ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন। যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন মামলার রায় ও আদেশের বিষয়ে সংবাদকর্মীদের ব্রিফ করে থাকেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

গতকাল এই ডেথ রেফারেন্স মামলার রায় শেষে ঈশ্বরদী বিএনপির কয়েক শ নেতাকর্মী সংবাদ মাধ্যমের ডায়েস ঘিরে অবস্থান নেন। তখন ডায়েসে দাঁড়ানো ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. হাবিবুর রহমান হাবিব। সাংবাদিকরা এই মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ব্রিফ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের সেই সুযোগ না দিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। এর প্রতিবাদ করলে এটিএন নিউজের প্রতিবেদক জাবেদ আখতারের ওপর চড়াও হন তাঁরা। উপর্যুপরি কিলঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন তাঁরা এই সাংবাদিককে। এই নেতাকর্মীদের হামলার হাত থেকে জাবেদকে রক্ষা করতে গেলে অন্য সংবাদিকরাও হামলার শিকার হন। পরে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকরা আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ব্রিফ বর্জন করেন। পরে এনেক্স ভবনের সামনে ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম রেখে অবস্থান নিয়ে এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান সাংবাদিকরা।

এ ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাঁদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেছে সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরাম (এসআরএফ) ও ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ