ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। এই কর্মে উদ্যোগী ভূমিকা ছিল স্থানীয় প্রশাসনের। অনেক সংস্থা নিজ উদ্যোগেও এগুলো তৈরি ও স্থাপন করে।
দুঃশাসনের ১৫ বছর
দেশজুড়ে ভাস্কর্য ম্যুরালে ব্যয় কয়েক হাজার কোটি টাকা
- * অতি উৎসাহ ছিল মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের। সহায়তা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ * মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রধানরাও পিছিয়ে ছিলেন না * অনেকে বাধ্য হয়েছেন চাকরি হারানোর ভয়ে
নিজামুল হক

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে চার হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। এসব ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি তৈরিতে অতি উৎসাহ দেখিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সহায়তা করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চে উচ্চ আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। তাতে উল্লেখ করা হয়, দেশে বঙ্গবন্ধুর মোট এক হাজার ২২০টি ভাস্কর্য ও ম্যুরাল আছে। বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য ও ম্যুরালের মধ্যে খুলনা বিভাগে ২১টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২টি, ঢাকা বিভাগে ৪১টি, বরিশাল বিভাগে তিনটি, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচটি, রংপুর বিভাগে চারটি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি এবং সিলেট বিভাগে একটি স্থাপন করা হয়। এর বাইরেও কয়েক হাজার ভাস্কর্য-ম্যুরাল নির্মাণ ও স্থাপন করা হয়েছে।
শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নয়, ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে তাঁর স্বজনদেরও। এমনকি তাঁর বইয়েরও। সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পারে অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বইয়ের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ১২টি সিটি করপোরেশন, ৬৪টি জেলা, ৪৯৫টি উপজেলা, ৩৩১টি পৌরসভা ও চার হাজার ৫৭৮টি ইউনিয়নের সব কটিতেই ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ ছিল সরকারের পক্ষ থেকে। জেলা-উপজেলা পরিষদে ম্যুরাল নির্মাণ করা হলেও সব ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। আগামী বছরের মধ্যে সব ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ম্যুরাল বা ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য পৃথক কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের বাজেট বরাদ্দ থেকে এই খাতে ব্যয় করা হয়। এলজিইডি এতে কারিগরি সহায়তা করে। এগুলো অতিরিক্ত হয়েছে, যা উচিত হয়নি।’
এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বসানো হয় ম্যুরাল। বাদ যায়নি প্রাইমারি স্কুলও। স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য দেওয়া স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩২টি বোর্ড, অধিদপ্তর বা সংস্থার প্রতিটিতে ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছিল। এভাবে মন্ত্রণালয়গুলোর অধীনে অন্তত ৭০০ কার্যালয়, সংস্থা-দপ্তর রয়েছে, যার বেশির ভাগেই ম্যুরাল ছিল। এগুলোর কোনোটিতে ৩০ লাখ, আবার কোনোটিতে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০টি সংস্থা রয়েছে, যার প্রতিটি কার্যালয়েই ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। এমনকি কোনো কোনো আঞ্চলিক কার্যালয়েও ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছিল। সড়কের শুরুতে, শেষে, চৌরাস্তায়, নদীর তীরে, পুকুরপারে, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায়—এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এগুলো বসানো হয়নি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও ডিজাইন তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে এর মোট ব্যয় হয় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা।
রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে তৈরি করা ম্যুরালটির উচ্চতা ১০ ফুট ও প্রস্থ আট ফুট। নির্মাণে সময় লাগে তিন মাস। ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বেতার পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় মুর্যাল নির্মাণ করে।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তড়িঘড়ি করে দুই প্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। দুই প্রান্তে দুটি উদ্বোধনী কমপ্লেক্সে একটি করে ম্যুরাল ও উদ্বোধনের ফলক রয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের দুই ম্যুরালেই ব্যয় হয় ১১৭ কোটি টাকা। রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর ৩০০ ফুট এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ৭১ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যসহ ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’-এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫৫ কোটি টাকা। দোলাইরপাড়ের জন্য চীন থেকে ভাস্কর্য নির্মাণ করে দেশে আনা হয়েছিল। ভাস্কর্যটি বানাতে ব্যয় হয়েছিল ৯ কোটি টাকা। কিন্তু ইসলামী দলগুলোর আপত্তির কারণে সেটি আর স্থাপন করা যায়নি।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ভাস্কর্য স্থাপন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১৫ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটি তৈরিতে খরচ করেছিল ২৩ লাখ টাকারও বেশি।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশন খুলনা নগর ভবনে প্রায় ১০ লাখ টাকা দিয়ে ম্যুরাল তৈরি করে। রাজশাহীতে নগরীর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় দুই কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়। এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে মুরাল নির্মাণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে ৮২ লাখ টাকা ব্যয় করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। বজ্রকণ্ঠ নামের ভাস্কর্যটি নির্মাণ ও স্থাপন কাজে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ব্যয় করে ৮৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর উচ্চতা সাড়ে ২২ ফুট, বেইসসহ (বেদি) পুরো ভাস্কর্যের উচ্চতা ২৬ ফুট। সাদা সিমেন্টের ঢালাইয়ের মাধ্যমে তৈরি ভাস্কর্যটির ওজন প্রায় ৩০ টন।
দেশের প্রতিটি জেলা পরিষদে নির্মাণ করা হয় ম্যুরাল। এসব ম্যুরালে আট লাখ থেকে এক কোটি টাকার বেশিও ব্যয় করা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে ব্যয় হয় এক কোটি সাত লাখ ৫৭ হাজার টাকা। বাগেরহাট জেলা পরিষদের সামনে ম্যুরালটি নির্মাণে ব্যয় হয় ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা। রংপুর জেলা পরিষদের অর্থায়নে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১৪ লাখ টাকা। প্রায় তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাঙামাটি শহরের উপজেলা পরিষদের সামনে বিশাল ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ম্যুরাল নির্মাণ করে বগুড়া জেলা পরিষদ। মানিকগঞ্জে ম্যুরাল ঘিরে তৈরি করা হয় বঙ্গবন্ধু চত্বর। জেলা পরিষদের অর্থায়নে তিন কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরটি নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া যশোর শহরের বকুলতলায় যশোরের জেলা প্রশাসনের টাকায় ম্যুরালটি নির্মাণ করা হয়। ব্যয় হয় ৫৪ লাখ টাকা।
২০১২ সালে এক হাজার ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুন নাগাদ দেশের আটটি বিভাগের ৬৩টি জেলার ৪৭০টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের লক্ষ্যে ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক’ একটি প্রকল্প নেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রতিটি কমপ্লেক্সের সামনে ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ম্যুরালের জন্য ব্যয় ধরা হয় ছয় লাখ টাকা।
সম্পর্কিত খবর

তৃতীয় জয়

শান্তি মার্দির (জার্সি নং-২০) হ্যাটট্রিকে গতকাল অনূর্ধ্ব-২০ সাফে ভুটানকে ৪-১ গোলে হারিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আসরে স্বাগতিকদের এটি টানা তৃতীয় জয়। ছবি : বাফুফে
।
বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক

বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন আয়কর ও পাঁচজন কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে পৃথক আদেশ জারি করেন।
আদেশে বলা হয়েছে, গত ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া আয়কর কর্মকর্তারা হলেন মির্জা আশিক রানা, অতিরিক্ত কর কমিশনার, কর অঞ্চল-৮, ঢাকা; মাসুমা খাতুন, যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-২; মুরাদ আহমেদ, যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-১৫; মোরশেদ উদ্দীন খান, যুগ্ম কর কমিশনার, কুষ্টিয়া; মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, যুগ্ম কর কমিশনার, নোয়াখালী; আশরাফুল আলম প্রধান, যুগ্ম কর কমিশনার, কক্সবাজার; শিহাবুল ইসলাম, উপকর কমিশনার, খুলনা; নুশরাত জাহান, উপকর কমিশনার, রংপুর এবং ইমাম তৌহিদ হাসান, উপকর কমিশনার, কুমিল্লা।
কাস্টমস বিভাগ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, অতিরিক্ত কমিশনার, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর; সিফাত-ই-মরিয়ম, অতিরিক্ত কমিশনার; মো. শাহাদাত জামিল, দ্বিতীয় সচিব, এনবিআর; শফিউল বশর, রাজস্ব কর্মকর্তা এবং সবুজ মিয়া, রাজস্ব কর্মকর্তা।
গত জুন মাসে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব খাতে ‘যৌক্তিক সংস্কারের’ দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ২৮ ও ২৯ জুন তাঁরা সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। আন্দোলনের পর শুরু হয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
এরই মধ্যে তিনজন এনবিআর সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআরের আরো দুই সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

ছাত্রদলের আলোচনাসভায় বক্তারা
গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘গণ-অভ্যুত্থানের বাঁক বদলের দিন’ শীর্ষক এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে খাটো করার অপচেষ্টা চলছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ছাত্রদল, ডান-বাম ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আলোচনাসভার প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আন্দোলনের মূলে ছিল ছাত্রসমাজের চেতনা।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো উল্লেখ করেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আন্দোলনকারীদের রক্তদানকে যারা কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরাতে চাইছে এবং বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতৃস্থানীয় নেতাদের নামে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করছে, তারা ফ্যাসিবাদের আগমনকে স্বাগত জানায়। তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে, কেননা মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মিটফোর্ডের ঘটনার জেরে একটি গুপ্ত সংগঠন রাজনৈতিক ইন্ধন দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বুয়েট ও চুয়েটে আমাদের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে নোংরা স্লোগান দিয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। অথচ আমরা বিচার নিশ্চিত না করে বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেত্রী মুক্তা বাড়ই বলেন, “আজ রাজাকারদের পুনর্বাসন ও নরমালাইজেশন শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে গোটা দেশে ‘মবতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে।”
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘ছাত্রদলের সহযোদ্ধারা প্রথম দিন থেকেই আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। ১৫ জুলাই একাত্তর হলে প্রথম হামলায়ও ছাত্রদলের ভাইয়েরা আহত হয়েছিলেন। এখানে এককভাবে কোনো সংগঠনের কৃতিত্ব দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব শহীদদের, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। আমাদের গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।’
আলোচনাসভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান, ইসলামী ছাত্র মজলিসের দপ্তর সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুভাশিষ চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সাইদুল হক নিশান, ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদার—সবাই ছাত্ররাজনীতির মধ্যে বিভাজন অপপ্রচারের রাজনীতি বন্ধ করার আহবান জানান।

বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৯৬ জন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১৩১ জনকে আটকে দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। মূলত ‘শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায়’ কারণ দেখিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।
দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার জানিয়েছে, ওই ১৩১ জনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন বাংলাদেশের নাগরিক।
গত শুক্রবার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে মালয়েশিয়ার বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির অভিযানে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।
দ্য স্টারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩০০ জনের বেশি যাত্রীর কাগজপত্র যাচাই করে ১৩১ জনকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৯৬ জন বাংলাদেশি পুরুষ, ৩০ জন পাকিস্তানি পুরুষ ও পাঁচজন ইন্দোনেশীয় নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্ত পূরণে ঘাটতি পাওয়া গেছে।’
শর্ত পূরণ না হওয়া বলতে ‘সন্দেহজনক’ হোটেল বুকিং, ইমিগ্রেশন কাউন্টারে হাজির না হওয়া এবং পর্যাপ্ত অর্থ সঙ্গে না রাখার মতো কারণ দেখানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সাধারণত ভ্রমণকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে। কেউ যদি বলে যে সে এক মাস থাকবে, কিন্তু সঙ্গে মাত্র ৫০০ রিঙ্গিত আনে, তাহলে তার বক্তব্যে সন্দেহ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক।’
মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করেই যেন আগ্রহীরা ভ্রমণের প্রস্তুতি নেয়, বিবৃতিতে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি বলছে, মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক যেকোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা, আর্থিক সামর্থ্য এবং থাকা-খাওয়ার নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনার প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, নিশ্চয়ই তাঁদের ট্যুরিস্ট হিসেবে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ মনে করেছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।